ভাড়া করা শিক্ষকে জোড়াতালির পাঠদান সরকারি ১৫ মেডিকেলে
- জাহিদ হাসান
- প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৫৯ AM , আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৬ AM
মেডিকেল কলেজ তৈরি করা হয়েছে, ভর্তি করা হয়েছে শিক্ষার্থীও। কিন্তু কলেজে কোনো শিক্ষক পদই সৃষ্টি করা হয়নি। নতুন গড়ে ওঠা পাঁচটিসহ দেশের মোট ১৫টি মেডিকেল কলেজের চিত্র এটি। শুধু শিক্ষক নয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোগত ঘাটতিও প্রকট। শিক্ষক ঘাটতি পূরণে পাশ্বর্বর্তী মেডিকেল কলেজ বা জেলা-উপজেলা সরকারি হাসপাতাল থেকে ধার করে আনা প্রেষণের শিক্ষক দিয়ে পাঠ দেয়া হচ্ছে। এতে করে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত চিকিৎসা শিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএমডিসির শর্ত অনুযায়ী, ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য মৌলিক বিজ্ঞানে ১১ জন শিক্ষক থাকতে হবে। ১০০ ছাত্রের জন্য এই সংখ্যা হবে ১৫ জন, ১৫০ ছাত্রের জন্য ১৯ এবং ২০০ ছাত্রের জন্য ২৪ জন। পুরোনো দু-একটি ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কোনো মেডিকেল কলেজেই এ শর্ত মানা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল কলেজ শিক্ষা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে গোপালগঞ্জের শেখ সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজ এবং ২০১৩ সালে গাজিপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহম্মেদ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৪ সালে টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনা মেডিকেল, সিরাজগঞ্জে শহীদ এম. মুনসুর আলী মেডিকেল, মানিকগঞ্জে কনের্ল মালেক মেডিকেল ও জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ছাড়াও পটুয়াখালী এবং রাঙ্গামাটি জেলায় মেডিকেল কলেজ চালু হয়। ২০১৫ সালে ঢাকায় মুগদা মেডিকেল ও ২০১৭-তে হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ চালু করা হয়। পরবর্তীতে এসব কলেজে শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়।
সবের্শষ ২০১৮ সালে নেত্রকোনা, নীলফামারী, নওগাঁ মাগুরা ও চাঁদপুরে ৫টি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে ২৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০১৮’র মধ্যে প্রতিষ্ঠিত মোট ১৫টি কলেজে এখন পযর্ন্ত কোনো শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি।
নতুন ৫টি কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষকদের পদ সৃষ্টি, স্থায়ী ক্যাম্পাস, উপযুক্ত ছাত্রাবাস, গ্রন্থাগার, আধুনিক সরঞ্জাম সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি ও চেয়ার-টেবিল সুবিধা তৈরি হয়নি। ফলে প্রথম বষের্র মৌলিক বিষয়গুলোর পাঠদানে সংশ্লিষ্ট জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের পুরাতন ভবন বেছে নেয়া হয়েছে। পাশ্বর্বর্তী জেলা বা বিভাগীয় মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদেরকে প্রেষণে এনে প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় চিকিৎসা শাস্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকটিক্যাল বিষয়ে পাঠদানে পূর্ণাঙ্গতা পাচ্ছে না। ফলে উন্নত চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা শুরুতেই মানসম্মত জ্ঞানার্জন থেকে পিছিয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊধ্বর্তন কমর্কর্তা বলেন, বতর্মানে চালুকৃত ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে এখন পযর্ন্ত ২১টিতে শিক্ষকদের পদ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সাতটি বেসিক সাবজেক্টে মাত্র ১ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষক আছে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে ডেপুটেশন শিক্ষক দিয়ে চালাতে হচ্ছে। তবে সংকটের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, যোগ্য শিক্ষক আছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ধীরগতির কারণে জট কাটছে না। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) বোর্ড গঠন করে শূন্যপদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের আলোচনা হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া ঘোষণা দিয়েই মেডিকেল শিক্ষার মতো টেকনিক্যাল বিষয়ে শিক্ষা কাযর্ক্রম চালু করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা অজের্ন পিছিয়ে পড়বে। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো থিউরোটিক্যাল ও প্রাকটিক্যাল বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই।
গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন ট্রাস্টি বলেন, সব জেলায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার চেয়ে চিকিৎসকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রমোশন দিয়ে শিক্ষক সংকট দূর করা বেশি জরুরি। প্রস্তুতি না নিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ালে হবে না বরং বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ শিক্ষক সংকট থাকলে শিক্ষাথীের্দর ব্যবহারিক, টিউটোরিয়াল ক্লাস ও পরীক্ষা সময়মতো হবে না। ফলে পাস করে বের হওয়া চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষকে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দিতে সক্ষম হবে না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম.এ রশীদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩৬টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ২৪টাতে পদ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অন্য কলেজগুলোতে কিছুটা স্বল্প শিক্ষক দিয়েই সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বেসিক বিষয়ের শিক্ষকদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে সংকট দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বড় পদগুলো পূরণ করতে পদক্রম অনুসারে পদোন্নতি দেয়া হবে। পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে এখন দ্রুত পদায়ন হবে। পাশাপাশি নতুন কলেজসমূহে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ে শিগগিরই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।