চাঁমেক ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ (চাঁমেক) ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে চাঁমেক ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর দুপুরে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেলা নাজনীনের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এ-সংক্রান্ত একটি নোটিশ প্রকাশ্যে আসে।
শাস্তিপ্রাপ্তরা হলেন চাঁমেক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলে রাব্বী, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়বত দাশ উৎস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিমা বিনতে মালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক সানিলা রহমান সারা ও সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ শিক্ষার্থী হৃদয় কুমার চৌধুরী।
জানা যায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ক্ষমতা খাটিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি, ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে জুনিয়রদের শিক্ষার্থীদের যেতে বাধ্য করা, হোস্টেলে সিট দখলের চেষ্টা, ডাইনিং দখল, ছাত্র কল্যাণ পরিষদের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হেনস্ত, সন্ধানীর কার্যক্রম ও কমিটিতে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে।
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ভবন
এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর কলেজ এডুকেশন ইউনিটের চেয়ারম্যান ও প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে ২৭ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সর্বসম্মতিক্রমে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেয়াদ শান্তি প্রদান করা হয়।
মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেলা নাজনীন স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি চাঁমেক প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বীকে একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে ৩ মাসের বহিষ্কার এবং ছাত্র হোস্টেলের বরাদ্দকৃত সিট স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়, সাধারণ সম্পাদক চাঁমেক দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রিয়বত দাশ উৎসকে একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে ৬ মাসের বহিষ্কার এবং ছাত্র হোস্টেলের বরাদ্দকৃত সিট স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহ মেডিকেল ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
তা ছাড়া অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহিমা বিনতে মালেককে একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে ১ মাসের বহিষ্কার, সব ধরনের সহপাঠ্যক্রম থেকে ৬ মাসের বহিষ্কার এবং স্বভাবগতভাবে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করায় ভর্ৎসনা ও লিখিতভাবে সতর্ক করা। সাংগঠনিক সম্পাদক তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সানিলা রহমান সারাকে একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে ১ মাসের বহিষ্কার, দ্বিতীয় ব্যচের শিক্ষার্থী হৃদয় কুমার চৌধুরী ১ মাসের জন্য ছাত্র হোস্টেলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল করা হয়।
পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার নোটিশ
অন্যদিকে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রিতম মজুমদারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তদের শাস্তি ৬ আগস্ট থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত কেউ ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। অভিযুক্ত সবাইকে মুচলেকা দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে মেডিকেল কলেজ, হোস্টেল ও হাসপাতালে অবস্থানকালে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যেকোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
আরও পড়ুন: ছিনতাইয়ের অভিযোগে র্যাব-পুলিশসহ গ্রেফতার ৪
অন্যদিকে প্রত্যাশিত শাস্তি কার্যকর না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রশাসন কর্তৃক শাস্তির প্রতিবাদ জানান। শিক্ষার্থীরা জানান, নোটিশে উল্লেখ করা হয় শাস্তি কার্যকর হয়েছে ৬ আগস্ট থেকে কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের পর কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৮ আগস্ট থেকে এবং আমরা লিখিত অভিযোগ দাখিল করি ১৫ সেপ্টেম্বর। ৬ আগস্ট থেকে শাস্তির কার্যক্রম এবং শাস্তির মেয়াদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।