চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে অনুমোদনের আগেই ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (চমেবি) প্রশাসন। এমন কাজকে আইনবহির্ভূত উল্লেখ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এর আগে চমেবির এ নিয়োগ নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান করে কমিশন। এতে চমেবির নিয়োগে নানা অসংগতি সমাধানের পাশাপাশি নতুন নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চমেবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটকে না জানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মো. আলাউদ্দিন, মো. মিছবাহ ইবনে হাকিম, কাজী মুসফিকুস সালেহীন, মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, বদিউল আলম ও মুহাম্মদ আনিক আল হোসাইনকে নিয়োগ দেন। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, ছলতাচাতুরিসহ নানা অসংগতি পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত দল।
তদন্তে উঠে এসেছে, চমেবির ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোনো উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। এটিকে দেশের সংবিধান পরিপন্থি এবং নাগরিকের অধিকার হরণ বলে উল্লেখ করেছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এছাড়াও এ নিয়োগে মানা হয়নি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৬ এর নির্দেশনাও।
কমিশন বলছে, নিয়োগের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আবেদনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছলচাতুরি, আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, স্বেচ্ছাচারিতা, সর্বোপরি সাংবিধানিকভাবে মৌলিক অধিকারপ্রাপ্ত সব চাকরিপ্রার্থী নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ছয় কর্মকর্তার অস্থায়ী নিয়োগ নিয়ম বহির্ভূত প্রতীয়মান হয়।
চমেবির ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোনো উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। এটিকে দেশের সংবিধান পরিপন্থি এবং নাগরিকের অধিকার হরণ বলে উল্লেখ করেছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এছাড়াও এ নিয়োগে মানা হয়নি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৬ এর নির্দেশনাও।
একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোরও সুযোগ নেই বলে মনে করে কমিশন। সেজন্য ইউজিসির সুপারিশ বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করা এবং বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে বলে জানানো হয়েছে একই প্রতিবেদনে।
সিন্ডিকেটে না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তার একক ক্ষমতাবলে দেওয়া এ নিয়োগ হয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতিও খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। উপাচার্যের কৌশলী ভূমিকাকে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ উল্লেখ করে কমিশন সুপারিশে বলেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল বাতিল করে গৃহীত সুবিধাদি ফেরত নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে ইউজিসির অনুমোদিত শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চমেবির প্রায় প্রতিটি নিয়োগে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন পরিলক্ষিত হয়েছে। এ অবস্থার ভবিষ্যতে যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও প্রযোজ্য সরকারি বিধিবিধানও যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটি চমেবির এ নিয়োগে নানা অসংগতি দূর করে বৈধকরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ শেষে তা কমিশনকে অবহিত করার সুপারিশ জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ায় নতুন করে আর নিয়োগ দিতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে চমেবি উপাচার্য নিজেই নিজের বেতন গ্রেড বাড়িয়ে নেন। বিষয়টি ইউজিসির নজরে এলে আসলে গৃহীত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে বলা হয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানকে।
আরো পড়ুন: পাবলিক-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি: তফাৎটা নামে নয়, মানে
বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা ইউজিসির চিঠি পেয়েছি। সেখানে তারা বেশকিছু সুপারিশ করেছে। আমরা তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এর আলোকে কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।’
দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছি। সে আলোকে তাদের ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত করার কথা রয়েছে।’