সাবেক ছাত্রনেতায় অতিষ্ঠ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের রিমনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও মারধরের হুমকির অভিযোগ ওঠেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজে রিমনের ছাত্রত্ব না থাকার পরও তিনি নিয়মিত ক্যাম্পাসে এসে বসে থাকেন। তিনি তার দলবল নিয়ে ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেন। এ ঘটনায় তারা কলেজ প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবু তাহের রিমন। তার দাবি, তিনি সাবেক ছাত্রনেতার হওয়ার ফলে এখনো তার অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু তার প্রতিপক্ষরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের তৎপরতা করছেন। একইসঙ্গে তিনি ছাত্রীদের হয়রানির বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন। আর কলেজ প্রশাসন বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের অভিযোগটি পেয়েছেন। পরবর্তীতে তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
ক্যাম্পাসে এখন পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীরা আমাকে পরীক্ষার মধ্যেই অভিযোগপত্র দিয়েছেন। আমরা সে অভিযোগ পেয়েছি। আগামী সাপ্তাহে পরীক্ষা শেষ হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। -ডা. সালেহা খাতুন, অধ্যক্ষ
রিমনের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন বরারব দেওয়া অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, আবু তাহের রিমন নামের এক ব্যক্তি এবং তার সাথের কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি, মারধরের হুমকি এবং কলেজের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন।
অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেন, রিমনের এমন আচরণে আমরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারছি না। একইসাথে তার এমন কর্মকাণ্ডে নিয়মিত ক্লাসেও উপস্থিত হতে পারছি না। লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কাজে জড়িতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রিমন আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস। তবে তার এখন আর ছাত্রত্ব নেই। কিন্তু তিনি নিয়মিত ক্যাম্পাসে এসে আমাদের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। শিক্ষার্থীদের বিনা কারণে দাঁড়া করিয়ে রাখেন, শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সিনিয়ার ভায়েরা রিমনের নাম করে আমাদের ঘণ্টার পর ঘন্টা দাঁড়া করিয়ে রাখতেন। আমরা শিক্ষার্থীরা ৩-৪ জন মিলে একসাথে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করতে দেখলে তারা আমাদের ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতেন। এমনকি শিক্ষক ক্লাসে থাকা অবস্থায়ও তারা ক্লাসে ডুকে বিভিন্নরকম আজেবাজে কথা বলতেন।
ছাত্রীদের উত্যক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। এমন কোনো ঘটনা আমার জানা মতে ক্যাম্পাসে ঘটেনি। কেউ যদি নারী শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করে আমাদের নাম ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে আমাদের এখানে কিছুই করার নেই। -সাবেক ছাত্রনেতা রিমন
শিক্ষার্থীরা এর আগেও একাধিকবার রিমনদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কলেজ প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তাবে তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কলেছেন। এ শিক্ষার্থী বলন, ক্যাম্পাসে বর্তমানে তাদের (রিমন) কারণে পড়ালেখার কোর পরিবেশ নেই বললেই চলে। আমাকে তার দুবার মারার হুমকিও দিয়েছে। এসব বিষয়ে বারবার অভিযোগপত্র দিলেও কলেজ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও রিমনের আরও একাধিক পরিচয় রয়েছে। তিনি একইসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। তিনি সেন্ট্রাল ল’ কলেজের বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের সভাপতিও। এসব নাম-পরিচয় ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপকর্ম করে কারাভোগও করেছেন।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর ইয়াবা ও হেরোইনসহ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের সাথে ১৩ শ’ পুরিয়া হেরোইন ও ১২ পিস ইয়াবা পাওয়া যা। এরপর পুলিশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি রাতে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের সামনে ইয়াবা ও হেরোইন বিক্রি করেন রিমন ও তার সহযোগীরা। রিমন নিজেকে ওই কলেজের জিএস ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি বলে পরিচয় দেন। পুলিশ জানায়, এর আগেও একাধিকবার আবু তাহের রিমনকে মাদকদ্রব্যসহ আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ওয়ারিসহ বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক মামলা রয়েছে।
রিমন আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস। তবে তার এখন আর ছাত্রত্ব নেই। কিন্তু তিনি নিয়মিত ক্যাম্পাসে এসে আমাদের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। -ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী
মূলত রিমন নিজেকে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দাবি করলেও কলেজের শিক্ষার্থী দাবি করলেও তার ভর্তি ফরমে দেখা গেছে, তিনি ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট কলেজটিতে ডিপ্লোমা-ইন-হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারির (ডিএইচএমএস) প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। সে অনুযায়ী ২০১৯ সালে তার কোর্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
রিমন কলেজটির শিক্ষার্থী থাকাকালীন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটিতে তার সভাপতি ছিলেন জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (স্বপন)। এরপর ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ওই ছাত্র সংসদ ভেঙে দেন কলেজ অধ্যক্ষ ডা. সালেহা খাতুন।
ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার সময় মূলত ৪টি কারণের কথা জানানো হয়েছে। এগুলোর মধ্য ছিলো এক বছর মেয়াদী ছাত্র সংসদ ৪ বছর অতিক্রম করা; ছাত্র সংসদের অনেক নেতারা পাস করে চলে গেছেন আবার অনেকের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে; ছাত্র সংসদের কতিপয় শিক্ষার্থীর আচরণ সীমালঙ্ঘন করেছে।
তবে রিমন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, রাজনীতি করতে গেলে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবেই। আমাদের যেহেতু এখন ছাত্র সংসদের কোনো কমিটি নেই, সেজন্য বিভিন্ন পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। মূলত আমাদের প্রতিপক্ষরাই আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত করছেন। তাদের নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
প্রতি রাতে কলেজের সামনে ইয়াবা ও হেরোইন বিক্রি করেন রিমন ও তার সহযোগীরা। রিমন নিজেকে ওই কলেজের জিএস ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি বলে পরিচয় দেন।
নারী শিক্ষার্থীদের উত্যক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে রিমন বলেন, ছাত্রীদের উত্যক্ত করার কোনো প্রশ্নই উঠে না। এমন কোনো ঘটনা আমার জানা মতে ক্যাম্পাসে ঘটেনি। কেউ যদি নারী শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করে আমাদের নাম ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে আমাদের এখানে কিছুই করার নেই। রিমনের ছাত্রত্ব নিয়ে জানতে চাইলে দাবি করেন, তিনি কলেজটির ডিপ্লোমা কোর্সের শেষ বর্ষে পরীক্ষা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. সালেহা খাতুনের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে এখন পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীরা আমাকে পরীক্ষার মধ্যেই অভিযোগপত্র দিয়েছেন। আমরা সে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত রিমন এর আগেও বিভিন্ন কারণে কারাভোগ করেছেন। তবে পরীক্ষা চলার কারণে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়ে আমরা এখনই কিছু করতে পারছি না। আগামী সাপ্তাহে পরীক্ষা শেষ হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।