বেসরকারি মেডিকেলে দুই বছরে খালি গেছে ২০% আসন, কমেছে বিদেশি শিক্ষার্থীও
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ০৭:৫৮ AM , আপডেট: ২৬ মে ২০২৪, ০৮:২৭ AM
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার্থীর সংকটে পড়েছে। গত দুই বছরে কলেজগুলোতে আসন খালি ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। একই সময়ে কমেছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। যাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক কিংবা হাতে-কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা নেই— মূলত এমন প্রতিষ্ঠানগুলোই বেশি সংকটে পড়ছে। কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী সংকট কাটাতে ও পরিস্থিতি উত্তরণে শনিবার সভায় বসেছে কলেজমালিকদের সংগঠন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়ার চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক আলোচনায় এসব সংকটের কথা জানিয়েছেন বক্তারা। এ সময় বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষায় নানা সমস্যা ও করণীয় নিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে এম আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বেসরকারি মেডিকেল মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
সভায় দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন শিক্ষার্থী সংকটের প্রধান কারণ বলে উলেখ করেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। তারা বলেছে, দেশকে ডিজিটালাইজেশনের ধারাবাহিকতায় ভর্তি প্রক্রিয়া অটোমেশন করা হয়েছে। কিন্তু এ পদ্ধতি হিতে বিপরীত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল চান বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকরা
তবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা শুধু অটোমেশনকে শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণ হিসাবে মানতে রাজ নন জানিয়ে বেসরকারি মেডিকেলের মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, আগামী ৫ জুন থেকে মেডিকেলের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো কলেজগুলোতে এক হাজারের বেশি আসন খালি আছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতি বছর এমবিসিএস কোর্সে ১১ হাজার ৫৮৮টি আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি। ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ২০৮টি। এর মধ্যে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ হাজার ৬৫৭টি আসন বরাদ্দ আছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৫৫১টি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অটোমেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে না। অটোমেশন চালুর দু’বছরে বেসরকারি কলেজে আবেদন পড়েছে মোট আসনের সমপরিমাণ বা তার কিছু বেশি। এমনিতে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রছাত্রীর আবেদনের সংখ্যা কম, তাহলে অটোমেশনের যৌক্তিকতা কি? বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির কোটা ৫০ শতাংশে উন্নীত করা গেলে ২০০ কোটি টাকার অধিক রেমিট্যান্স আসবে বলে দাবি তাদের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৮টি, এর আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি, এগুলোর আসনসংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩। এর মধ্যে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন ৩ হাজার ৫৫১টি। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ২ হাজার ৭৪২টি আসন। দেশি ও বিদেশিদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের ২০ শতাংশ খালি পড়ে আছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান। তিনি বলেন, গত দুই বছরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ২০ শতাংশ আসন খালি গেছে। চলতি বছরে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীর ৬ হাজার ২০৮টি আসনের মধ্যে এক হাজার ২০০ আসন খালি রয়েছে। যা মোট আসনের ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী সংকটে অটোমেশনকে দায়ী করলো বিপিএমসিএ
তিনি বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে নিজ এলাকা থেকে দূরবর্তী জেলায় শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ হওয়ার তারা আগ্রহ হারাচ্ছে।
বিপিএমসিএর সাবেক সভাপতি ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অন্যতম খাত। এসব কলেজে বর্তমানে শুধু ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। যাদের মাধ্যমে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। প্রতিবছর বিদেশ থেকে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এসব কলেজে ভর্তি হয়। অটোমেশন পদ্ধতিতে ভর্তির কারণে এসব বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি নানান সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা থাকাসহ বিদেশের কলেজগুলোতে ভর্তির প্রবণতা বাড়ছে। এ বছর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারে। বিডিএস বা ডেন্টালের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এক হাজার ৪০০ আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ৪০০ জন, অর্থাৎ ১০০০ আসনই ফাঁকা। আগের বছরও ৬০ শতাংশ বা ৮০০ আসন ফাঁকা ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধের পথে।