ঢাকা ডেন্টাল কলেজে অচলাবস্থা, দুই সপ্তাহ ধরে ক্লাস বন্ধ

ঢাকা মিরপুরের সরকারি ডেন্টাল কলেজে চলছে অচলাবস্থা। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিগত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কলেজটিতে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হলেও তাকে কলেজে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এ অচলাবস্থায় সঙ্গে সরকারি দলের একজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার কারসাজি রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার কলেজের মেইন গেটসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের সকল কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেতর থেকে তালা বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। ‘আগের অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে আনতে হবে, নতুন অধ্যক্ষকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না’ বলে তারা স্লোগান দিচ্ছেন। নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির কলেজে আসলেও মেইন গেট তালা বন্ধ থাকায় তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। পরে মেইন গেটের তালা ভেঙে মেডিকেলের ভেতরে প্রবেশের গেটের সামনে তাকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তার সঙ্গে রয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। 

আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অযৌক্তিক কারণে অধ্যক্ষ আবুল কালামকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। তিনি একজন ভালো মানুষ। সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সততার জন্য তাকে ভালোবাসেন। ডেন্টাল কলেজে দুর্নীতিবাজদের কঠিন হাতে দমন করায় অসৎ ব্যক্তিরা তার শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। তারাই ষড়যন্ত্র করে স্যারকে সরিয়ে দিয়েছে।

জানা যায়,  ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা ডেন্টাল কলেজের ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারকে সভাপতি পদে দাওয়াত না দেয়ায় তিনি উপস্থিত হননি। এতে করে এই সংসদ সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে কলেজ প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। পরদিন অধ্যক্ষ আবুল কালাম বেপারীকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কলেজটিতে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

২৫ সেপ্টেম্বর ডেন্টাল কলেজে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবিরকে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে তাকে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

শিক্ষকরা জানান, অধ্যাপক হুমায়ুন কবির ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে ডেন্টাল কলেজে যোগদান করতে গেলে তাকে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। এমনকি অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়ে রাখা হয়। অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী জোর করে বসে পড়েন। যাতে সেদিকে কেউ যেতে না পারে।

ঢাকা ডেন্টাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন  বলেন, ‘আবুল কামাল ব্যাপারী স্যারকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। স্যার অনেক ভালো মানুষ। দুর্নীতিবাজরা অযৌক্তিক কারণে তাকে সরিয়ে দিয়েছে। আমরা এটি মেনে নেব না। নতুন অধ্যক্ষকেও কলেজের মধ্যে ঢুকতে দেয়া হবে না।’

সামগ্রিক বিষয়ে কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির  বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বরের সরকারি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ সেপ্টেম্বর আমি এখানে যোগদান করতে আসি। কিন্তু তখনই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আমাকে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এমনকি কলেজে ঢুকতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। আমি কয়েকদিন ধরে হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে বসে কাজ চালিয়ে গেছি। আজও প্রশাসনিক মূল গেটে তালা দেয়ায় আমাকে দরজার বাইরে বসে থাকতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’

মিরপুর জোনের এডিসি জাকির এ বিষয়ে বলেন, ‘কলেজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মূল গেটসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে রেখেছে। আমরা মূল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। আশা করি দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’ 


সর্বশেষ সংবাদ