১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:০৩

শিক্ষক, ল্যাব ও রাসায়নিক সংকট নিয়ে চলছে ফার্মেসি শিক্ষা

নানান সংকটে রয়েছে দেশের দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১১ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান  © সম্পাদিত

পর্যাপ্ত ল্যাব, শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সামগ্রী সঠিক পরিমাণে না থাকাসহ বেশকিছু শর্ত ভঙ্গের কারণে দেশের ১১টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় বিশেষায়িত এ শিক্ষাখাতের তদারক সংস্থা বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল। একই সঙ্গে সময়সীমা নির্ধারিত করে উচ্চশিক্ষালয়গুলোকে চূড়ান্ত নোটিশও দিয়েছে সংস্থাটি। 

কাউন্সিলের নোটিশ প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফার্মেসি শিক্ষায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালটির ফার্মেসি বিভাগে পাঠদানের জন্য নেই কোনো স্থায়ী শিক্ষক। নামে মাত্র ৫টি ল্যাব থাকলেও তাতেও নেই কোনো কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান। ফলে উচ্চশিক্ষালয়টির ল্যাবগুলো পরিচালিত হচ্ছে কোনো টেকনিশিয়ান ছাড়াই।

কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুনরায় পাঠদান শুরু করতে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই শর্ত পূরণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট উচ্চশিক্ষা কর্তৃপক্ষকে। অন্যথায় ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হবে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

কাউন্সিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগামী ৩১ অক্টোবর ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। কাউন্সিলের নোটিশে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—শিক্ষক সংকট কাটানো, পাঁচটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: ফার্মেসি শিক্ষায় বেসরকারিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি 

উচ্চশিক্ষালয়গুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে চলতি মাসে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, নির্দেশ অমান্যকারী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি অনার্স কোর্সে (বি. ফার্ম) শিক্ষার্থী ভর্তি করলে সেসব শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন দেবে না কাউন্সিল। শিক্ষার্থী পাস করার পর পেশাগত সনদ দেওয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলছেন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগামী ৩১ অক্টোবর ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ফার্মেসি কাউন্সিল। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বর্তমানে দেশের ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে ফার্মেসি কাউন্সিল। সংস্থাটির প্রতিনিধিরা ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে ল্যাব সংকট, যন্ত্রপাতি অকেজো, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা কারণে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্রেডিটেশন নবায়ন স্থগিত করেছে। তাদের শিক্ষার মান উন্নয়নে কিছু সুপারিশ ও নির্দেশনা দিয়েছে। দু’তিন মাসের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।

ফার্মেসি কাউন্সিলের নোটিশে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—শিক্ষক সংকট কাটানো, পাঁচটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরি ইত্যাদি।

১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চারটি সরকারি ও ৭টি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ (বশেমুরবিপ্রবি) এবং পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)।

এর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি ল্যাব থাকার কথা থাকলেও রয়েছে পাঁচটি ল্যাব। একই সাথে ল্যাবগুলো পরিচালনা করার মতো উচ্চশিক্ষালয়টিতে নেই কোনো টেকনিশিয়ান। এছাড়াও বিভাগটিতে নেই কোনো সিনিয়র শিক্ষকও। বর্তমানে ইবির এ বিশেষায়িত বিভাগটি পরিচালিত হচ্ছে ২ জন প্রভাষক ও ৪ জন সহকারী অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে। 

ফার্মেসি শিক্ষা নিয়ে সংকটে রয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। উচ্চশিক্ষালয়টির ফার্মেসি বিভাগে ৩ সহযোগী ও ৯ সহকারী অধ্যাপক নিয়ে বর্তমানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষাদানের জন্য ৬টি ল্যাব থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে ল্যাব রয়েছে ৪টি। তবে বশেমুরবিপ্রবি ফার্মেসি বিভাগের এসব ল্যাব পরিচালনার জন্য নেই কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান।

অন্যদিকে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফার্মেসী বিভাগে শিক্ষক রয়েছে মোট ২২ জন। এর মধ্যে শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন ৯ জন শিক্ষক। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সবমিলিয়ে ল্যাব রয়েছে মাত্র ২টি। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের বাকী ল্যাবগুলোর উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। 

আরও পড়ুন: ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না ১১ বিশ্ববিদ্যালয়

এছাড়াও বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও সংকটে রয়েছে ফার্মেসি শিক্ষা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসি বিভাগ পরিচালনার জন্য রয়েছেন এক অধ্যাপক ২ সহকারী অধ্যাপক ও ১১ জন প্রভাষকসহ মোট ১৪ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসি বিভাগ পরিচালনার জন্য ৮টি ল্যাব থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে ল্যাব রয়েছে ৬টি এবং এসব ল্যাব পরিচালনার জন্য রয়েছেন মাত্র ১ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা ইউজিসির ভর্তি নিষেধাজ্ঞায় থাকা স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিও শোকজ পেয়েছে ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে। উচ্চশিক্ষালয়টির ফার্মেসি বিভাগে মোট ২০ শিক্ষক থাকলেও এর মধ্যে অস্থায়ী হিসেবে রয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক ১, সহকারি অধ্যাপক ৯ এবং লেকচারার রয়েছে ৩ জন। এছাড়াও সেখানে ৫টি ল্যাব প্রয়োজন হলেও বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত ল্যাব রয়েছে ২টি। তবে, ল্যাবগুলো পরিচালনার জন্য নেই কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান।

এছাড়াও ইউসিজির নিষেধাজ্ঞায় থাকা আরেক বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশা ইউনিভার্সিটিও ধুঁকছে ফার্মেসি শিক্ষা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬টি ল্যাব প্রয়োজন হলেও বর্তমানে ল্যাব রয়েছে ৪টি। এছাড়াও এসব ল্যাব পরিচালনার জন্য নেই কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান। বিভাগটিতে শিক্ষাদানের জন্য রয়েছেন ১ সহকারী অধ্যাপক ও ৩ প্রভাষকসহ মোট ৪ জন শিক্ষক।

অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগামী ৩১ অক্টোবর ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ফার্মেসি কাউন্সিল। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে—মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, সচিব, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল।

বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ৭টি ল্যাব থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে ল্যাব রয়েছে মাত্র ৩টি। তবে এসব ল্যাব পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে নেই কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান। সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন মোট ৮ জন্য শিক্ষক এবং এর মধ্যে ১ জন সহযোগী অধ্যাপক ও ৪ জন লেকচারার ও সিনিয়র লেকচারার রয়েছেন ৩ জন।

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ফার্মেসি শিক্ষায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানের রয়েছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালটির ফার্মেসি বিভাগে পাঠদানের জন্য নেই কোনো স্থায়ী শিক্ষক। নামে মাত্র ৫টি ল্যাব থাকলেও তাতেও নেই কোনো কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি।

আরেক বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ পরিচালনার জন্য ২টি ল্যাব প্রয়োজন হলেও সেখানে রয়েছে অতিরিক্ত ৬টি ল্যাব। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ল্যাব সংখ্যা অতিরিক্ত হলেও ল্যাবগুলো পরিচালনার জন্য সেখানেও রাখা হয়নি কোনো টেকনিশিয়ান।

বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগেও রয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ২টি ল্যাব। তবে, এখানে মোট ৬টি ল্যাব থাকলেও এসব ল্যাব পরিচালনার জন্য নেই কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন ২ জন সহযোগী, একজন সিনিয়র ও ৬ জন প্রভাষকসহ মোট ৯ জন শিক্ষক।

এছাড়াও ফার্মেসি শিক্ষা নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে আরেক বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাব থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন মাত্র ১জন সহযোগী শিক্ষক, ৩ জন সিনিয়র লেকচারার ও ৫ জন জুনিয়র লেকচারার।