১৩ জুন ২০২৩, ১৮:০০

উপাচার্যের আশ্বাস-হুশিয়ারি নিয়ে ফিরলেন বিএসএমএমইউতে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা

মাসিক ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএসএমএমইউ উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা  © সংগৃহীত

মাসিক ভাতা ৫০ হাজার টাকা করা, বকেয়া ভাতা পরিশোধ এবং ভাতা নিয়মিত দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরতদের হাতে অবরুদ্ধের পর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের আশ্বাস আর হুশিয়ারিতে আন্দোলন থেকে ফিরেছেন বিএসএমএমইউ’র আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। এর আগে বিকেলে সমস্যা সমাধানে আন্দোলনকারীদের নিকট সাতদিন সময় চান উপাচার্য

মঙ্গলবার (১৩ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারীরা। এরপর সাতদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার আশ্বাসে বিকেলে ফিরে যান আন্দোলনকারীরা।

তবে, আন্দোলনকারীদের কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা যদি কর্মবিরতিতে যেতে চায়, তাহলে কিন্তু ‘কোর্স আউট’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এটা যেন তারা মাথায় রাখে। আমাদের আইনে আছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি টানা তিনদিন ক্লাসে উপস্থিত না থাকে, তাহলে তাদের বের করে দেওয়া যাবে।

আন্দোলনকারীদে;র হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য

উপাচার্য বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ করে বলেছি আর্থিক ভাতার বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করে। আগামী সাতদিনের মধ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ বরাদ্দ পেলে পোস্টগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে।

ঢাকা মেডিকেল, স্যার সলিমুল্লাহ ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেলে তা অধ্যক্ষদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। তারা এ মুহূর্তে টাকার ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিশ্রুতি চাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক—জানান উপাচার্য।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় উচ্চশিক্ষা (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট) নিতে শিক্ষার্থী-চিকিৎসকদের টাকা পরিশোধ করে পড়াশোনা করতে হয়। অথচ আমরা শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের ভাতা পরিশোধ করছি।

উপাচার্য বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার আগে চিকিৎসক-শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। দায়িত্ব নেওয়ার পর সে টাকার অংক বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অথচ আজ তারা মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। আমার কার্যালয় ঘেরাও করেছে।

তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করে তুলতে একটি কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্রে নেমেছে। বিএনপি ও জামাতপন্থি চিকিৎসকদের নেতৃত্ব নিতে ইস্যু সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

আরও পড়ুন: আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে সাতদিন সময় চান বিএসএমএমইউ উপাচার্য

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলে তিনি অবশ্যই তা বণ্টন করে দেবেন। কিন্তু আলোচনার জন্য সময় প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করে—যুক্ত করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ব্লকের সামনে জড়ো হতে থাকেন চিকিৎসকরা। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের কার্যালয় ভবনের নিচে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিএসএমএমইউ উপাচার্য।

এসময় চিকিৎসকরা ৫০ হাজার টাকা ভাতা দাবিসহ তিন দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। তারা বলেন, বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে।

আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানান, গত অর্থবছরে বাজেটের ৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ তাদের ভাতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে না এবং নিয়মিতও প্রদান করা হচ্ছে না। এটি স্বাস্থ্যখাতের জন্য লজ্জার বিষয়। রেসিডেন্টদের মতো নন-রেসিডেন্টদের বরাদ্দের টাকাও দেওয়া হয়নি, এটা প্রতারণা।

ভাতার বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা আশ্বস্ত করলেও বিএসএমএমইউ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। ‘আমাদের দাবি, আমাদের দাবি, মানতে হবে, মানতে হবে। ঐক্য, ঐক্য চিকিৎসকদের ঐক্য’ স্লোগানে মুখরিত করে তুলেছেন উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত বেসরকারি চিকিৎসকরা।

‘সবাই আশার বাণী শোনান’ জানিয়ে চিকিৎসকরা জানান, এ ক্ষেত্রে কেউ কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ সময় চিকিৎসকদের শান্ত করার চেষ্টা করা হলে তারা সরাসরি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থানের ঘোষণা দেন।