বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির শর্ত শিথিল
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হলে শুরুতে জাতীয় মেধাক্রমে ৩৪ হাজারের মধ্যে থাকার বাধ্যবাধকতার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর এবার ভর্তির সেই শর্ত শিথিল করলো দেশের চিকিৎসা শিক্ষার তদারক সংস্থাগুলো।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মঙ্গলবারের (০৬ জুন) সভায় নতুন দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে এবার দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তির সুযোগ পাবেন পাশ করা সকল শিক্ষার্থী। একইসাথে কমানো হয়েছে জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৪ থাকার শর্তও। নতুন শর্ত অনুযায়ী, জীববিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৩.৫০ থাকলেই বেসরকারি মেডিকেল ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এতে সুবিধা পাবেন দেশের বাইরে থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস অথবা বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৩’ এর অনুচ্ছেদ ২.৪ এবং ৪.১ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশোধিত ভর্তি নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৪.১ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভর্তি (লিখিত) পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় মেধা তালিকা (বিশেষ কোটা যদি থাকে উল্লেখসহ) প্রকাশ করা হইবে। তবে ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বর এর নীচে প্রাপ্ত প্রার্থীরা কোনোভাবেই ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবেন না বলেও জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এছাড়াও মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস অথবা বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৩’ এর অনুচ্ছেদ ২.৪ এ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে (Biology) জিপিএ ৩.৫০ পয়েন্ট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাইবেন মর্মে উল্লেখপূর্বক ধারাটি সংশোধন করতে হইবে। ফলে এবারও বিদেশি শিক্ষার্থী হারানোর শঙ্কা থাকলেও এবার সে শঙ্কা কাটল। এর আগে জিপিএ শর্তের কারণে বাদ পড়তে যাওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি অথবা তাদের অর্থ ফেরত দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলকে চিঠি দেয় ভারতীয় দূতাবাস।
এবারের ভর্তি নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৪.১ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভর্তি (লিখিত) পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদিত মোট আসন সংখ্যার সাথে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদিত আসন সংখ্যার ৫ গুণ শিক্ষার্থীকে নিয়ে জাতীয় মেধা তালিকা (বিশেষ কোটা যদি থাকে) উল্লেখসহ প্রকাশ করা হইবে। তবে ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বর এর নীচে প্রাপ্ত প্রার্থীরা কোনোভাবেই ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হইবে না—এতে পাশ করেও মেডিকেল ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় ছিলেন পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। নতুন সিদ্ধান্তে ভর্তির সুযোগ পাবেন এসব শিক্ষার্থী।
এছাড়াও একই নীতিমালায় বলা হয়েছিল, প্রার্থীকে এসএসসি বা ‘ও’ লেভেল বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হইতে হইবে এবং এইচএসসি বা ‘এ’ লেভেল বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগসহ অবশ্যই পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট থাকিতে। এ সিদ্ধান্তে ফলে দেশের বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি নিশ্চায়ন করলেও বাদ পড়েন প্রায় ২০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী।
আমাদের পূর্বের প্রতিবেদনটি পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির শর্ত শিথিল হচ্ছে
বর্তমানে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ১২৮টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার আসন বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি আসনগুলোতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিবছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে অমেধাবীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এটি বন্ধ করতে এবার বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে হলে মেধাক্রম ৩৪ হাজারের মধ্যে থাকার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এমন নিয়মে শুরু থেকেই আপত্তি জানায় বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।
এর আগে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছিলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটি আমরা চাই না। সেজন্য আমরা ভর্তির শর্ত শিথিলের বিষয়ে ভাবছি।
বিপিএমসি বলছে, বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাক্রম ৩৪ হাজারের মধ্যে থাকার শর্ত ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। এতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না। এর ফলে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সংগঠনটি শুরু থেকেই দাবি জানিয়েছিল ভর্তির শর্ত শিথিল এবং বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য জিপিএ’র শর্ত কমানোর বিষয়ে।
শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ও বিপিএমসিএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলছেন, আমরা চাই মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হোক। আমরা শুরু থেকেই সকল অনিয়মের বিপক্ষে ছিলাম; দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করবে তাদের সাথে বিপিএমসিএ থাকবে না।