আড়াই বছরেও পাওয়া যায়নি নার্সিং শিক্ষার্থী নাঈমাকে
রাজধানীর খিলক্ষেতের এলিট নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থী নাঈমা আক্তারের (১৯) খোঁজ পাওয়া যায়নি নিখোঁজের আড়াই বছরেও। ২০২০ সালে নাঈমা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হন এলিট নার্সিং ইন্সটিটিউটে। এরপর, একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন এই শিক্ষার্থী।
নিখোঁজ এই শিক্ষার্থী নাঈমা ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জাকেরচক ইউনিয়নের কাজী গ্রামের আসাদ উল্লাহ-হামিদা দম্পতির সন্তান। নিখোঁজ হওয়ার দিনও মোবাইলে বাড়িতে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেেওই শিক্ষার্থী। হোস্টেলে তাঁর রক্ষিত ছিল যাবতীয় জিনিসপত্র। এমনকি মোবাইল ফোনটিও পাওয়া গেছে। নাঈমা পরনের এক কাপড়েই নিখোঁজ হয়েছেন। এরপর আর তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের পরদিন নাঈমার পরিবার ২৯ ফেব্রুয়ারি খিলক্ষেত থানায় একটি জিডি করে। কিন্তু এ পর্যন্ত নাঈমার কোন সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ।
খিলক্ষেত থানার তৎকালীন (তদন্ত) কর্মকর্তা এসআই সাদিকুর রহমান জানান, এখনো কোনো রহস্য উন্মোচন করা যায়নি এ ঘটনার। নিখোঁজ শিক্ষার্থী তার সঙ্গে কিছুই নেননি। তাঁর মোবাইলে কোনো ধরনের আলামতও পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, ওই শিক্ষার্থীর পরিবার যখন আবার মামলা করেছে, তখন পুলিশ পুনরায় তদন্ত করে। কিন্তু, তাতেও নিখোঁজ রহস্যের কূলকিনারা করা সম্ভব হয়নি।
নাঈমার পরিবার জানিয়েছে, নার্সিং ইন্সটিটিউটে সিসিটিভি না থাকায় কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। ওই সময় হোস্টেলের বাইরে যেতে হলে যে এন্ট্রি খাতা রয়েছে সেখানেও নাঈমার নামে কোনো এন্ট্রি ছিল না। সব মিলিয়ে এ ঘটনার জন্য ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষকে দায়ী বলে মনে করছেন তারা। ফলে নাঈমার পরিবার আদালতে মানবপাচার আইনে এলিট নার্সিং ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ (৫০) ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। তবে এখন পর্যন্ত ওই মামলা তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়ের চাপ, ইউজিসির নীরবতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনীহা
নাঈমার মা হামিদা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের যদি একটু খোঁজ পেতাম, তাহলে স্বস্তি পেতাম। এভাবে একটি মেয়ে কিভাবে গায়েব হলো প্রশ্ন তার। পুলিশ তো কিছুই করতে পারছে না; প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমার মেয়েকে খুঁজে দেন।
এ বিষয়ে এলিট নার্সিং ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মমতাজ বেগম জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। আমার ওই শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি বলতে পারবেন।
আর এলিট নার্সিং ইন্সটিটিউটের তৎকালীন অধ্যক্ষ খালেদা খাতুন জানান, এখনো স্পষ্ট না ওই শিক্ষার্থীর নিখোঁজের ঘটনা। তবে, সে চলে গেছে, নাকি তাকে কেউ নিয়ে গেছে, এখনো জানা যায়নি এ বিষয়টি।
এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, ওই শিক্ষার্থী নিখোঁজের পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। এটি নিয়ে পুলিশও নিয়ে কাজ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি তার।
নাঈমার বড় ভাই আবু বক্কর সিদ্দিক দাবি জানান থানা পুলিশ যদি তার বোনের সন্ধান দিতে না পারে তবে তার অনুরোধ মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করার।