পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষকদের এমপিও জটিলতার সমাধান হচ্ছে!
বেসরকারি মাদ্রাসায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষকদের এমপিও জটিলতা নিরসনে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, মাদ্রাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও জটিলতা নিরসনে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এই কমিটির প্রতিবেদন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে জমা দেয়া হবে। কমিটির প্রতিবেদন ও পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষকদের নিয়ে দেয়া আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনা করবে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন অধিশাখা-০২ এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব মাদ্রাসা অধিশাখা) ড. মো. আয়াতুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা আপিল বিভাগের দেয়া রায় পর্যবেক্ষণ করবো। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালত যে রায় দিয়েছে সেটিই বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়। তবে আপিল বিভাগের রায়ের কপি মন্ত্রণালয়ে এখনো আসেনি। এনটিআরসিএ কিংবা মাদ্রাসা অধিদপ্তর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেনি। আপিল বিভাগের রায় দেখে সেটি বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। এতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানায় ওই সূত্র।
আরও পড়ুন: এমিপও‘র দাবিতে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষকদের মানববন্ধন
এ প্রসঙ্গে ড. মো. আয়াতুল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ আদালত কোনো একটি বিষয়ে রায় দিলে সেটি সবাইকে প্রতিপালন করতে হয়। মন্ত্রণালয়ও করবে। তবে আগে রায়টি দেখতে হবে। আমাদের আইনজীবীদের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করতে হবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১২ জুন জারি করা এমপিও নীতিমালায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ করা হয়। তখন থেকেই পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করতে পারছিলেন না। পরে প্রার্থীরা এ বিষয়ে আদালতে রিট করেন। হাইকোর্ট প্রার্থীদের বয়সশিথিলের পক্ষে রায় দিলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এনটিআরসিএ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে রায় দেয়।
আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১২ জুনের পূর্বে যারা শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ অর্জন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য। এই রায় অনুযায়ী ২০২১ সালের শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। পরবর্তীতে নিয়োগের সুপারিশপত্রের ৪ নং পয়েন্টে ৩৯০০/২০১৯ নং মামলার রায় অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১২ জুনের পূর্বে যারা শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ অর্জন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য বলে জানায় এনটিআরসিএ। এমন সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকার পরও পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নতুন শিক্ষকদের এমপিও আবেদনের ফাইল রিজেক্ট করছে মাদ্রাসা অধিদপ্তর।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, আপিল বিভাগের রায় এবং এনটিআরসিএ’র সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকায় আমরা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সহযোগিতায় আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এমপিওর জন্য আবেদন করি। তবে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল পোগ্রামার থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মতো মার্চ মাসেও আমাদের এমপিও ফাইল গণহারে রিজেক্ট করে দেয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন আমাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি। যা আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পরিপন্থী।
আরও পড়ুন: যোগদানের দিন থেকেই বেতন কার্যকর চান শিক্ষকরা
শিক্ষকরা আরও জানান, এমপিও না হওয়ার কারণে করোনা পরবর্তী সময়ে তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই নিজ বাড়ি থেকে ৭০০/৮০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করছেন। বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজ খরচে বহন করতে হচ্ছে। যা অত্যন্ত কষ্টকর। এই অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের এমপিওভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।