আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী
হল প্রাঙ্গণে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণ না করাসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলনে রয়েছেন ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ আজ শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তারা।
তাদের এই আন্দোলনের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যেটা করছেন সেটা ঠিক নয়। ওখানে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ভবন হবে। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। সেই সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া উচিত নয়। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস নিয়ে যদি বিশেষ কোন কথা থাকে তাহলে তারা যেকোনো সময় আমার সাথে কথা বলতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় আমার দরজা খোলা আছে।
কুয়েট শিক্ষক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, কুয়েটের কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ যে একদল শিক্ষার্থী তার সাথে অসদাচরণ করেছিল। তার পরিণতিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি মনে করি কেউ অভিযোগ করলে সেটা অভিযোগ হতে পারে। তা প্রমাণের জন্য নানান দিক আছে, আইন আছে। মেডিকেল টেস্টের কিছু বিষয় আছে। আমরা কেউ আইনের উর্ধ্বে না। আমাদের কারও প্রতি ভালোবাসা থাকতে পারে, ক্ষোভ থাকতে পারে কিন্তু তা কখনোই আইনের উপরে না।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যখন ছাত্রলীগ করার বয়স হয়েছিল তখন ছাত্রলীগ ছাড়া আর কিছুই কখনো ভাবিনি। এখানে একটা ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক তৈরি হয়েছে এবং এটা যদি কাজ করে তাহলে আমাদের ব্লাডের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা সম্ভব। আগে মানুষ রক্ত দিতে চাইতো না কিন্তু এখন নিজেদের আপনজনকে বাঁচানোর জন্য হলেও মানুষ রক্ত দিতে এগিয়ে আসছে। ছাত্রলীগের ৫০ লক্ষ কর্মীর এই ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক সফলভাবে কাজ করলে বাংলাদেশের রক্তের চাহিদা সুষ্ঠুভাবে পূরণ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে একটি মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচানো সম্ভব অথচ এই রক্তটাই তিন মাস পর নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্যাম্পাসে সর্বাধিকবার এসেছি রক্ত নিতে।
স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক রক্ত দিয়েছি। ছাত্রলীগকে তৈরি করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য। আর তার স্বপ্নই ছিল এই দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে তৈরি করা।
সাংগঠনিক দূর্বলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগাছা পরগাছার বিষয়ে আমাদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। কাউকে স্বজনপ্রীতি করে দল ভারি করতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমরা মাঝে মাঝে নিজেদের দল ভারি করার জন্য নিজেদের পছন্দমতো যে কাউকে সংগঠনে নিয়ে নিচ্ছি। যার ফলে সাংগঠনিক দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে।
চক্ষুদান ইসলাম ধর্মে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় বলে তিনি বলেন, মরণোত্তর চক্ষু দানকে ইসলামে সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে দেখা হয়। তিনি মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রতি যুবকদের উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিডনি পাওয়া যায়, ব্লাড পাওয়া যায় কিন্তু কেন জানি মানুষ চক্ষুদানের ব্যাপারে বিমুখ। আমাদের এই চক্ষুদান বা কর্ণিয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দীপু মনি বলেন, আমরা আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখতে চাই না। এজন্য আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে। সর্বদা মাস্ক পরিধান করে চলাফেরা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চক্ষুবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. এম এ আজিজ সহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিল তখন তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা। আমাদের কোন কাজকর্মে যেন আমাদের প্রিয় অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কষ্ট পেতে না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৫ দফায় যা রয়েছে-
১. কোনো অবস্থাতে আবাসিক হল বন্ধ করা যাবে না।
২. শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন করতে হবে।
৩. হল প্রাঙ্গণে অধিদপ্তর নির্মাণ করা যাবে না।
৪. সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আরোপিত সকল প্রকার হয়রানি মূলক মিথ্যা অভিযোগ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোন ধরনের বাণিজ্য করা চলবেনা।