১৯৭১ সালে চার শ্রেণীতেই প্রথম হয়েছিল টুমচর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা
স্বাধীনতার বছর ১৯৭১ সালে টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দাখিল, আলিম, ফাজিল এবং কামিল পর্যায়ে প্রথম হয়েছেন। পরবর্তী বছরগুলোতেও মাদ্রাসা শিক্ষায় ধারাবাহিক অবদান রেখে শতবর্ষে পদার্পন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) মাদ্রাসাটির শতর্ষের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মাওলানা হারুন আল মাদানী এসব কথা বলেন।
মাওলানা হারুন আল মাদানী বলেন, তিন দিনব্যাপী শতবর্ষের এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতির কারণে এটি সংকোচিত করে একদিনে নিয়ে আসা হয়েছে। নিজেদের শত ব্যস্ততার মাঝে যারা অল্প সময়ের জন্য আমাদের এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অধ্যক্ষ বলেন, টুমচর মাদ্রাসার অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আশরাফ আলী রহঃ (বড় হুজুর) একজন বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। ওনার এখলাস এবং কোরবানির কথা লোকমুখে সবাই জানেন। তাঁর কোরবানির বদৌলতে মাদ্রাসাটি আজ শততম বর্ষে এসে উপনীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পড়াশোনা কর, যোগ্যতাই একদিন তোমার জায়গায় নিয়ে যাবে
শতবর্ষের এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, একই আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান, হামদর্দের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকিম মো. ইউসুফ হারুন ভুইয়া প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে মাদ্রাসাটির নবীন-প্রবীন শিক্ষার্থীরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সকাল ৯টায় পবিত্র কোরআন তেলোয়াতের মধ্যদিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা হারুন আল মাদানী। কয়েকটি ধাপে চলছে এ অনুষ্ঠান। রাত ১০টায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও দোয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাওলানা হারুন বলেন, টুমচর মাদ্রাসার শতবর্ষে এসে আমরা অতীত অনেক স্মৃতি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। এবারে যদি এ শতবর্ষের অনুুষ্ঠানের উদ্যোগ না নিতাম তাহলে আরও অনেক স্মৃতি হারিয়ে যেতো। যা আগামী প্রজন্মের জন্য আর খুঁজে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। পুরনো স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই শতবর্ষের অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসাটির ঐতিহ্য তুলে ধরে অধ্যক্ষ বলেন, এ মাদ্রাসার ঐতিহ্য এমন ছিল- ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫০ সালে মাদ্রাসা বোর্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এছর প্রথম ব্যাচে আমিন নামে একজন দাখিলে অংশ নিয়ে সারাদেশে সেকেন্ড হয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যাচে গোলাম মোস্তফা নামে একজনে পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হয়েছেন। দাখিলের শুরুতেই উনাদের ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়াতে বোর্ডে একটা চমক লেগে যায়।
আরও পড়ুন: বাদশাহ আছে আলমগীর নেই, শিক্ষক আছে সম্মান নেই
অধ্যক্ষ আরও বলেন, ১৯৫২ সালে আলিম প্রথম ব্যাচে ছয়জন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছেন। পরে ১৯৫৬ সালে ফাজিল প্রথম ব্যাচে পরীক্ষা দিয়েছেন মাকসুদ নামে একজন। তিনি প্রথম ব্যাচে পরীক্ষা দিয়ে চতুর্থ হয়েছেন।
বড় হুজুর রহঃ সবসময় প্রার্থনা করতেন- যেন মাদ্রাসাটি থেকে একই বছরে দাখিল, আলিম, ফাজিল তিন শ্রেণীতে সারাদেশে ফার্স্ট হয়। মাওলানা হারুন বলেন, সে দোয়া কবুলও হয়েছে। ওই ব্যাচের একজন হলাম আমি। ১৯৭১ সালে দাখিল পরীক্ষায় আমি ফার্স্ট হয়েছি, এ বছর আলিমে মনোয়ার নামে একজনে ফার্স্ট হয়েছেন, ফাজিলে ফার্স্ট হয়েছেন আব্দুল্লাহ নামে একজন। তিনি লক্ষ্মীপুর আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, একই বছর রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষা প্রথম হয়েছেন রুহুল আমিন নামে একজন। তিনিও টুমচর মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। একই বছরের দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সবাই এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। এটা মাদ্রাসা শিক্ষায় বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এরকম ঐতিহ্য রয়েছে এ মাদ্রাসার। শতবর্ষের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এ ধরনের অতীতকে ধরে রাখতে চাই।
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি। টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নে অবস্থিত একটি বিখ্যাত আলিয়া মাদ্রাসা।
দেওবন্দের প্রাক্তন মাওলানা আব্দুর রউফ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় এনায়েতপুর মাদ্রাসা (বর্তমানে আবিরনগর মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসায় অনুপ্রেরণা পেয়ে ছাত্র আশরাফ আলী (বড় হুজুর নামে পরিচিত ছিলেন) ১৯২১ সালে সদর উপজেলার টুমচরে ইউনিয়নে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। আগে ফাজিল শ্রেণী পর্যন্ত থাকলেও সম্প্রতি মাদ্রাসাটি কামিল শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে।