ঢাকার এই মাদ্রাসার ছাত্ররা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ভর্তি হতে পারবে
এখন থেকে রাজধানীর উত্তরাস্থ দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে সানাভিয়্যাহ (উচ্চ মাধ্যমিক) সম্পন্ন করা যে কোন ছাত্র মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন ফ্যাকাল্টিতে (সাইন্স ফ্যাকাল্টি ব্যাতীত) সরাসরি ভর্তি হতে পারবে।
এ নিয়ে সম্প্রতি দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া ও আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুয়াদালা (সমতা বিধান) সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশস্থ মিশরীয় দূতাবাস শিক্ষাচুক্তি ও স্বীকৃতি সংক্রান্ত কাগজপত্র হস্তান্তর করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য এটি বিশাল এক নিয়ামত এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দ্বার উন্মুক্ত হলো। মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কোন কওমি মাদ্রাসাকে এই প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করেছে। একইসঙ্গে তাদের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই মাদ্রাসার নাম ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সানাউল্লাহ আজহারী বলেন, এর আগে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘মুআদালা’ করলেও সেগুলোর চুক্তির সময় শেষ হয়ে গেছে। যেমন হাটহাজারী মাদ্রাসা ও পটিয়া মাদ্রাসা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘মুআদালা’ করেছিল। আমরা বাংলাদেশি আজহারগামী ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে নানা প্রচেষ্টায় নতুন করে এই ‘মুআদালা’ সম্পন্ন করি।
“হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং পটিয়া মাদ্রাসা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যে ‘মুআদালা’ করেছিল সেটি ছিলো একটি সীমাবদ্ধ ‘মুআদালা’। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্ররা আযহারে গেলে শুধু উলুমুদ্দীন-এর প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে পারত। কিন্তু আমরা যে চুক্তিটি সম্পন্ন করেছি এটি কোন সীমাবদ্ধ চুক্তি নয়। আমাদের এখান থেকে সানাবিয়া (শরহে বেকায়া) শেষ করে কোন ছাত্র যদি আজহারে ভর্তি হতে চায় তাহলে কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই আজহারের যেকোনো অনুষদে ভর্তি হতে পারবে।”
এমন যুগান্তকারী একটি চুক্তি কেন সম্পন্ন করলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে কেউ আজহারে যেতে চাইলে দেখা যায় তারা দাওরায়ে হাদিস পাশ করার পর কিংবা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম কামিল পাশ করার পর মিশরে যায়। সেখানে গিয়ে যখন আজহার এ ভর্তি হওয়ার জন্য মাহাদে ভর্তি হয়ে সার্বিক বিষয় সম্পন্ন করে; তখন দেখা যায় যে তাদের বয়সের সঙ্গে অন্যান্য দেশ থেকে আসা ছাত্রদের বয়সের অনেক ডিফারেন্স।
তিনি বলেন, প্রায় ১২০ থেকে ১৩০টি দেশ থেকে মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা পড়তে আসে। যারা সেখানে পড়তে আসে সবার বয়সই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্রদের দেখা যায় দাড়ি উঠে গেছে এবং বয়সের একটা ভারত্ব চলে এসেছে। যার ফলে তারা সেই বয়সে গিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য চিন্তা মাথায় চলে আসে এবং ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারে না।
“তাছাড়া ওই বয়সে যখন তারা দেশের বাইরে লেখাপড়া করতে যায় তখন পরিবার থেকেও তাদের কাছে একটি আর্থিক সাপোর্ট এর আশা করে থাকে। অথচ সে সেখানে যায় তারা লেখাপড়া করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে সে ছাত্রের লেখাপড়ায় অনেক বিঘ্নতা হয়। তাই আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশ থেকে সরে আবে কেয়া শেষ করে যেন ছাত্ররা ঠিক বয়সে সেখানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারে।”
এদিকে,আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কোন কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষ্যে গত রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরাস্থ একটি রেস্তোরায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রদান অতিথি হিসবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব হাবিব হাসান।
সাংসদ আলহাজ্ব হাবিব হাসান তার বক্তব্যে বলেন, দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া, ঢাকা অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। একটা সময় কওমি মাদ্রাসা যেরকম অবহেলিত ছিল বর্তমানে আর সেই অবস্থায় নেই। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জনসহ তারা বিভিন্ন পর্যায়ে সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। এবং এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া একধাপ এগিয়ে গেল। পৃথিবীর প্রাচীন ও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আল-আজহারের সাথে দারুল আরকামের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সমতাবিধান চুক্তি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি মাইলফলক।
অনুষ্ঠানে দারুল আরকামের এই অর্জনকে সাধুবাদ জানিয়ে উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি ও সফলতা কামনা করেন আল হাইয়াতুল উলইয়া এর কো চেয়ারম্যান আল্লামা সাজিদুর রহমান।
মাওলানা শাব্বির আহমাদ খানের উপস্থাপনা ও প্রিন্সিপাল সানাউল্লাহ আযহারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সেন্টার ফর দাওয়া এন্ড কালচার এর মহাপরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, শায়খুল হাদিস আল্লামা ইকবাল বিন হাশিম, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া এর সহ-সভাপতি জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল রহমান।