রাজধানীতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য আরও একটি মাদ্রাসা চালু
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর কুরআন শিক্ষায় রাজধানীর শ্যামপুরে আরও একটি শাখার উদ্বোধন করেছে দাওয়াতুল কুরআন মাদ্রাসা। মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) বিকেলে শ্যামপুরে মাদ্রাসাটির ২৮তম শাখার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ শাখায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী পড়াশুনা করবে।
অনুষ্ঠানে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে শহর সমাজসেবা কার্যক্রম-১ এর কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর ইসলাম বলেন, মৃত্যুর পর যে প্রশ্ন সেটি সবার জন্য একই। প্রশ্নের উত্তরগুলোও সবাইকে দিতে হবে। অনেক সংগঠনই আপনাদের জন্য কাজ করে, কিন্তু তারা (মাদরাসা) আপনাদের জন্য যে কাজটি করছে সেটি সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।
মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা অনেক অবহেলিত। রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে। এভাবে দিনরাত কাটিয়ে পরকালেও তো আমাদের হিসাব-নিকাশ হবে। ওই সময় যদি এ অবস্থাটা থাকে, দুনিয়ায় কিছু পেলাম না, আখিরাতও যদি হারাই তাহলে আমাদের দুই কুলই হারালো। এর একটি চিন্তাচেতনা কারও মাথায় আসেনি। ২০২০ সালের জুন মাস থেকেই আমাদের মুফতি আজাদ রহমানের হাত ধরে মাদ্রাসাটির যাত্রা শুরু।
তৃতীয় লিঙ্গের দাওয়াতুল কুরআন মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি মুহাম্মদ আবদুর রহমান আজাদ বলেন, কালিমা-নামাজ পড়ে, আল্লাহকে খুশি করে, রাসুলপাকের (সা.) তরিকা মোতাবেক যাতে কবরে যেতে পারি এই উদ্দেশ্যে আমরা ঢাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসাটি শুরু করেছি। দীর্ঘ পর্যালোচনা করে সবচেয়ে বেশি মাদ্রাসার তীব্র চাহিদা অনুভব করেছি তাদের মাঝে। তাই তাদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো খুবই জরুরি। এটার কারণ হলো- বিভিন্ন জায়গায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা মসজিদে ইমাম সাহেবকে বলার পরও তাদের কুরআন শিক্ষা দিতে তারা সম্মত হয়নি। চট্টগ্রামের মীর সরাইয়ের গুরুমা বৃষ্টি বলেছেন, তাদের একজন সদস্য ইন্তেকালের পর জানাজা পড়ানোর অপরাধে পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমামের চাকরি চলে গেছে।
সুস্থ জীবন সংগঠনের সহ-সভাপতি পার্বতী হিজড়া বলেন, দাওয়াতুল কুরআন মাদ্রাসায় কুরআন শিক্ষার নিয়মিত ক্লাস হবে। শুধু কুরআন শিক্ষা নয়, এরা দ্বীনের কথা, ইসলামের কথা, আচার-আচরণ, সমাজে কীভাবে চলতে হয়, বসতে হয় সবকিছু শেখাবে। আমি আশা করি এর ফলে সমাজে আমাদের প্রতি যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি, অনেক সময় মারা গেলে জানাজা হয় না। এ ধরনের বৈষম্যের জন্য আমরা পিছিয়ে আছি। আমরা যেন আর অভাগা না থাকি, আমরা দ্বীনের পথে চলব, আমরা নামাজ শিখবো। আমরা শুরুটা করলাম, এখন সমাজ আমাদের গ্রহণ করবে সেটাই প্রত্যাশা।
এর আগে গত বছর ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হয় ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’।