সীমিত পরিসরে দাপ্তরিক কাজের জন্য খুলতে পারে কওমি মাদ্রাসা
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগাতার বন্ধ থাকার পর আগামী ১৩ জুন থেকে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে দেশের সকল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা সমূহ। কিন্তু কওমি মাদ্রাসাগুলো খোলার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন দিয়েছে সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। তারা জানায়, কওমি মাদ্রাসা খোলা হলে সরকারবিরোধী বড় ধরনের অন্দোলন হতে পারে।
হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং আটক হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নামতে পারে শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরণের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
আরও দেখুন: নতুন পদ্ধতিতে মাধ্যমিকের মূল্যায়ন, ব্যস্ততা বাড়বে শিক্ষক-শিক্ষর্থীদের
প্রতিবেদন অনুযায়ী কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে হেফাজতে ইসলাম পরিচয় দিয়ে আসলেও আদতে তারা একটি রাজনৈতিক সংগঠন। গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ তারা যে নাশকতা চালিয়েছে তা বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসকে মনে করিয়ে দিয়েছে। ওই তিন দিনের নাশকতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের তিন হাজার ২৮ জন এজাহারনামীয় এবং অনেককে অজ্ঞাত আসামি করে সারা দেশে ১৬৩টি মামলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি চলছে। এই পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়া হলে তাদের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে এবং সরকারবিরোধী বড় ধরণের আন্দোলেন হতে পারে।
তবে বর্তমানে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাসহ বড় বড় মাদ্রাসায় অনেক আবাসিক ছাত্র অবস্থান করছে বলে উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। মাদ্রাসাছাত্ররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনা করছে। হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতর ও বাইরে প্রায় ৩০০ ছাত্র পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে। তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্রও রয়েছে। মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হলে তারা হাটহাজারী থানায় হামলা, ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটাতে পারে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, হেফাজতের নেতাদের মধ্যে মাওলানা মামুনুলের প্রভাব ও ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মামুনুলের নারীঘটিত বিষয়টি সরকারি কারসাজি বলে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকরা মনে করে। হাটহাজারী মাদ্রাসার আশপাশের জনসাধারণ ও মুসল্লিদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই মাদ্রাসা খুললে মামুনুলের নারীঘটিত বিষয়টি নিয়ে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা অন্দোলন করতে পারে।
গোয়েন্দারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কওমি মাদ্রাসাগুলো বিত্তবানদের দান, জাকাতের অর্থ ও কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে পরিচালিত হয়। এবার মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় কওমি মাদ্রাসাগুলো কাঙ্ক্ষিত জাকাতের টাকা তুলতে না পারায় আর্থিক সংকটে রয়েছে। এ কারণেও ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কওমি মাদ্রাসাগুলো পুরোপুরি খুলে না দিয়ে নতুন ছাত্রভর্তির জন্য সীমিত পরিসরে দাপ্তরিক কার্যক্রমের জন্য খোলা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।