‘অন্য শিক্ষকদের দিয়ে মাদ্রাসার উত্তরপত্র মূল্যায়ন বিভ্রান্তি তৈরি করবে’
অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে দাখিল পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের চিন্তা করলে সেটি নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করবে বলে মনে করছেন মাদ্রাসার বিষয়ে অভিজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘মাদ্রাসায় বাংলা, অংক ও ইংরেজি যারা পড়ান তারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা। তারা কিন্তু মাদ্রাসায় পড়া নন। কোনো কোনো মাদ্রাসায় হয়তো সুনির্দিষ্ট কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে এসব বিষয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়নের চিন্তা করলে সেটি নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। এগুলো অপ্রয়োজনীয় চিন্তা। বরং ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ করে, অধিকতর যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের উত্তরপত্র মাদ্রাসা শিক্ষকের বাইরে অন্য ধারার শিক্ষকদের মাধ্যমে মূল্যায়নের পরামর্শ করেছে একটি সংসদীয় কমিটি। কমিটির সদস্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের এ পরামর্শের বিপক্ষে মন্তব্য জানিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষককেরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
নোয়াখালীর হাতিয়ার হাজী ফাজিল আহমদ দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বিএসসি কিংবা এমএসসি পাশ করা শিক্ষকরা অংক বা ইংরেজি বিষয়গুলো পড়ান এখন। এ বছর করোনার মধ্যেও আমরা শিক্ষার্থীদের অংক ও ইংরেজি বিষয়ে আলাদা করে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। এখন শিক্ষকরাও মানসম্পন্ন। তাই অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে খাতা মূল্যায়নের দরকার আছে বলে মনে হয় না।
কুমিল্লা সদর উপজেলার রঘুরামপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক অলি আহমদ বলছেন, 'মাদ্রাসা শিক্ষার একটা স্বকীয়তা আছে সেটা বিবেচনায় নিয়েই চিন্তা করা দরকার। এখন অনেক ভালো মানের শিক্ষক মাদ্রাসাগুলোতে বাংলা, ইংরেজি ও অংক পড়ান। আমাদের মাদ্রাসা থেকে পাশ করে অনেক শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। সরকারি চাকরিও করছে অনেকে। হয়তো হাতে গোনা কিছু শিক্ষক নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, সংসদীয় কমিটির উদ্বেগের বিষয়টি বোঝা যায়। কিন্তু এখন তো প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিকের মতোই দাখিলের শিক্ষকদের সরকারি নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করে নিবন্ধিত হয়ে চাকরির আবেদন করতে হয়।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারের (৪ মার্চ) মাহবুব উল আলম হানিফ এক সভায় বলেন, মনে হচ্ছে একই ধারার শিক্ষকরা সবাই ঠিকমত শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেখতে পারছেন না। দাখিল পাস করেই উচ্চ শিক্ষার দিকে যায় শিক্ষার্থীরা এবং পরবর্তীতে চাকরির জন্য অনেক পরীক্ষায় তাদের অংশ নিতে হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে সঠিক মূল্যায়ন হলে পরে আর তাদের সমস্যায় পড়তে হবে না বলেই আমরা চাই, তারা এসব বিষয়ে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করুক এবং সেভাবেই মূল্যায়ন হোক। কিন্তু এসব বিষয়ে যোগ্য শিক্ষকেরও সংকট আছে। আবার অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত নাম্বার দেয়ার প্রবণতাও আছে। তাই অন্য ধারার শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন হলে এসব সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করেছে কমিটি।