টানা ৩৪ বছর মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন আল্লামা শফী

  © ফাইল ফটো

হেফাজতে ইসলামের আমীর ও চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী মারা গেছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারঁ মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে আহমদ শফীর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।

টানা ৩৪ বছর ধরে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার মুহতামিম (মহাপরিচালক) পদ থাকা দেশের প্রবীণ এই কওমি আলেম গত বৃহস্পতিবার সেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। যদিও চলতি বছরের ১৭ জুন তিনি আমৃত্যু এই পদে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মাদ্রাসার শুরা কমিটি। তাঁর মৃত্যুর পর শেখ আহমদই মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন বলে এসময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত শফী হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) ছিলেন দীর্ঘদিন।

দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত দেশের অন্যতম পুরনো এ কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে তিনি দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন, ছিলেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতির দায়িত্বে।

ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে আসা হেফাজতে ইসলামের আমিরের দায়িত্বও তিনি পালন করছিলেন কওমি মাদ্রাসার নেতৃত্বের উপর ভর করে।

কিন্তু শফীর বয়স হওয়ায় হাটহাজারীর মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির (শূরা কমিটি) বৈঠকে শফী পদত্যাগ করেন।

এর মধ্য দিয়ে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় দৃশ্যত আহমদ শফীর সুদীর্ঘ দিনের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে। শূরা কমিটির ওই বৈঠকে শফীর ছেলেসহ দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৈঠকের পরপরই আহমদ শফীকে মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেলে। তার পরদিনই ঢাকায় তার মৃত্যু হল। 

শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তার বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক।

তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক।

শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।

১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন।

দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা। তবে নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বরাবরই সমালোচিত আহমদ শফী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আহমদ শফী।


সর্বশেষ সংবাদ