রাতারাতি মাদ্রাসা বনে গেল কোচিং সেন্টার
আলাদা প্রতিষ্ঠানের পৃথক পৃথক কোড নম্বর থাকা সত্ত্বেও একই কোডে দুইটি প্রতিষ্ঠানের বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায়।
জানা গেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর দোলাপাড়া গ্রামে ১৯৭৪ সালে স্থানীয়রা জমি দান করে মদনপুর দোলাপাড়া মসজিদ সংলগ্ন ইবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই গ্রামের মৃত ফজর উদ্দিনের সভাপতিত্বে পরিচালিত মাদ্রাসাটি ১৯৭৯ সালে ৫১৭৪৭ কোডে পাঠদানের অনুমতি দেয় সরকার। গত ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দিলে পুনরায় সগৌরবে উজ্জীবিত হয়ে পাঠদান শুরু করে শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি।
এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে শুনে স্থানীয় লিয়াকত আলী পাশের বনচৌকী গ্রামের কোচিং সেন্টারকে সাম্প্রতিক সময় 'মদনপুর দোলাপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা' উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙান এবং কোড নম্বর উল্লেখ করেন ৫১৭৪৭। লিয়াকত আলী নিজে সভাপতি হয়ে ছেলে আব্দুল লতিবকে প্রধান শিক্ষক ও বাকি পদে ছেলে ও পুত্রবধূদের নিয়োগ দেখিয়েছেন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা হলেও কাগজে উল্লেখ করেছেন ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। যার জমি রেজিস্ট্রি দেখানো হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক দাবি করা শিক্ষকদের জন্ম প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরে। মাদ্রাসা বাচাই কমিটি তদন্তে এলে বেরিয়ে আসে এমন গড়মিল তথ্য। যা প্রথমদিকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন বাচাই কমিটি। কিন্তু পরবর্তীকালে বাচাই কমিটি অদৃশ্য কারণে রাতারাতি তৈরি করা ভুয়া প্রতিষ্ঠানটিকেও বৈধতা দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ওই গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, বনচৌকী গ্রামের কোচিং সেন্টারটি রাতারাতি মদনপুর দোলাপাড়া মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে। এ মাদ্রাসায় এখনো পাঠদান শুরু হয়নি। পুরাতন মাদ্রাসায় লেখাপড়া অনেক আগে থেকে হয়। সরকার এমপিওভুক্ত করবে বলে এসব মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে।
নতুন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিব বলেন, আমার বয়স যাই হোক, আমি প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। জমিদাতা প্রথমে মৌখিকভাবে জমি দান করেছেন। পরবর্তীকালে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। তবে জমির দলিল ছাড়া সরকারি অনুমোদন ও কোড নম্বর কিভাবে পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের তিনি উত্তর দেননি।
পুরাতন মাদ্রাসাটির সভাপতি শাহ আলম বলেন, দীর্ঘদিনের এই প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করতে একটি মহল ভুয়া কাগজ তৈরি করে আমাদের মাদ্রাসার কোড ব্যবহার করে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। যেন গ্রামে আর কোনো মাদ্রাসা গড়ে না ওঠে। বাছাই কমিটি প্রথমদিকে ভুয়া কাগজপত্রের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরে একই কোডে দুই প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে উচ্চতর তদন্তের জোর দাবি করছি আমি।
মাদ্রাসা বাচাই কমিটির সদস্যসচিব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফ মাহফুজ বলেন, একই কোডে দুই প্রতিষ্ঠান হওয়ার নিয়ম নেই। জমির দলিল ও অবকাঠামো ছাড়া কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোড নম্বর বা পাঠদানের অনুমতি হয় না। তবে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি এড়াতে দুই প্রতিষ্ঠানের তথ্য একই কোডে পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
মাদ্রাসা বাচাই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনসুর উদ্দিন বলেন, জমি রেজিস্ট্রি আগে বা পরে হলেও দুই প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো রয়েছে। তাই একই কোডে দুই প্রতিষ্ঠানের কাগজ পাঠানো হয়েছে। একটিকে অনুমোদন দিয়ে অপরটিকে নতুন কোড দিতে মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।