ববিতে আমরণ অনশনে ২ শিক্ষকসহ গুরুতর অসুস্থ ৬ শিক্ষার্থী
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস ব্যাপি চলমান উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার অনশন পালনকালে দুই শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি সরদার কায়সার আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তনুশ্রী ভট্টাচার্যসহ ৬শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাঁদের কে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে অনেকেরই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগ দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক পদ প্রক্টর, ডিন, প্রভোস্ট, বিভাগের চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রশাসনিক পদ থেকে শিক্ষকদের পদত্যাগের জন্য আহ্বান জানালে ৫৬ জন শিক্ষক তাদের স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেছেন, গতকাল আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভা করেছিলাম। সেই সভায় সবার সিন্ধান্ত মতাবেক আমরা প্রভোস্ট, প্রক্টর, চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা দায়িক্তে রয়েছেন। তাদের কে স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমাদের আহ্বানে এ পর্যন্ত ৫৬ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। আশা করছি, সংখ্যাটা আরো বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে আমার দুই শিক্ষক, ৬ শিক্ষার্থী অনশন অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন চলবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। ২৫ এপ্রিল উপাচার্যের ১৫ দিনের ছুটি শেষ হলেও কর্মক্ষেত্রে যোগদেননি।
আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে লোকমান হোসেন বলেন, আমরা এক মাস শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। কোন ফল আসেনি। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি আমরণ অনশনে বসতে। দরকার হলে না খেয়ে মারা যাবো। তবুও উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবো।
উল্লেখ্য, গত ২৬শে মার্চের চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একইদিন এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে এবং হল থেকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তখন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।পরে উপাচার্য এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে। ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা সমঝোতা বৈঠক করলেও ফলপ্রসূ হয়নি তা। ১০ এপ্রিল উপাচার্য ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ১৫ দিন ছুটির আবেদন করে এবং তা মঞ্জুর হয়। তবে শিক্ষার্থীরা এ ছুটি প্রত্যাখ্যান করেছে। এমতাবস্থায় উপাচার্য পদত্যাগ কিংবা পূর্ণকালীন ছুটিতে না গেলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।