তা’মীরুল মিল্লাতে আন্দোলনের জেরে শিক্ষার্থীদের সিট বাতিল ও হয়রানির অভিযোগ
গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের জেরে হোস্টেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
গত ৩০ জুলাই রাতে হোস্টেল সংস্কারসহ ১৩ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলন শুরুর পর প্রথমে শিক্ষকরা পরিস্থিতি শান্ত করতে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ছাত্র সংসদের হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত হয়। পরদিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ড. হিফজুর রহমান ১৩ দফার মধ্যে ১২টি দাবি মেনে নেন।
তবে আন্দোলন শেষে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির অভিযোগ। ছাত্রদের দাবি, বিভিন্ন অজুহাতে সিট বাতিল করা, টিসি দেওয়ার হুমকি, শিক্ষক কক্ষে ডেকে নিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা; এসব ঘটছে পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দমন করতে। বিশেষ করে শরীয়ত উল্লাহ হল ও তিতুমীর হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের ভীতি ও অসন্তোষ তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
শরীয়ত উল্লাহ হলের ১১২ নম্বর রুমের আটজন শিক্ষার্থীর সিট বাতিল করা হয়, যদিও সবাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, জানালায় জুতার বক্সের রং লাগানোর মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের ডেকে শাসানো হয় এবং আন্দোলনের নেতাদের নাম বললে ‘পুরস্কার’ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। সিট কাটার পেছনে পরীক্ষায় ফেল করাকে কারণ দেখালেও একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তারা পাস করেও সিট হারিয়েছেন। অন্যদিকে, প্রভাবশালী শিক্ষকের আত্মীয় দুই বিষয়ে ফেল করেও সিট হারাননি।
হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ, ইসলামি আন্দোলনবিরোধী মন্তব্য করার অভিযোগও তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ব্লক শিক্ষক ক্বারী তানভীর ও প্রভাষক আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ও ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, প্রভাষক আতিকুর রহমান ও শিক্ষক শাহজাহান আলী বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের অফিসে ডেকে এনে আন্দোলনের বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। একাধিক শিক্ষার্থীকে রাত পর্যন্ত বসিয়ে রাখা ও হুমকি-ধামকির অভিযোগও উঠেছে।
এদিকে ২৬ আগস্ট আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বেতন ও অন্যান্য দাবিতে ক্যাম্পেইন শুরু করলে, দাবি প্রকাশের আগেই শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে গিয়ে হুমকি দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের মতে, আন্দোলনের যৌক্তিকতা মেনে নেওয়ার পরও দমন-পীড়নমূলক আচরণ অগ্রহণযোগ্য।
তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করেছে। এরপর তাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি অন্যায়। যদি কোনো শিক্ষার্থীর সিট কাটা হয়ে থাকে, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া, আমরা ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে পাশে থাকব।’
হোস্টেল সুপার মাওলানা নুরুল হক সিট কাটা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্দোলনের কোনো বিষয় নেই, সিট কাটা হয়েছে নানান অনিয়ম ও ফেল করার কারণে।’
অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান বলেন, ‘কারো সিট কাটা হয়নি, যারা চলে গেছে তারা পরীক্ষা শেষ করে চলে গেছে।’ আন্দোলনের জেরে মানসিক চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এভাবে মোবাইলে বলা যাবে না, সরাসরি এসে কথা বলুন।’
মাদ্রাসার তদারকি কমিটির সদস্য অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের কাছে আন্দোলন দমন-নিপীড়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো মোবাইলে বলার বিষয় নয়।’