৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:০২

মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষায় সেশনজট কমছে

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো

মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষা তথা ফাজিল-কামিলে সেশনজট থাকাটাই ছিল এই শিক্ষাক্রমের স্বাভাবিক অবস্থা। তিন বছরের ফাজিল ও দুই বছরের কামিল শেষ করতে অতিরিক্ত আরও এক থেকে দেড় বছর সময় অতিক্রম হয়ে যেত শিক্ষার্থীদের। টানা তিন সেশনের পরীক্ষা বাকি ছিল চলতি বছরের জুন মাসের দিকেও। এরমধ্যে এক সেশনের কিছু পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও এখনো কিছু পরীক্ষা বাকি। তবে আগামী ১ বছরে মধ্যে এই সেশনজট সম্পূর্ণ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে এসব মাদ্রাসার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যায়ের। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসের শেষেরদিকে ফাযিল (পাস) তিন বর্ষের একত্রে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। ফাজিল (সম্মান) পরীক্ষা চলমান রয়েছে এবং আগামী ৯ অক্টোবর ২ বছর মেয়াদী কামিল এবং ১৭ অক্টোবর থেকে অনুষ্ঠিত হবে ১ বছর মেয়াদী কামিল। এই দুটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ২০২১ সালের সকল বর্ষের  পরীক্ষা। তবে এরপরও এই অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০২২ ও ২০২৩ সালের পরীক্ষাসমূহের সেশনজট টানতে হবে। 

করোনাকালীন সময়ে ক্ষতি হওয়া শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে অনলাইন পরীক্ষাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এদিক দিয়ে কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা মাদ্রাসাসমূহের উচ্চশিক্ষা স্তরে সেশনজট তৈরি হয়। দীর্ঘজটে পড়তে হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। 

আরও পড়ুনঃ অক্টোবরে প্রশিক্ষণ পাবেন ‘বাদ পড়া’ ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক

বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং পূর্বের সেশনজটসহ নানা কারণে ২০২০ সালের পরীক্ষাসমূহ ওই বছর নিতে পারেনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ২০২১ পার হয়ে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসেও আটকে থাকে এই পরীক্ষাগুলো। পরবর্তীতে গতবছরের শেষদিকে এসে অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের আটকে থাকা পরীক্ষাসমূহ। পরীক্ষার তারিখ অনুযায়ী, দীর্ঘ দুই বছরের সেশনজটে কাটাতে হয় ফাজিল-কামিলের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। 

বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর পেরিয়ে ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ২০২০ সালের ফাজিল (পাস) শ্রেণীর পরীক্ষাসমূহ। এরপর ওইবছর অক্টোবরের দিকে ফাযিল (স্নাতক) শ্রেণীর পরীক্ষাসমূহ অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের শেষদিকে কামিল পরীক্ষা নেয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। 

পূর্বের সেশনজটের বিষয়টি স্বীকার করে আগামীতে সকল সেশনজট নিরসনের পরিকল্পনার কথা জানায় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, সেশনজট কমিয়ে আনতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০২১ সালের কিছু পরীক্ষা আমরা ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি, বাকিগুলোর তারিখ দেয়া হয়েছে; সেগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, আটকে থাকা পরীক্ষাসমূহ নিয়েও আমাদের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছর জুন মাসের মধ্যেই আমাদের সকল সেশনজট নিরসন হয়ে যাবে আশা করি। আর কোন শিক্ষার্থীকে আমরা হতাশায় দেখতে চাই না। আমাদের উপাচার্য মহোদয় সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছেন; এই ব্যাপারে আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। 

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় জট কাটিয়ে উঠতে করোনায় অনলাইন পরীক্ষা নিলেও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ। তিনি বলেন, করোনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়েছে। প্রতিবছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবমিলে ১০টি পরীক্ষা নিতে হয়। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর দেখেছি ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের সকল পরীক্ষা বাকি। এরমধ্যে ২০২১ সালের পরীক্ষার তারিখ পেলেও কোন পরীক্ষা কমিটি পাইনি। 

উপাচার্য আরও বলেন, আমি সেশনজট কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং ইতিমধ্যে ২০২১ সালের পরীক্ষা শেষদিকে রয়েছে। ২০২২ সালের পরীক্ষা আগামী বছরের শুরুর ‍দিকে এবং শেষ দিকে পরের সেশনের পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 

ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ আরও বলেন, আমাদের লোকবল কম থাকায় এবং নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাজ করতে আমাদের বেঘাত ঘটেছে। সংকট নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দ্রুত পরীক্ষাসমূহ আয়োজন করে সেশনজট সম্পূর্ণ কমিয়ে আনার।