ইবতেদায়ি প্রধান নিয়োগে উপেক্ষিত নীতিমালা, ভোগান্তিতে নিবন্ধনধারীরা
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে সব বিষয়ের নিবন্ধনধারী প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ পেলেও ইবতেদায়ি প্রধান পদের নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। নীতিমালায় ইবতেদায়ি প্রধান পদের নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই পদে নিবন্ধন পাওয়া প্রার্থীরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিবন্ধনধারীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হলেও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি থেকে ইবতেদায়ি প্রধান পদে আবেদনের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত এমপিও নীতিমালার দোহাই দিয়ে অসংখ্য নিবন্ধধারীকে চাকরি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষক সংকট লেগেই থাকছে, অন্যদিকে ইবতেদায়ি প্রধান পদের নিবন্ধনধারীরা বছরের পর বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শুধু ১ম এবং ২য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ি প্রধান পদে চাকরি হয়েছে। এখন এটি পদোন্নতি পদ, এই পদে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ নেই। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি থেকে মন্ত্রণালয় এবতেদায়ি প্রধানকে পদোন্নতি পদ করে দিয়েছে। এজন্য তাদের ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি থেকে আর আবেদনের সুযোগ নেই। আমরা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় বলে দিয়েছি সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী কারো যোগ্যতা থাকলে তারা আবেদন করতে পারবে। নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকলে নিয়োগ দিলেও এমপিও করা যাবে না, শুধু শুধু তাদের নিয়োগ দিয়ে কোন লাভ নেই-- মো. ওবায়দুর রহমান, সচিব এনটিআরসিএ
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, ইবতেদায়ি প্রধান পদটি আগে এন্ট্রি লেভেলের পদ ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধিত আকারে প্রকাশ করা হয়। নতুন এমপিও নীতিমালায় এটি পদোন্নতি যোগ্য পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নতুন নীতিমালা অনুসারে, ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিয়োগ পেতে জুনিয়র মৌলভি পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। সেজন্য ইবতেদায়ি প্রধান পদে আবেদনের সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ইবতেদায়ি প্রধান এবং ইবতেদায়ি মৌলভি পদ দু’টির গ্রেড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরীক্ষার বিষয় এবং প্রশ্ন একই। সবকিছু একই থাকার কারণে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ইবতেদায়ি প্রধান পদে আবেদনকারীদের ইবতেদায়ি মৌলভি পদে অন্তর্ভুক্ত করে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে অজানা কারণে তৃতীয় ও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে এটি অনুসরণ করা হয়নি।
ইবতেদায়ি প্রধান পদের নিবন্ধনধারীরা বলছেন, সংশোধিত এমপিও নীতিমালার ২৬ নং পয়েন্টে বলা হয়েছে, পূর্বের নীতিমালার আওতায় সম্পন্ন হওয়া সকল কাজ বৈধ মর্মে বিবেচিত হবে। সংশোধিত নীতিমালা প্রকাশ হয়েছে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ। তবে এই গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের জন্য ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে ২০২০ সালে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এই নিবন্ধনে ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিবন্ধন দেওয়া হলেও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যা ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র এবং জনবল কাঠামো নীতিমালার পরিপন্থী।
ইবতেদায়ি প্রধানদের নিয়োগ মাদ্রাসা অধিদপ্তর দেবে নাকি গভর্নিং বডি দেবে সেটি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেজন্য সনদ অর্জন করেও ইবতেদায়ি প্রধান পদের নিবন্ধনধারীরা গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারছেন না। বিষয়টি সমাধানে একাধিকবার সভা হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান হবে--হাবিবুর রহমান, মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর
ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিবন্ধন পাওয়া প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে জুনিয়র মৌলভি, জুনিয়র শিক্ষক, ইবতেদায়ি ক্বারীদের সহকারী শিক্ষক, সহকারী মৌলভি বা প্রদর্শক নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক, সহকারী মৌলভি বা প্রদর্শক পদে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ইবতেদায়ি প্রধানদের সহকারী মৌলভি পদে অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়েছে। অন্যান্য পদে নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের সমস্যার সমাধান করলেও ইবতেদায়ি প্রধান পদের বিষয়ে তিন বছরেও কোনো সমাধান করা হয়নি। আমাদের যদি নিয়োগ না দেবে তাহলে নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হলো কেন। কষ্ট করে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পাস করেও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছি না। এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেহেতু ইবতেদায়ি প্রধান পদ এবং ইবতেদায়ি মৌলভি পদ একই যোগ্যতার, তাই ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা একই আবেদন দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চাকরি পাবে। তবে সেটি সহকারী মৌলভিতে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ১ম এবং ২য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ি প্রধান পদে চাকরি হয়েছে। এখন এটি পদোন্নতি পদ, এই পদে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ নেই। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি থেকে মন্ত্রণালয় এবতেদায়ি প্রধানকে পদোন্নতি পদ করে দিয়েছে। এজন্য তাদের ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি থেকে আর আবেদনের সুযোগ নেই। আমরা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় বলে দিয়েছি সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী কারো যোগ্যতা থাকলে তারা আবেদন করতে পারবে। নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকলে নিয়োগ দিলেও এমপিও করা যাবে না, শুধু শুধু তাদের নিয়োগ দিয়ে কোন লাভ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইবতেদায়ি প্রধানদের নিয়োগ মাদ্রাসা অধিদপ্তর দেবে নাকি গভর্নিং বডি দেবে সেটি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেজন্য সনদ অর্জন করেও ইবতেদায়ি প্রধান পদের নিবন্ধনধারীরা গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারছেন না। বিষয়টি সমাধানে একাধিকবার সভা হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে করিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) বেগম শাহনওয়াজ দিলরুবা খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইবতেদায়ি প্রধানদের বিষয়ে আমরা আমাদের মতামত প্রস্তুত করেছি। ইবতেদায়ি প্রধানদের নিয়োগ আগের প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ কমিটির মাধ্যমে হবে। যারা ইবতেদায়ি প্রধান পদের সনদ অর্জন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা শিথিল করা হয়েছে। এই মতামত শিগগিরই চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।