বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান মেলায় চ্যাম্পিয়ন তা’মীরুল মিল্লাত

  © টিডিসি ফটো

দেশের সরকারি-বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান মেলা ও সেমিনারের আয়োজন করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং মাদ্রাসায় আধুনিক বিজ্ঞান চর্চা ও উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসারে এ মেলার আয়োজন করা হয়।

এ বিজ্ঞান মেলায় দেশের ৮১টি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা ১ম স্থান অর্জন করেছে। ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রকল্প এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ফেস রিকগনিশন অ্যান্ড অটোমেটিক এটেনডেড সিস্টেম প্রকল্প বিজ্ঞান মেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে।

আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজধানীর উত্তরার তানজিমুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদ্রাসার ফায়ারবোট। আজ সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ায় শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান মেলা-২০২৩ এর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

জানা গেছে, বিজ্ঞান মেলায় তৃতীয় স্থানে আছেন ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা, এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের স্মার্ট সিটি, স্মার্ট কান্ট্রি প্রজেক্টটি মেলায় তৃতীয় স্থান অর্জন করে। চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ইলেক্ট্রিক ফর্ম প্লাস্টিক ওয়েস্টেজ এন্ড কার্বন ডাই অক্সাইড। পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে টাঙ্গাইল সদরের দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা। ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে ঠাকুরগাঁও সদরের বেগুনবাড়ী ফাযিল মাদ্রাসার মিনি এফএম ট্রান্সমিটার।

এই বিজ্ঞান মেলা ও সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান।

আলোচনা সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে শিক্ষামন্ত্রী বিজ্ঞান মেলা ঘুরে দেখেন। বিজ্ঞান মেলার প্রদর্শনী দেখে অভিভূত হয়েছেন তিনি। পরে আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান সচেতনতা দেখে আমি আনন্দিত ও উজ্জীবিত। বিজ্ঞানের পাশাপাশি সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে সচেতনতার চিত্র তাদের উপস্থাপিত প্রকল্পগুলোতে উঠে এসেছে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু নানাবিধ কথা অপেক্ষা করে মাদ্রাসা শিক্ষা এগিয়ে চলছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সাফল্যের ছাপ রাখছে। তাদের আগ্রযাত্রার একটি প্রমাণ এই বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান মেলে। শিক্ষার্থীরা অনেক সুন্দর সুন্দর প্রকল্প উপস্থাপনা করছে। এসব প্রকল্পে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে তাদের চিন্তাধারা উঠে এসেছে।

বিজ্ঞান মেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরও অনেক এগিয়ে যাবে বলে আশা করি। তাদের প্রকল্পগুলো ছিল অনেক ইনোভেটিভ এবং সুন্দর চিন্তার ফল। তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ডিফেন্স সিস্টেম দেখিয়েছে। তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা দেখিয়েছি; যা অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং মেধার স্বাক্ষর বহন করে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন। তার কন্যা তা বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রথম ধাপে ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তা তিনি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। এখন তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান বিশ্ব অনেক দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত প্রাচীন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় এই প্রতিষ্ঠান প্রাচীনকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব) দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও সেই বিপ্লবে অংশ নিতে সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে।

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষায় দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমরা তেলাওয়াত শিখি, হেফজ পড়ি কিন্তু স্পোকেন অ্যারাবিক আমরা শিখতে পারছি না। মাদরাসা শিক্ষকদের বলবো আপনারা স্পোকেন অ্যারাবিক ও ইংরেজিতে গুরুত্ব দিন। আরবি ভাষায় কথপোকথন যদি আমরা রপ্ত করতে পারি তাহলে সারা বিশ্বের কর্মক্ষেত্রে আমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। বিজ্ঞান মেলার পাশাপশি আরবি ভাষা এবং স্পোকেন অ্যারাবিকের ওপর প্রতিযোগিতা আপনারা করুন, এজন্য আমরা তাদের জন্য বিশেষ বৃত্তি ও শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ভাতা আমরা দিতে পারি।


সর্বশেষ সংবাদ