বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ, সাহিত্যমেলায় কীভাবে যাই’
বাংলাদেশে সাহিত্যিপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঢাকা লিট ফেস্টের পর্দা উঠলো। বাংলা একাডেমি চত্বরে ৮ম বারের মতো শুরু হলো এই উৎসব। সকাল ১০টায় একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এই উৎসবের উদ্বোধন করেন। যা আগামী তিন দিনব্যাপী চলবে।
অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করেছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি অগ্রাহ্য করেন। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিকদের এই মিলনমেলায় আমি কীভাবে যাই।’ এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করলে তিনি একটি শর্ত দেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে কবি জসিম উদ্দিন, চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন এবং প্রফেসর আব্দুল মতিন চৌধুরীকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভিটি এবং জ্ঞানের উপর বিশ্বাস করেন। ঠিক এমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি সব সময় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।’
লিট ফেস্ট পরিচালক সাদাফ সায্ বলেন, যেখানে বিশ্বের সব জায়গায় মুক্ত চিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে এরকম আয়োজন করতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের আয়োজনে আমরা যেসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করবো তা বিশ্বের কোথাও হয়তো একত্রে করা সম্ভব নয়। নারী ইস্যু, হ্যাশট্যাগ মি টু, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসবে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা। তিনি ঢাকা লিট ফেস্টের ধারণাটি অনেক শক্তিশালী। আমরা যা বলতে চাই, তা বলে যাওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের অপর দুই পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, আহসান আকবার, অভিনেত্রী নন্দিতা দাস এবং পুলিৎজার বিজয়ী লেখক এডাম জনসন। আয়োজক সংস্থা জানান, বরাবরের মতো দেশ-বিদেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক, অভিনেতা, রাজনীতিক, গবেষক, সাংবাদিক এ অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এ বছরের অংশগ্রহণকারীদের তালিকা বেশ ক’দিন আগেই লিট ফেস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা যায়, এ বছর বিদেশি অতিথিদের মধ্যে পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অ্যাডাম জনসন, পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও কলামিস্ট মোহাম্মদ হানিফ, ব্রিটিশ উপন্যাসিক ফিলিপ হেনশের, বুকার বিজয়ী ব্রিটিশ উপন্যাসিক জেমস মিক, ভারতীয় জনপ্রিয় লেখিকা জয়শ্রী মিশরা, লন্ডন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব রাইটিংয়ের পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক রিচার্ড বিয়ার্ড, ভারতীয় লেখিকা হিমাঞ্জলি শংকর, শিশুতোষ লেখিকা মিতালি বোস পারকিন্স, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার প্রধান হুগো রেস্টল, মার্কিন সাংবাদিক প্যাট্রিক উইন, লেখক ও সাংবাদিক নিশিদ হাজারি এবার অংশ নেবেন।
বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে থাকছেন ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে যোগ দেবেন এই আয়োজনে। কথা বলবেন বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের সঙ্গে।
এছাড়া ঢাকা লিট ফেস্টে আসছেন অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন। এবারও আসছেন নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলতে। নিজের আত্মজীবনী নিয়ে কথা বলতে আসবেন বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী মনিষা কৈরালা। আসছেন অভিনেত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট নন্দিতা দাস। কথা বলবেন নারী অধিকার, অভিনয় জীবন ও বহুল আলোচিত হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন নিয়ে।
বাংলাদেশে সাহিত্য জগতে স্বনামধন্য ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে ঘোষণা করা হবে। একইদিনে লঞ্চ করা হবে ক্যাম্প্রিজ সর্ট স্টোরি প্রাইজ।