যে ক্যাফেতে পড়তে পড়তে কাটিয়ে দিতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা
ব্যস্ততম শহর রাজধানী ঢাকা। যে কোনো কিছু করতে হলে আপনাকে টাকা প্রদান করতে হবে। এমনকি এক গ্লাস পানি খেলেও গুনতে হবে টাকা। আর শহরের এমন কোনো রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফে নেই যেখানে খাবার অর্ডার করা ছাড়া আপানাকে অবস্থান করতে দেবে। অবস্থান করলেও দিতে হবে চার্জ। তবে এই শহরে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে আপনি চাইলে সারদিন অবস্থান করতে পারবেন। পারবে পড়শোনা, গ্রুপ স্ট্যাডি, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা কিংবা সেরে নিতে পারবেন আপনার অফিসিয়াল মিটিংও। এর জন্য আপনাকে এক টাকাও চার্জ দিতে হবে। তবে আপনি চাইলে তাদের কিছু খাবারও অর্ডার দিতে পারবেন। এমনি এক ভিন্নধর্মী স্টাডি ক্যাফে চালু করেছে ‘ভাইভ ক্যাফে’।
হাতিরঝিল নির্ঝর ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে মহানগর প্রজেক্টের দুই নম্বর গেটের দিকে তাকালে যে কারো চোখে পড়বে একটি ঝলমলে হেডিং, যার ওপর আঁকা একটি ধোয়া ওঠা কফির কাপ, নিচে ইংরেজিতে লেখা- ‘ভাইভ’। ক্যাফেতে গেলে যে কারো মনে হবে- ভুল করে কোন লাইব্রেরিতে চলে এলাম না তো?
কাঁচের গেট ঠেলে ‘ভাইভ’-এ ঢুকতেই চারপাশ থেকে থেকে স্বাগত জানায় বই। ঢোকার মুখে এক পাশের দেয়ালে কাঠের বুক শেলফ, এখানে কিছু বই সাজিয়ে রখা হয়েছে সারি সারি করে। এই গ্রন্থগুলোর সঙ্গ দিচ্ছে আবার কয়েকটি মানিপ্লান্ট লতা। ঠিক এর অন্যপাশের দেয়ালে বইয়ের পৃষ্ঠা সেঁটে তার ওপর আঁকা হয়েছে একটি ধোয়া ওঠা কফির মগ। এসব ফেলে সামনে এগুলোর একপাশে দুটি ছোট টেবিল, কফি তৈরির সরঞ্জাম চোখে পড়ে।
‘ভাইভ ক্যাফে’ মূলত সফটওয়্যার লার্নিং কোম্পানি ‘এডভাইভের’ একটি প্রতিষ্ঠান। যেটা ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে কাজ করে।
স্টাডি ক্যাফে ধারণাটি পৃথিবীর অনেক দেশেই জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এই স্টাডি ক্যাফে রয়েছে। মূলত সেই দেশগুলোর ক্যাফের অনুপ্রেরণায় দেশে স্ট্যাডি ক্যাফের চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় এডভাইভ। এই ক্যাফের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ক্যাফের প্রতিটি চেয়ার অন্যান্য ক্যাফের মত নয়। বসে পড়াশোনা করার উপযোগী চেয়ারগুলোর সঙ্গে রয়েছে পড়ার টেবিল।
ভাইভ ক্যাফের যেদিকেই চোখ যায়, সবখানেই রয়েছে বই আর বাই। শেলফে সাজানো আছে দেশি-বিদেশি লেখকদের জনপ্রিয় সব গ্রন্থ। বর্তমানে প্রায় তিন শতাধিক বই রয়েছে এই স্ট্যাডি ক্যাফেতে। যে কেউ ইচ্ছে করলে এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে বই পড়ে।
ভাইভের অন্য আরেকটি কক্ষকে নাম দেয়া হয়েছে ‘সাইলেন্ট জোন’। এখানে তিনটি টেবিল রাখা হয়েছে। নিবিড়ভাবে যারা পড়তে চান, কিংবা কোন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে চান- তাদের জন্যই এ কক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অফিসের যে কোন কাজ অ্যাসাইনমেন্ট অনায়াসে শেষ করে ফেলা যায় এখানে বসেই। রয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট। শুধু তাই নয়, যদি কোন ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সেখানে।
তবে যেহেতু এটি একটি ক্যাফে, পড়াশোনা কিংবা কাজে ফাঁকে মানুষ খাবারের খোঁজ করবে, তাই সেদিকেও বেশ যত্নশীল 'ভাইভ'। এখানে পাওয়া যায় উন্নত মানের বেশ কয়েক ধরনের কফি। এগুলোর মধ্যে এসপ্রেসো ১৮০ এবং আমেরিকানো মিলবে ২০০ টাকায়। ক্যাপুচিনো রেগুলার ২৩০ এবং লার্জ পেতে খরচ করতে হবে ৩৩০ টাকা।
অন্যান্য পানীয়ের মধ্যে মিলো ও মিল্কসেক ২৫০, এপ্রিকট ও স্ট্রবেরি জুস ২২০ এবং ব্লুবেরি জুস পাওয়া যাবে ৩৮০ টাকায়। ডেজার্ট হিসেবে রয়েছে আইসক্রিম এবং ওয়াফেল, দাম ১২০ থেকে ২৫০ এর মধ্যে। এসব খাবারের বাইরে কেউ চাইলে 'এডভাইভ' সফটওয়্যারের পরিষেবাও কিনতে পারবে। এছাড়া এখানে রাখা বইগুলোর কোন একটি ভালো লাগলে অনায়াসে কিনে নেওয়া যাবে সেটি।
নতুন এই উদ্যে কেমন সাড়া পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মেরাজুল কারিম বলেন, বেশ ভালই সাড়া পাচ্ছি। আমাদের যে এরিয়া তার আশপাশেই রয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট, আহসানুল্লাহ, সাউথইস্ট, বুটেক্স’র মত ক্যাম্পাস। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন একটি জায়গা খোঁজেন যেখানে তারা নিজেদের মত করে পড়াশোনা করতে পারে। এ বার্তা আমরা তাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। এই ক্যাম্পসগুলোর শিক্ষার্থীরা এখানে আসছে, আড্ডা দিচ্ছে, গ্রুপ স্টাডি করছে। অনেকে আবার তাদের প্রজেক্টের কাজও করছেন।
ঢাকায় মানুষের অবসর যাপনের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান হাতিরঝিল। তবে মানুষের আনাগোনা বেশি থাকে মূলত সন্ধ্যার পর। ‘ভাইভ’ এর ক্ষেত্রেও তাই। একমাসও হয়নি কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবুও সন্ধ্যার পর এখানে বেশ ভীড় লেগে যায়। ভাইভ নিয়ে আগত মানুষের উচ্ছ্বাসও চোখে পড়ার মতো। সকলেই স্বীকার করছেন, এমন উদ্যোগ কোথাও দেখেন নি।
মেরাজুল কারিম বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত ভাইভ ক্যাফে থেকে কোনো ব্যবসার উদ্দেশ্য নেই। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষকে একটি শেখার পরিবেশ দেওয়া।