১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২৩

‘আজিমপুরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দূর গাঁয়ের ভেতরে হারিয়ে যেতাম’

  © সংগৃহীত

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ‘একুশের গল্প’। চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান তাঁর লেখনিতে তুলে ধরছেন ভাষা আন্দোলনের কিছু চিত্র। ভাষার জন্য ছাত্ররা যে কি ত্যাগ স্বীকার করেছে তা তুলে ধরেছেন তাঁর এ ছোট গল্পে। গল্পে মূলত ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থীদের ওই সময়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া গল্পের মধ্যে পুরান ঢাকার কিছু স্থানকে তুলে ধরেছন যা বর্তমান সময়ে রূপকথার গল্পের মত মনে হয়। আজকে জাহির রায়হানের সেই বিখ্যাত ছোট গল্প ‘একুশের গল্প’ তুলে ধরা হলো- 

তপুকে আবার ফিরে পাব, এ কথা ভুলেও ভাবিনি কোনো দিন। তবু সে আবার ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। ভাবতে অবাক লাগে, চার বছর আগে যাকে হাইকোর্টের মোড়ে শেষবারের মতো দেখেছিলাম, যাকে জীবনে আর দেখব বলে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি—সেই তপু ফিরে এসেছে। ও ফিরে আসার পর থেকে আমরা সবাই যেন কেমন একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। রাতে ভালো ঘুম হয় না। যদিও একটু-আধটু তন্দ্রা আসে, তবু অন্ধকারে হঠাৎ ওর দিকে চোখ পড়লে গা-হাত-পা শিউরে ওঠে। ভয়ে জড়সড় হয়ে যাই, লেপের নিচে দেহটা ঠকঠক করে কাঁপে।

দিনের বেলা ওকে ঘিরে আমরা ছোটখাটো জটলা পাকাই।

খবর পেয়ে অনেকেই দেখতে আসে ওকে। অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা। আমরা যে অবাক হই না, তা নয়। আমাদের চোখেও বিস্ময় জাগে। দু বছর ও আমাদের সাথে ছিল। ওর শ্বাসপ্রশ্বাসের খবরও আমরা রাখতাম। সত্যি, কী অবাক কাণ্ড দেখো তো, কে বলবে যে এ তপু! ওকে চেনাই যায় না। ওর মাকে ডাকো, আমি হলফ করে বলতে পারি, ওর মা-ও চিনতে পারবে না ওকে।

চিনবে কী করে? জটলার এক পাশ থেকে রাহাত বিজ্ঞের মতো বলে, চেনার কোনো উপায় থাকলে তো চিনবে। এ অবস্থায় কেউ কাউকে চিনতে পারে না। বলে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমরাও কেমন যেন আনমনা হয়ে পড়ি ক্ষণিকের জন্য।

অনেক কষ্টে ঠিকানা জোগাড় করে কাল সকালে রাহাতকে পাঠিয়েছিলাম তপুর মা আর বউকে খবর দেবার জন্য।

সারা দিন এখানে–সেখানে পইপই করে ঘুরে বিকেলে যখন রাহাত ফিরে এসে খবর দিল, ওদের কাউকে পাওয়া যায়নি, তখন রীতিমতো ভাবনায় পড়লাম আমরা। এখন কী করা যায় বলো তো, ওদের একজনকেও পাওয়া গেল না? আমি চোখ তুলে তাকালাম রাহাতের দিকে।

বিছানার ওপর ধপাস করে বসে পড়ে রাহাত বলল, ওর মা মারা গেছে।

মারা গেছে? আহা, সেবার এখানে গড়াগড়ি দিয়ে কী কান্নাটাই না তপুর জন্য কেঁদেছিলেন তিনি। ওঁর কান্না দেখে আমার নিজের চোখেই পানি এসে গিয়েছিল।

বউটার খবর?

ওর কথা বোলো না আর। রাহাত মুখ বাঁকাল। অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে করেছে।

সেকি! এর মধ্যেই বিয়ে করে ফেলল মেয়েটা? তপু ওকে কত ভালোবাসত! নাজিম বিড়বিড় করে উঠল চাপা স্বরে।

সানু বলল, বিয়ে করবে না তো কি সারা জীবন বিধবা হয়ে থাকবে নাকি মেয়েটা? বলে তপুর দিকে তাকাল সানু।

আমরাও দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলাম ওর ওপর। সত্যি, কে বলবে এ চার বছর আগেকার সেই তপু, যার মুখে একঝলক হাসি আঠার মতো লেগে থাকত সব সময়।

কী হাসতেই না পারত তপুটা! হাসি দিয়ে ঘরটাকে ভরিয়ে রাখত সে। সে হাসি কোথায় গেল তপুর? আজ তার দিকে তাকাতে ভয়ে আমার রক্ত হিম হয়ে আসে কেন?

দু-বছর সে আমাদের সাথে ছিল।

আমরা ছিলাম তিনজন।

আমি, তপু আর রাহাত।

তপু ছিল আমাদের মাঝে সবার চাইতে বয়সে ছোট। কিন্তু বয়সে ছোট হলে কী হবে, ও-ই ছিল একমাত্র বিবাহিত।

কলেজে ভর্তি হবার বছরখানেক পরে রেণুকে বিয়ে করে তপু। সম্পর্কে মেয়েটা আত্মীয়া হতো ওর। দোহারা গড়ন, ছিপছিপে কটি, আপেল রঙের মেয়েটা প্রায়ই ওর সাথে দেখা করতে আসত এখানে। ও এলে আমরা চাঁদা তুলে চা আর মিষ্টি এনে খেতাম। আর গল্পগুজবে মেতে উঠতাম রীতিমতো। তপু ছিল গল্পের রাজা। যেমন হাসতে পারত ছেলেটা, তেমনি গল্প করার ব্যাপারেও ছিল ওস্তাদ।

যখন ও গল্প করতে শুরু করত, তখন আর কাউকে কথা বলার সুযোগ দিত না। সেই যে লোকটার কথা তোমাদের বলছিলাম না সেদিন, সেই হোঁতকা মোটা লোকটা, ক্যাপিটালে যার সাথে আলাপ হয়েছিল, ওই যে, লোকটা বলছিল সে বার্নার্ড শ হবে, পরশু রাতে মারা গেছে একটা ছ্যাকরা গাড়ির তলায় পড়ে।…আর সেই মেয়েটা, যে ওকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিল…ও মারা যাবার পরের দিন বিলেতি সাহেবের সাথে পালিয়ে গেছে…রুণী মেয়েটার খবর জানো তো! সেকি, রুণীকে চিনতে পারছ না? শহরের সেরা নাচিয়ে ছিল, আজকাল অবশ্য রাজনীতি করছে। সেদিন দেখা হলো রাস্তায়। আগে তো পাটকাঠি ছিল। এখন বেশ মোটাসোটা হয়েছে। দেখা হতেই রেস্তোরাঁয় নিয়ে খাওয়াল। বিয়ে করেছি শুনে জিজ্ঞেস করল, বউ দেখতে কেমন?

হয়েছে, এবার তুমি এসো। উহ্‌, কথা বলতে শুরু করলে যেন আর ফুরাতে চায় না; রাহাত থামিয়ে দিতে চেষ্টা করত ওকে।

রেণু বলত, আর বলবেন না, এত বকতে পারে—

বলে বিরক্তিতে না লজ্জায় লাল হয়ে উঠত সে।

তবু থামত না তপু। একগাল হাসি ছড়িয়ে আবার পরম্পরাহীন কথার তুবড়ি ছোটাত সে, থাক গে, অন্যের কথা যখন তোমরা শুনতে চাও না, নিজের কথাই বলি। ভাবছি, ডাক্তারিটা পাস করতে পারলে এ শহরে আর থাকব না, গাঁয়ে চলে যাব। ছোট্ট একটা ঘর বাঁধব সেখানে।

আর তোমরা দেখো, আমার ঘরে কোনো জাঁকজমক থাকবে না। একেবারে সাধারণ, হ্যাঁ, একটা ছোট্ট ডিসপেনসারি, আর কিছু না। মাঝে মাঝে এমনি স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত ছিল তপু।

এককালে মিলিটারিতে যাবার শখ ছিল ওর!

কিন্তু বরাত মন্দ। ছিল জন্মখোঁড়া। ডান পা থেকে বাঁ পা’টা ইঞ্চি দুয়েক ছোট ছিল ওর। তবে বাঁ জুতার হিলটা একটু উঁচু করে তৈরি করায় দূর থেকে ওর খুঁড়িয়ে চলাটা চোখে পড়ত না সবার।

আমাদের জীবনটা ছিল যান্ত্রিক।

কাকডাকা ভোরে বিছানা ছেড়ে উঠতাম আমরা। তপু উঠত সবার আগে। ও জাগাত আমাদের দুজনকে, ওঠো, ভোর হয়ে গেছে, দেখছ না? অমন মোষের মতো ঘুমাচ্ছ কেন, ওঠো। গায়ের ওপর থেকে লেপটা টেনে ফেলে দিয়ে জোর করে আমাদের ঘুম ভাঙাত তপু। মাথার কাছের জানালাটা খুলে দিয়ে বলত, দেখো, বাইরে কেমন মিষ্টি রোদ উঠেছে। আর ঘুমিয়ো না, ওঠো।

আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে, নিজ হাতে চা তৈরি করত তপু।

চায়ের পেয়ালায় শেষ চুমুক দিয়ে আমরা বই খুলে বসতাম। তারপর দশটা নাগাদ স্নানাহার সেরে ক্লাসে যেতাম আমরা।

বিকেলটা কাটত বেশ আমোদ-ফুর্তিতে। কোনো দিন ইস্কাটনে বেড়াতে যেতাম আমরা, কোনো দিন বুড়িগঙ্গার ওপারে। আর যেদিন রেণু আমাদের সাথে থাকত, সেদিন আজিমপুরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দূর গাঁয়ের ভেতরে হারিয়ে যেতাম আমরা।

রেণু মাঝে মাঝে আমাদের জন্য ডালমুট ভেজে আনত বাসা থেকে। গেঁয়ো পথে হাঁটতে হাঁটতে মুড়মুড় করে ডালমুট চিবাতাম আমরা। তপু বলত, দেখো রাহাত, আমার মাঝে মাঝে কী মনে হয়, জানো?

কী?

এই যে আঁকাবাঁকা লালমাটির পথ, এ পথের যদি শেষ না হতো কোনো দিন। অনন্তকাল ধরে যদি এমনি চলতে পারতাম আমরা।

একি, তুমি আবার কবি হলে কবে থেকে? ভ্রু জোড়া কুঁচকে হঠাৎ প্রশ্ন করত রাহাত।

না না, কবি হতে যাব কেন? ইতস্তত করে বলত তপু। কেন যেন মনে হয়…। স্বপ্নালু চোখে স্বপ্ন নামত তার।

আমরা ছিলাম তিনজন।

আমি, তপু আর রাহাত।

দিনগুলো বেশ কাটছিল আমাদের। কিন্তু অকস্মাৎ ছেদ পড়ল। হোস্টেলের বাইরে, সবুজ ছড়ানো মাঠটাতে অগুনতি লোকের ভিড় জমেছিল সেদিন। ভোর হতে ক্রুদ্ধ ছেলেবুড়োরা এসে জমায়েত হয়েছিল সেখানে। কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে স্লোগান দেবার চুঙ্গো, আবার কারও হাতে লম্বা লাঠিটায় ঝোলানো কয়েকটা রক্তাক্ত জামা। তর্জনী দিয়ে ওরা জামাগুলো দেখাচ্ছিল, আর শুকনো ঠোঁট নেড়ে নেড়ে এলোমেলো কী যেন বলছিল নিজেদের মধ্যে।

তপু হাত ধরে টান দিল আমার, এসো।

কোথায়?

কেন, ওদের সাথে।

চেয়ে দেখি, সমুদ্রগভীর জনতা ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে।

এসো।

চলো।

আমরা মিছিলে পা বাড়ালাম।

একটু পরে পেছন ফিরে দেখি, রেণু হাঁপাতে হাঁপাতে আমাদের দিকে ছুটে আসছে। যা ভেবেছিলাম, দৌড়ে এসে তপুর হাত চেপে ধরল রেণু। কোথায় যাচ্ছ তুমি? বাড়ি চলো।

পাগল নাকি, তপু হাতটা ছাড়িয়ে নিল। তারপর বলল, তুমিও চলো না আমাদের সাথে।

না, আমি যাব না, বাড়ি চলো। রেণু আবার হাত ধরল ওর।

কী বাজে বকছেন! রাহান রেগে উঠল এবার। বাড়ি যেতে হয় আপনি যান। ও যাবে না।

মুখটা ঘুরিয়ে রাহাতের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে একপলক তাকাল রেণু। তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, দোহাই তোমার, বাড়ি চলো। মা কাঁদছেন।

বললাম তো, যেতে পারব না, যাও। হাতটা আবার ছাড়িয়ে নিল তপু।

রেণুর করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো। বললাম, কী ব্যাপার, আপনি এমন করছেন কেন, ভয়ের কিছু নেই, আপনি বাড়ি যান।

কিছুক্ষণ ইতস্তত করে টলটলে চোখ নিয়ে ফিরে গেল রেণু।

মিছিল তখন মেডিকেলের গেট পেরিয়ে কার্জন হলের কাছাকাছি এসে গেছে। তিনজন আমরা পাশাপাশি হাঁটছিলাম।

রাহাত স্লোগান দিচ্ছিল।

আর তপুর হাতে ছিল একটি মস্ত প্ল্যাকার্ড। তার ওপর লাল কালিতে লেখা ছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

মিছিলটা হাইকোর্টের মোড়ে পৌঁছাতে অকস্মাৎ আমাদের সামনের লোকগুলো চিৎকার করে পালাতে লাগল চারপাশে। ব্যাপার কী বুঝবার আগেই চেয়ে দেখি, প্ল্যাকার্ডসহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তপু। কপালের ঠিক মাঝখানটায় গোল একটা গর্ত। আর সে গর্ত দিয়ে নির্ঝরের মতো রক্ত ঝরছে তার।

তপু! রাহাত আর্তনাদ করে উঠল।

আমি তখন বিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম।

দুজন মিলিটারি ছুটে এসে তপুর মৃতদেহ তুলে নিয়ে গেল আমাদের সামনে থেকে। আমরা এতটুকুও নড়লাম না, বাধা দিতে পারলাম না। দেহটা যেন বরফের মতো জমে গিয়েছিল, তারপর আমিও ফিরে আসতে আসতে চিৎকার করে উঠলাম, রাহাত পালাও।

কোথায়? হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল রাহাত।

তারপর উভয়েই ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিলাম আমরা ইউনিভার্সিটির দিকে। সে রাতে তপুর মা এসে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিলেন এখানে। রেণুও এসেছিল, পলকহীন চোখ জোড়া দিয়ে অশ্রুর ফোয়ারা নেমেছিল তার। কিন্তু আমাদের দিকে একবারও তাকায়নি সে। একটা কথাও আমাদের সাথে বলেনি রেণু। রাহাত শুধু আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলেছিল, তপু না মরে আমি মরলেই ভালো হতো। কী অবাক কাণ্ড দেখো তো, পাশাপাশি ছিলাম আমরা। অথচ আমাদের কিছু হলো না, গুলি লাগল কিনা তপুর কপালে। কী অবাক কাণ্ড দেখো তো।

তারপর চারটে বছর কেটে গেছে। চার বছর পর তপুকে ফিরে পাব, এ কথা ভুলেও ভাবিনি কোনো দিন।

তপু মারা যাবার পর রেণু এসে একদিন মালপত্রগুলো সব নিয়ে গেল ওর। দুটো স্যুটকেস, একটা বইয়ের ট্রাংক আর একটা বেডিং। সেদিনও মুখ ভার করে ছিল রেণু। কথা বলেনি আমাদের সাথে। শুধু রাহাতের দিকে একপলক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ওর একটা গরম কোট ছিল না, কোটটা কোথায়?

ও, ওটা আমার স্যুটকেসে। ধীরে কোটটা বের করে দিয়েছিল রাহাত। এরপর দিন কয়েক তপুর সিটটা খালি পড়ে ছিল। মাঝে মাঝে রাত শেষ হয়ে এলে আমাদের মনে হতো, কে যেন গায়ে হাত দিয়ে ডাকছে আমাদের।

ওঠো, আর ঘুমিয়ো না, ওঠো।

চোখ মেলে কাউকে দেখতে পেতাম না, শুধু ওর শূন্য বিছানার দিকে তাকিয়ে মনটা ব্যথায় ভরে উঠত। তারপর একদিন তপুর সিটে নতুন ছেলে এল একটা। সে ছেলেটা বছর তিনেক ছিল।

তারপর এল আরেকজন। আমাদের নতুন রুমমেট, বেশ হাসিখুশিভরা মুখ।

সেদিন সকালে বিছানায় বসে ‘অ্যানাটমি’র পাতা ওলটাচ্ছিল সে। তার চৌকির নিচে একটা ঝুড়িতে রাখা ‘স্কেলিটনের স্কাল’টা বের করে দেখছিল আর বইয়ের সাথে মিলিয়ে পড়ছিল সে। তারপর একসময় হঠাৎ রাহাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, রাহাত সাহেব, একটু দেখুন তো, আমার স্কালের কপালের মাঝখানটায় একটা গর্ত কেন?

কী বললে? চমকে উঠে উভয়েই তাকালাম ওর দিকে।

রাহাত উঠে গিয়ে স্কালটা তুলে নিল হাতে। ঝুঁকে পড়ে সে দেখতে লাগল অবাক হয়ে। হ্যাঁ, কপালের মাঝখানটায় গোল একটা ফুটো, রাহাত তাকাল আমার দিকে, ওর চোখের ভাষা বুঝতে ভুল হলো না আমার। বিড়বিড় করে বললাম, বাঁ পায়ের হাড়টা দুই ইঞ্চি ছোট ছিল ওর।

কথাটা শেষ না হতেই ঝুড়ি থেকে হাড়গুলো তুলে নিল রাহাত। হাতজোড়া ঠকঠক করে কাঁপছিল ওর। একটু পরে উত্তেজিত গলায় চিৎকার করে বলল, বাঁ পায়ের টিবিয়া ফেবুলাটা দুই ইঞ্চি ছোট। দেখো, দেখো।

উত্তেজনায় আমিও কাঁপছিলাম।

ক্ষণকাল পরে স্কালটা দুহাতে তুলে ধরে রাহাত বলল, তপু।

বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এল ওর।