২৪ জুন ২০১৮, ২১:৩০

শিল্প-সাহিত্যের ডিজিটালাইজেশন

রাজু আলীম: বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল বিপ্লবের প্রভাবে আমাদের শিল্প-সাহিত্য বই ও পত্রিকার পাতা থেকে উন্নীত হয়ে খুঁজে পেয়েছে নতুন ঠিকানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। সাহিত্যের আদিকাল সেই চর্যাপদ থেকে মধ্যযুগের শিল্প-সাহিত্যের কোনো কিছু পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে এক ক্লিকেই পেয়ে যাবেন যে কেউ। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে গেল এক-দেড় দশকে শিল্প-সাহিত্যের এই রূপান্তর ঘটেছে। বাংলায় গুগলে, ইউটিউবে, ফেসবুকে এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাচ দিয়ে শিল্প-সাহিত্যের অনেক দরকারি কিছু এখন পাওয়া যায়। এতে বাংলা শিল্প-সাহিত্যের চর্চার পথ আরও প্রশস্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। বাংলা ভাষাভাষি কিংবা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী যে কেউ এখন আরও বেশি বেশি গবেষণা এবং চর্চা করতে পারছেন সাহিত্যের এই ডিজিটাল রূপান্তরে।

শুধু শিল্প-সাহিত্যের লিখিত কনটেন্ট কবিতা গল্প উপন্যাস চিত্রকলাই নয়, এর সাথে সাথে ইলেক্ট্রনাইজেশনের ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে গান, নাটক, কবিতা আর চলচ্চিত্রসহ সাহিত্যনির্ভর নানা তথ্যচিত্র। এর ফলে বাংলা শিল্প সাহিত্যের কালজয়ী সৃষ্টিকর্মগুলো ছড়িয়ে পড়ছে দুনিয়াব্যাপী। কিন্তু আমাদের শিল্প-সাহিত্যের অমর সৃষ্টিকর্মগুলো নিয়ে চলচ্চিত্র এবং ভিডিও নির্মাণের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে, তাহলে এই সৃষ্টিকর্মগুলো আরও হাজার বছর টিকে থাকবে। কারণ সময়ের পরিবর্তনে বদলেছে মানুষের পড়াশোনা, রুচি এবং জীবনযাপন প্রণালি। মানুষ আর এখন আগের মতো বই পড়তে চায় না। তারা এখন চায় সবকিছু নিজের চোখে দেখতে এবং নিজের কানে শুনতে। আর এই কারণে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিল্প-সাহিত্যের চাহিদা বেড়ে চলেছে ক্রমান্বয়ে। যেমন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালি চলচ্চিত্র নির্মাণের ফলে এর প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে বহু গুণ এবং তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ার কারণে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে তা দেখছে মানুষ। তবে সাহিত্যের ডিজিটাল রূপান্তরে আমরা এখনও আছি প্রাথমিক স্তরে। আমাদের শিল্প-সাহিত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিকর্মগুলো এখনও রয়েছে ইলেক্ট্রনাইজেশনের বাইরে। যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি দুর্গেশ নন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বৃষবিক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল-এর মতো অসাধারণ উপন্যাসগুলো নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি। কিন্তু অন্যদিকে আশার ব্যাপার হলো- এই অমর শিল্পকর্মগুলো ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে বুক শপে। সেখান থেকে পাঠ্য আকারে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। তবে এসব ক্ষেত্রে আরও কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এই জায়গায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টিকর্ম। তার সৃষ্টি সাহিত্যকর্ম এবং চরিত্র নির্ভর করে নির্মিত হয়েছে পথের পাঁচালি, অপরাজিতা, অপুর সংসার, নিশিপদ্ম, বাক্স বদল, নিমন্ত্রণ, অমর প্রেম, অশনি সংকেত, আলো, চাঁদের পাহাড়, সহজ পাঠের গপ্পো এবং আমাজান অভিযান-এর মতো চলচ্চিত্র। তাই বিভূতিভূষণের সাহিত্যের এই ডিজিটাল ভার্সন ছড়িয়ে পড়েছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে বিশ্বমানব দরবারে। এছাড়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস, মেজদিদি, পরিণীতা, ডেব. ডি, দেনা পাওনা, শ্রীকান্ত, স্বামী, মেজদি, খুশবু, বিরাজ বৌ, শুভদা, চরিত্রহীনসহ অসংখ্য চলচ্চিত্র এবং চরিত্রনির্ভর সাহিত্যকর্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে পৌঁছে গেছে নতুন প্রজন্মের বিশ্ব বাঙালি সম্প্রদায়ের দরজায়। আর তাই শরৎচন্দ্রের এই ইলেক্ট্রনিক সাহিত্যের স্বাদ উপভোগ করছে এই প্রজন্মের বিশ্ব বাঙালি ঘরে বসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেনা পাওনা, চিরকুমার সভা, নৌকাডুবি, চোখের বালি, গোরা, চিত্রাঙ্গদা, কাবুলিওয়ালা, ক্ষুধিত পাষাণ, চারুলতা, শাস্তি, বিসর্জন এবং ঘরে বাইরে-সহ অসংখ্য সৃষ্টিকর্ম সেলুলয়েডে বন্দী হয়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৌঁছে গেছে সারা দুনিয়ার কাছে। তাই সাহিত্যের এই ডিজিটালাইজেশনের ফলে সাহিত্যের সার্বজনীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও বেশি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি পদ্মা নদীর মাঝি সেলুলয়েডে বন্দী হয়ে ইন্টারনেটে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে না পড়লে তা কি এতটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতো? মানিকের জাগো হুয়া সাভেরা, কলকাতা ৭১ এবং শিল্পী এখনও দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ইন্টারনেটে অনলাইনে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

হাল আমলে হুমায়ূন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, সেলিনা হোসেন, হাসান আজিজুল হক ও রাবেয়া খাতুনসহ প্রমুখ সাহিত্যিকদের রচনা, তাদের সাহিত্যনির্ভর সিনেমা নাটক ডিজিটাল দুনিয়া তোলপাড় করে চলেছে। এই সব সাহিত্যিকদের অধিকাংশ রচনাই পাওয়া যায় অনলাইন দুনিয়ায়, সেখান থেকে পাঠকরা অনায়াসেই লাভ করেন তাদের সাহিত্যের স্বাদ। হুমায়ূন আহমেদের শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্র কথা, শ্রামল ছায়া, দূরত্ব, নন্দিত নরকে, নিরন্তর, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, দারুচিনি দ্বীপ, প্রিয়তমেসু ও ঘেঁটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্র এবং তার নাটক এই সব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, অয়োময়, আজ রবিবার এবং নিমফুল নাটকগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে দখল করে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত বিশ্ব বাঙালির হৃদয়। প্রযুক্তির বিকাশে ডিজিটাল মাধ্যমে এই সৃষ্টিকর্মগুলো ছড়িয়ে না গেলে তা এত মানুষের কাছে পৌঁছাত কি না- তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে? প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের সাহিত্য অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র মধুমতি, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, মেঘের পরে মেঘ এবং তার লেখা অসংখ্য নাটক, গল্প উপন্যাসের অধিকাংশই পাওয়া যাচ্ছে ডিজিটাল ভার্সনে অনলাইন দুনিয়ায়। সেলিনা হোসেনের পোকা মাকড়ের ঘরবসতি এবং হাঙ্গর নদী গ্রেনেড চলচ্চিত্র এবং তার উপন্যাস, নাটক, গল্পও অনলাইনে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে পৌঁছে গেছে আধুনিক সাহিত্যপ্রিয় বাঙালির কাছে। হাসান আজিজুল হকের লেখা, সৈয়দ শামসুল হকের লেখা গান ও কবিতা আর শামসুর রাহমানের কবিতা এবং গান ডিজিটাল দুনিয়ায় পাওয়া যায় অনায়াসে এক ক্লিকে। এখন আর গান শুধু শোনার জিনিস নয়। এটি এখন এক সাথে শোনার এবং দেখার। তাই মিউজিক ভিডিও ধারণ এখন খুবই জরুরি বিষয়। আর নান্দনিকতায় ভরপুর এসব মিউজিক ভিডিও অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। তাই ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে গানের ভিডিও রিলিজ হচ্ছে প্রতিদিন এবং তা খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তা লাভ করে পৌঁছে যাচ্ছে সবার কাছে। শুধু বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে বিশ্ব সাহিত্যের জনপ্রিয় সৃষ্টিকর্মগুলো আমরা পেয়ে যাচ্ছি খুব দ্রুত ডিজিটাল ইন্টারনেট মাধ্যম দিয়ে। জে কে রাওলিং-এর তুমুল জনপ্রিয় হ্যারিপটার সিরিজ এখন ঘরে বসেই উপভোগ করে সব বয়েসি বিশ্বের মানুষ। এটি সম্ভব হয়েছে সাহিত্যের এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কারণে। আরেকটি মুভি অ্যাভাটার ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি আমেরিকান সায়েন্স ফিকশান ছবি। এই সিনেমাটিও এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে সারা দুনিয়ার মানুষের ড্রয়িংরুমে।

প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক জেমস ক্যামেরন ছবিটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন। এ ছবির মুখ্য চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন স্যাম ওয়ার্থিংটন, জো সালডানা, স্টিফেন লাং, মিশেল রড্রিগেজ, জোয়েল ডেভিড মুর, জিওভান্নি রিবিসি এবং সিগুর্নি উইভার। ছবির পটভ‚মি ২২০০ শতাব্দীর মধ্যভাগ, যখন মানুষ আলফা সেনটাউরি তারকামণ্ডলের একটি গ্যাসিয় গ্রহের মনুষ্যবসত উপযোগী উর্বর উপগ্রহ প্যানডোরায় আনঅবটেনিয়াম নামক একটি মূল্যবান খনিজ আহরণের জন্য খননকাজ শুরু করে। খনিজ উপনিবেশ এলাকার ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে এ উপগ্রহের স্থানীয় অধিবাসী নাভিদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে; প্যানডোরা উপগ্রহের আদিবাসী এই নাভিরা অনেকটা মানুষের মতো দেখতে। প্যানডোরার এই আদিবাসীদের সাথে যোগাযোগের জন্য একদল গবেষক জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড নাভি ও মানুষের সংকর দেহ ব্যবহার করেন, যা এই চলচ্চিত্রের নাম। অ্যাভাটার চলচ্চিত্রটির পটভূমি তৈরি হয়েছে একদল লোভী মানুষ আর নিরীহ প্যানডোরাবাসীর মধ্যে এক অসম আর সাহসি যুদ্ধ নিয়ে। কাহিনির সূত্রপাত ২১৫৪ সালে, যখন আর.ডি.এ আনঅবটেনিয়ামের খোঁজে প্যানডোরা নামক পৃথিবীর মতো এক গ্রহে গিয়ে হাজির হয়। যার আবহাওয়া মানুষের নিঃশ্বাস নেবার উপযোগী নয়। এই গ্রহের অধিবাসীদের বলা হয় নাভি। নাভিরা তাদের গ্রহে খুব আনন্দেই বসবাস করছিল যতদিন পর্যন্ত না মানুষের অসাধু ইচ্ছে প্রকাশিত না হয়। নাভিদের পরিবেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য বিজ্ঞানীরা নাভিদের মতো দেখতে কিছু দেহ তৈরি করলেন, যা কি না যন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মানুষ এখন প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই উপভোগ করতে পারে এমন সুন্দর সুন্দর চলচ্চিত্র। বিউটি অ্যান্ড দ্যা বিস্ট বিল কনডন পরিচালিত সিনেমা। এক যাদুকরের ছলনায় পড়ে রাজপুত্রের পশু হয়ে যাওয়া, সেই পশুর রাজপ্রাসাদে বেলে নামের এক মেয়ের বাবার আটকেপড়া, তাকে ছাড়িয়ে আনতে সেই রাজপ্রাসাদে পশুটির সঙ্গে বেলের অবস্থান, ঘটনাক্রমে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে পশুটিকে পুনরায় মানুষে পরিণত করা এই সিনেমাটি এখন ডিজিটাল দুনিয়ায় আমরা পেয়ে যাচ্ছি অনায়াসেই। ছোট-বড় সবার কাছেই ডিজিটাল প্রযুক্ত পৌঁছে দিয়েছি বিখ্যাত এই চলচ্চিত্রটি। দ্যা টারমিনেটর ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এক আমেরিকান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক চলচ্চিত্র। পরিচালনায় ছিলেন জেমস ক্যামেরন, ছায়াছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ক্যামেরন নিজেই। ছবিটির অর্থায়ন করেছিলেন গেল অ্যান হার্ড। অভিনয়ে ছিলেন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, মাইকেল বেইন এবং লিন্ডা হ্যামিলটন। টারমিনেটর সিরিজের প্রথম মুভি এটি। সচল চিত্র ধারণ করা হয়েছিল লস অ্যাঞ্জেলেসে। ছবিটি নির্মাণ করেছিল হেমডেল ফিল্ম কর্পোরেশন, প্রচারে ছিল ওরিওন পিকচারস। শোয়ার্জনেগার এখানে টারমিনেটরের ভ‚মিকায় অভিনয় করেন, ছবিটিতে তিনি ছিলেন একজন সাইবর্গ আততায়ী।

২০২৯ সাল থেকে তাকে অতীতে ১৯৮৪ পাঠানো হয়েছিল ছোট্ট একটা দায়িত্ব দিয়ে। সারা কনরকে হত্যা করতে হবে তাকে। সারা কনরের অভিনয়ে ছিলেন হ্যামিলটন, যার ছেলে একদিন যন্ত্রশক্তিদের বিরুদ্ধে মানবসমাজকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে। বিয়েন এখানে আইল রিজের ভ‚মিকাতে অভিনয় করেন, ভবিষ্যৎ থেকে অতীতে পাঠানো একজন সৈনিক সে। তার মিশন, সারা কনরকে রক্ষা করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমাটি নিয়ে মুক্তির পরই ঝড় উঠেছে, এখনও চলছে তা।

পৃথিবীর নানা প্রান্তের এত ভালো ভালো মুভি ডিজিটাল ইন্টারনেট প্ল্যাটফরম না থাকলে কোথায় পেতাম আমরা? বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিজ্ঞাপন দুনিয়ার শুরু থেকে এখনকার জনপ্রিয় নানা সৃষ্টিশীল বিজ্ঞাপন, মেকিং কনসেপ্ট, নেপথ্যের গল্পের অনেক কিছুই সহজেই পাওয়া যায় ইন্টারনেটে ইউটিউবে ফেসবুকে। ফেসবুকে বা ইউটিউবে পুরনো দিনের সেই সব মনকাড়া বিজ্ঞাপনে যে কোনো মানুষের মন হারিয়ে যায় পুরনো দিনের টিভির পর্দায় সবাই মিলে নাটক, সিনেমা, গান, কবিতা আর ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখার ফাঁকে ফাঁকে বিরতিতে সৃজনশীল সব বিজ্ঞাপন। সেই হারানো দিন, হারানো সময়, হারানো শিল্প-সাহিত্য নতুন সময়ের সাথে ফিরিয়ে আনছে আমাদের কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তি আর ইন্টারনেট মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার তাই নতুন করে শিল্প-সাহিত্যকে ডিজিটালাইজড করে তুলে ধরছে বিশ্ববাসীর সামনে। এমন একসময় আসতে পারে পৃথিবীতে যেদিন হয়তো আর এই প্রচলিত বই পুস্তক থাকবে না। বই পুস্তক সব পাওয়া যাবে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। সেই স্থান দখল করে নিতে শুরু করেছে দিনে দিনে ডিজিটাল মাধ্যম আর অনলাইনের দুনিয়া। ডিজিটাল ভার্সনের বই পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে তরুণ প্রজন্মের পাঠকরা। তাই প্রকাশকরাও তাদের প্রকাশিত সমস্ত বইয়ের ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগিয়ে চলেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এমনি করে দৈনিক প্রকাশিত সংবাদপত্র থেকে শুরু করে ম্যাগাজিন এবং প্রকাশিত জার্নালগুলোও ঢুকে পড়ছে ডিজিটাল ফরমেটে অনলাইনের দুনিয়ায়। ই-টিকেটিং সিস্টেমে বিমান, রেলওয়ে এবং বাসের টিকিট কেনাকাটা, ঈদ শপিংসহ দৈনন্দিন কোনাকাটা হচ্ছে সহজেই ঘরে বসে। অনলাইনে অর্ডার করলে নিমিষেই পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে আপনার ড্রয়িংরুমে। আর এভাবেই ডিজিটাল মিডিয়া দখল করছে মানুষের মন থেকে শুরু করে তার ঘরের চারপাশ। এর সাথে অফিস, আদালত, কর্পোরেট দুনিয়া হয়ে উঠছে পেপার লেস। আগের মতো লেজারশিট মেইনটেইন করে অফিস চালানোর মন-মানষিকতা নেই এখন আর কারও। অফিস, ফ্যাক্টরি, কারখানার কাজ সব ঢুকে পড়ছে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, অনলাইন আর ই-কমার্সের জগতে। ইন্টারনেটের জাল বেয়ে মানুষ নিজের ঘরে বসে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা দুনিয়ায়। এভাবেই সময়ের পরিবতর্নে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম তার ইরেজ মিডিয়া দুর্দাম ঘুচিয়ে দুর্বার গতিতে ইরেজ করে দিচ্ছে পৃথিবীর তাবৎ গ্রন্থ আর বইয়ের ইতিহাস। তাই আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও নির্মাতারা এখন ছুটছেন সেলুলয়েডের কাছে ক্যামেরার চোখে কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটককে ফুটিয়ে তুলতে। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন সত্যিই ইতিহাসের পাতায় স্থান দখল করবে প্রচলিত বই আর বই পড়ার সংস্কৃতি। আর এর বিপরীতে ততটাই শক্তিশালী হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ই-বুক। প্রচলিত বই ছেড়ে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাও ক্রমে নির্ভর হয়ে পড়ছে ই-বুকের ওপরে। এর নমুনা এখন প্রতিনিয়তই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে আমাদের সামনে। এ এক অন্যরকম পাওয়া আধুনিক মানুষের জীবনে! শিল্প, সাহিত্যে ও মানুষের সামাজিক জীবনে এই নতুন জাগরণ ডিজিটাল মাধ্যমে বিশ্বে আরও উদ্ভাসিত হবে আমাদের আগামী প্রজন্মের সামনে তা এখন বলাই বাহুল্য।

লেখক : কবি, সাংবাদিক এবং টিভি অনুষ্ঠান ও ক্রিয়েটিভ ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতা