ঢাকাইয়া রঙ্গপুরে

দুইআনার পাঙ্খা
চকবাজার থেকে এক লোক একটি হাতপাখা কিনল দুইআনা দিয়ে। সে সময় ভালো হাতপাখার দাম ছিল চারআনা, বাসায় গিয়ে হাতপাখা নাড়াতেই ডাট ভেঙে গেল। লোকটি তখনই দোকানির কাছে হাতপাখা ভাঙার নালিশ নিয়ে গেল এবং পয়সা ফেরত চাইল।
তখন দোকানির কথন-  হাত পাঙ্খা লিয়া কি করছিলেন, ক্রেতা হাত দিয়া ঘুরাইছিলাম। দোকানি আরে হালায় দুইআনার পাঙ্খা হাত দিয়া তো ঘুরনি যায় না। এই পাঙ্খার সামনে মুখ ঘুরাইতে হয়। নিয়ম জানেন না আবার পয়সা ফেরত লইবার আইছেন।

আচকানের বুতাম
এক মিচমিচে কালো শরীরের লোক। চকবাজারে গেল আচকানের কাপড় কিনতে। দোকানি একের পর এক কালো আচকানের কাপড় ক্রেতাকে দেখাচ্ছে; কিন্তু ক্রেতার কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে না। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে দোকানি একমুঠো কালো বুতাম ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করে বলল, ‘আপনের গতরের রক্তই তো মিচমিচা কালা। আপনের আবার আচকানের লাইগা কালা কাপড়ের কি দরকার, এই আচকানের বুতাম কয়টা কিনা লিয়া যান। সিনা থাইকা প্যাট পর্যন্ত ফিট করলেই আচকানের লাহান দ্যাখা যাইব।’

ডিআইটির ঘড়ি
সিদ্দিক বাজারের ঘোড়ার আড়গাড়ায় এক মিস্ত্রি ঘোড়ার খুরে নাল লাগাচ্ছিল। পাশের দোকানের এক কিশোর বালক চা আনতে যাওয়ার পথে ওই মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করল, ‘চাচা এখন কয়টা বাজে?’ মিস্ত্রির হাতে ঘড়ি ছিল না। কাজ করতে করতেই বলল, ‘এখন সময় অইলো ১১টা ২০ মিনিট।’ কিছুক্ষণ পর ওই কিশোর আবার চা আনতে যাওয়ার পথে ওই মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করল, ‘চাচা অহন কয়টা বাজে?’ মিস্ত্রি উত্তর দিলো ১১টা ৪৫ মিনিট।
কিশোর বালক আশ্চর্য হলো মিস্ত্রির হাতে ঘড়ি নাই অথচ সময় বলে দিচ্ছে। কিশোরটি ঘোড়ার মিস্ত্রিকে বলল, ‘আরে চাচা আপনের হাতে ঘড়ি নাই, মাগার সময় কইয়া দিতাছেন।’ মিস্ত্রি উত্তর দিলো, ‘আবে মামদোর পো, বুঝবার পারতাছ না, তোরে দেখাই।’ এই বলে কিশোরটির ঘাড় নিচে নিয়ে বলল, ‘দেখ হালা ঘোড়ার পাছার নিচ দিয়া ডিআইটি ঘড়ি দেখা যায়। এটা দেইখাই আমি তোরে ঠিকঠিক ওয়াক্ত কইয়া দিতাছি।’

রিকশা যখন গোত্তা খেল
দুপর বেলা সদরঘাট মোড়ে এক যাত্রী রিকশাওয়ালাকে চকবাজারের ভাড়া জিজ্ঞেস করল, রিকশাওয়ালা বলল দশআনা কিন্তু যাত্রি কোনোভাবেই ছয়আনার বেশি ভাড়া দিতে রাজি হলো না। তখন রিকশা বদলির সময়। রিকশাওয়ালা অসন্তুষ্ট হলেও ওই যাত্রীকে রিকশায় তুলল। যাত্রীর হাতে বেশ কয়েকটা পোটলা-পুটলি। এগুলো কোনোমতে সামলাচ্ছে। দুপুরের প্রায় শূন্য রাস্তায় রিকশাওয়ালা বেশ দ্রুতগতিতে রিকশা চালাচ্ছে।
ইসলামপুর বাবুবাজারের কাছাকাছি এসে রিকশাওয়ালা ইচ্ছে করেই এক লাইট পোস্টে রিকশা গোত্তা (ধাক্কা) খাওয়ালো। পোটলা-পুটলি নিয়ে রিকশাযাত্রী রাস্তায় ছিটকে পড়ল। রিকশাযাত্রীর হাঁটুতে ব্যথা পেলো। কোনোমতে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলল, ‘ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারে না।’ রিকশাওয়ালা উত্তর- ‘সদরঘাট থাইক্যা চকবাজারের ভাড়া হইলো দশআনা, আপনে দিলেন ছয়আনা। এই লাইগাই তো, বাবুবাজার মোড়ে আইয়া গোত্তা খাওয়ন লাগল।’

ঘোড়ার হাসি
ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে নেমে একযাত্রী ঘোড়া গাড়ির গাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করল, ‘সুত্রাপুর বাজার যাইবা।’ গাড়োয়ান বলল, ‘হ যামু।’ ‘ভাড়া কত?’ ‘এক টাকা চারআনা।’ যাত্রী বলল, ‘দশআনা।’ ঠিক ওই সময়েই একটি ঘোড়া চিহি-হি করে ডাক ছাড়ল। গাড়োয়ানের উত্তর, ‘বুঝছেন মিঞা আপনের ভাড়া হুইনা ঘোড়া বি হাসবার লাগছে।’

চাঁন ভি দেহন যায়
ফরাশগঞ্জ থেকে এক যাত্রী গাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করল, ‘সূত্রাপুরের লোহারপুরের ভাড়া কত?’ গাড়োয়ান বলল, ‘চারআনা।’ তখনকার ন্যায্য ভাড়া হবে দুআনা। যাত্রী বলল, ‘এখান থাইকা তো লোহারপুল খালি চোখেই দেখা যায়, আর তুমি ভাড়া চাও চারআনা।’ গাড়োয়ানের উত্তর, ‘আরে মিঞা এখান থাইকা তো খালি চোখে চাঁন (চাঁদ) ভি দেহন যায়।’

সোনার দাঁত
রায়শাহ বাজারে এক ধনী ঢাকাইয়া ক্রেতা সাদা ফতুয়া আর হাতের পাঁচ আঙ্গুলে সোনার আংটি পরে মাছপট্টিতে এক রুই মাছ বিক্রেতাকে তার পাঁচ আঙ্গুলের সোনার আংটি প্রদর্শন করে জিজ্ঞেস করল, ‘ওই মিঞা তোমার এক হালি রুই মাছের দাম কেত্না (কত)?’
মাছ বিক্রেতার ক্রেতার এই ফুটানি পছন্দ হলো না। বিক্রেতা তার আঙ্গুল দিয়ে ওপরের ঠোঁট উঠিয়ে বিকৃত স্বরে বলল, ‘২৫ টাকা।’
কারণ মাছ বিক্রেতার সামনের পাটির দুটি দাঁত সোনা দিয়ে বাঁধানো ছিল। সেটা প্রদর্শন করে ক্রেতার উপযুক্ত জবাব দিলো।

একপাটি জুতা
এক গ্রাম্যলোক চকবাজারে এসে দোকানির কাছে এক জোড়া জুতার দাম জিজ্ঞেস করলে দোকানির উত্তর চার টাকা। ক্রেতা বলল দুই টাকা। বিক্রেতা রাজি হয়ে জুতা প্যাকেট করে দিয়ে দিলো। ক্রেতা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে প্যাকেট খুলে দেখে এক পাটি জুতা।
পরদিন লঞ্চে ঢাকায় এসে ওই দোকানিকে অভিযোগ করল, ‘আরে মিঞাসাব আপনি একপাটি জুতা দিলেন কেন?’ দোকানির উত্তর, ‘আমি জুতার জোড়া চাইলাম চার টাকা, আপনে দিলেন দুই টাকা। দুই টাকায় তো জুতা একটাই মিলব। দুইটা মিলব কেমনে।’

আঙ্গুলের টুপি
দেশ ভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় বসবাসকারী এক ভদ্রলোক, মহল্লার ঢাকাইয়া দর্জির কাছে গেল একখÐ কাপড় নিয়ে টুপি বানানোর জন্য। দর্জিকে বলল, ‘এই কাপড় দিয়ে একটা টুপি বানানো যাবে?’ দর্জি সহজভাবে উত্তর দিলো, ‘হ অইবে।’ ভদ্রলোকের সন্দেহ হলো কাপড় নিশ্চয় বেশি আছে। বলল ‘কাপড় বাঁচলে আমার ছেলের জন্য একটি টুপি তৈরি করে দেবেন।’ দর্জি বলল, ‘ঠিক আছে।’ ভদ্রলোকের অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট কাপড়ের মধ্যে একে একে পাঁচটি টুপি তৈরির অর্ডার দিলো। টুপি ডেলিভারির দিন ভদ্রলোক পাঁচটি ক্ষুদ্রাকৃতির টুপি পেয়ে অবাক বিস্ময়ে দর্জিকে জিজ্ঞেস করল, ‘এসব কি তৈরি করে দিয়েছেন?’ দর্জির উত্তর, ‘আবে হালায় আমারে টুপি বানাইবার কাপড় দিলেন একটা, এরপর বাড়াইতে বাড়াইতে করলেন পাঁচটা। আমি পাঁচটা বানাইছি, এই টুপি মাথায় না পরবার পারেন হাতের আঙ্গুলে তো পরবার পারবেন।’

শিয়ালের কম্বল
ব্রিটিশ আমলে রমনা এলাকায় একটি বাংলো বাড়িতে এক ইংরেজ সাহেব বসবাস করতে এসেছেন। বাড়িতে একজন ঢাকাইয়া চাকর আধা বাংলা আধা ইংরেজি কথা বলে। সাহেবের ফুটফরমায়েশ ঢাকাইয়া চাকরটাই সেরে দেয়। তখন শীতকাল রমনার জঙ্গলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিয়ালরা দলবদ্ধভাবে হুক্কাহুয়া ডাক ছাড়ে। ইংরেজ সাহেব তার ঢাকাইয়া চাকরের কাছে একদিন জানতে চাইল প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিয়ালরা হুক্কা হুয়া করে কেন? চাকর তার সাহেবকে বুঝালো শিয়ালরা শীতে কাতর তাই সমস্বরে দাবি জানাচ্ছে, ওদের কম্বলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। বিচক্ষণ দয়ালু সাহেব ঢাকাইয়া চাকরের কাছে জানতে চাইল এই জঙ্গলে শিয়ালের সংখ্যা কত? চাকর পরদিন খোঁজখবর নিয়ে বলল ৩০০। সাহেব ৩০০ কম্বল কিনে চাকরের কাছে বুঝিয়ে দিলো। চাকর ব্যাটা কম্বলগুলো সদরঘাটে বিক্রি করে বেশ টাকা কামাই করে নিলো।
পরদিন সন্ধ্যায় যথারীতি আবারো শিয়ালদের রব উঠল। সাহেব চাকরকে বলল কি ব্যাপার, শিয়ারদের না কম্বলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, আবারো হুক্কা হুয়া করছে কেন? ঢাকাইয়া চাকরের উত্তর, সাহেব শিয়ালরা আপনাকে সবাই মিলে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।

টিকিয়া পোলাও
নবাব সলিমুল্লাহর বাড়িতে এক পারিবারিক উৎসব আয়োজনে খানাপিনা তৈরির দায়িত্ব পড়ল তাদের নির্ধারিত বাবুর্চির হাতে। প্রধান বাবুর্চির সাথে একজন সহকারী বাবুর্চি। বাবুর্চিদ্বয়ের তামাক পানের অভ্যাস ছিল তাই সাথে করে হুক্কা, তামাক আর কয়লার তৈরি টিকিয়া নিয়ে গেল। হেড বাবুর্চি পোলাও তৈরির রেসিপি অনুযায়ী বাবুর্চিকে ডেকে মশলাপাতি দেওয়ার সময় ভুলক্রমে কয়লার তৈরি টিকিয়া ঢেলে দিলো। পোলাও রান্না হওয়ার পর বাবুর্চিরা তাদের ভুল বুঝতে পারল, কারণ পোলাওয়ের রং ছাইবর্ণ ধারণ করেছে। নিরুপায় বাবুর্চি ওই পোলাও নবাব সাহেবের দস্তরখানে পরিবেশন করল। পোলাও-এর স্বাদ ঠিক থাকলেও পোলাওয়ের রং ছাইবর্ণ ধারণ করাতে নবাব সাহেব হেড বাবুর্চিককে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আরে মিয়া সাব পোলাও কা রাঙ কালা হুয়া কিউ?’
চতুর ঢাকাইয়া বাবুর্চির উত্তর, ‘এ ন্যায়া রাকামকা খানা, ইসকা নাম হ্যায় টিকিয়া পোলাও।’ নবাব সাহেবের সন্তুষ্টিচিত্ত উত্তর, ‘বহুত খুব, বহুত খুব, এ লো দাশ রুপিয়া এনাম।’

বে-আক্কেল
ইসলামপুর মহল্লার এক কন্যার পিতা বর পছন্দ করতে গেলেন বেচারাম দেউড়ি মহল্লায়। হবু বরের বাসায় খানপিনার পর, বর এলো হবু শ্বশুরকে সালাম করতে। হবু শ্বশুর বারবার বরের মুখ দেখছে কারণ ছেলেটিকে কোথাও আগে দেখেছে বলে মনে হলো। হঠাৎ খেয়াল হলো, এই ছেলেকে তো ইসলামপুরের ডেন্টিস্টের ফার্মেসিতে দেখেছিল। হবু শ্বশুর, হবু বরকে জিজ্ঞেস করল, ‘আরে মিয়া তুমকো না গিয়া সাপ্তাহ ইসলামপুর কা দাঁতকা ডাক্তার খানামে দেখা থা?’
হবু বরের উত্তর, ‘জি আব্বাজান।’
হবু শ্বশুর, ‘ওয়াহা কিসসিলে গায়া থা?’
হবু বর : ‘আক্কালদাঁত দারদ কাররারহা থা উসকো ফেকনে।’
হবু শ্বশুর : ‘আরে মিয়া তোমারা তো আক্কাল দাঁতই হাই নি তোমতো বে-আক্কেল। বে-আক্কেল লাড়কা কে পাস মেরা খুবসুরাত লাড়কি শাদী দেনে নি।’ এই বলে কনের বাপ বিয়ে ভেঙে দিলো।

সেয়ানা ইলিশ
এক ভদ্রলোক বাজারে গেছেন মাছ কিনতে। বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি দেখে মনে মনে খুশিও হলেন। মনে মনে বৌয়ের ইলিশ মাছ ভাজবার দৃশ্যটুকু কল্পনা করতে করতে মাছওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ও মিয়া বড় মাছটার ডিম হবে তো?’ মাছওয়ালা চট করে মাছটাকে ভদ্রলোকের নাক বরাবর এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল, ‘কন কি সাব, দ্যাহেন না এইটা তো ১৬ বচ্ছরের সেয়ানা মাইয়া, এহনও বিয়াই হয় নাই ডিম হইব কেমতে?’

আপসে-আপ
রাস্তা দিয়ে এক ঢাকাইয়া হনহন করে কোথায় যাচ্ছিল। এক ভদ্রলোক এমনি সময় এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ভাই হাসপাতালটা কোন দিকে বলতে পারেন?’
ঢাকাইয়া বলল, ‘ওই যে মোচরটা ওর সামনে হুইয়া পড়েন আপসে-আপ হাসপাতালে গিয়া পৌঁছাইবেন।’

গত বছরের পানতা
সেলিমের বাবা : পেটে বহুত খিদা লাগছে। কিছু খাওনের আছে?
সেলিমের মা : আছে গত বছরের কিছু পানতা।
সেলিমের বাবা : আমার লগে তুই মশকরা করছ নাকি?
এমন সময় সেলিমের প্রবেশ
সেলিম : বাজান, তোমার লগে অখন রমনা পার্কে যামু।
সেলিমের বাবা : স্কুলে যাবি না?
সেলিম : স্কুল বন্ধ। আইজ নয়া বছর।
সেলিমের বাবা : ও বুজছি। হের লাইগাই তোর মা আমাদের গত বছরের পানতা খাইতে কইছে।

আমের ডাক্তার
অস্বাভাবিক লম্বা এক ভদ্রলোক ঢাকাইয়া বিক্রেতার কাছ থেকে আম কিনতে গেছেন।
লম্বাটে ভদ্রলোক : আম কেমন ভালো? খুব ছোট মনে হয়?
বিক্রেতা : অত ওপর থোন দেকলে ছোট ভি মনে হইব। একটু নিচে নামেন।
(ভদ্রলোক নেড়েচেড়ে টিপে টিপে আম দেখতে লাগলেন)
কি ছাব, আপনি কি রোগী দেখতাছেন?
ভদ্রলোক : কি বললে?
বিক্রেতা : না ছাব, যেভাবে টিপ্পা টুইপ্পা দেখতাছেন ভাবলাম রোগী দেখতাছেন।

বাটপাড়ের দৌরাত্ম্য
ব্রিটিশ শেষ যুগে এলাকার ধনকুবের ছিল রওশন হাজী মহাজন। সে সময় তার বিশাল অট্টালিকা ও প্রাইভেট গাড়ি ছিল। প্রধান সড়কের ধারে দোতলার বেলকুনিতে এক বিকেলে দাঁড়িয়ে ছিলেন রওশন হাজী। দেখলেন ঘোড়াগাড়ি থেকে দুজন লোককে সাথে নিয়ে নেমে এলো ঠকবাজ ইমাম আলী। তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অচেনা লোক দুটোকে বাড়ির প্রতি ইঙ্গিত করে কি জানি বলছে ঠকবাজ। ইমাম আলী ঠকবাজের মতলব বুঝতে পেরে রওশন হাজী নিচে নেমে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি কথা কও ইমাম আলী?’ সম্মানী ব্যক্তি রওশন হাজীর প্রতি ভ্রæক্ষেপ না করেই লোক দুটোকে ইমাম আলী বলে, ‘হালায় আমার বাড়ির ভাড়াইট্টা ঠিকমতো ভাড়াবি দেয় না, আবার অহন জিগাইতেছে আমি কি করি। বান্দির পুতরে কইতে হইব কি করি?’ মানসম্মানের ভয়ে রওশন হাজী বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন।
ক’দিন পর ওই অচেনা লোক দুটি রওশন হাজীর বাড়ির কড়া নাড়ছে। রওশন হাজী বের হয়ে জানতে পারলেন, ঠকবাজ ইমাম আলী তার বাড়ি বিক্রি করার কথা বলে ২০০ টাকা বায়না করে লাপাত্তা। ইমাম আলী পরিচয় জানতে পেরে লোক দুটো লা জবাব হয়ে গেল।

ধামাধরা
মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার পেশাদার ছিল ইমাম আলী পুরখা। টাকার বিনিময়ে যে কোনো মামলার সাক্ষী হয়ে যেত সে। জালিয়াতি দলিলের মাধ্যমে এক প্রয়াত জমিদারের সম্পত্তি বিক্রি হচ্ছে। যথারীতি আদালতে সাক্ষীর কাঠগড়ায় ইমাম আলী উকিল মোক্তারের সাজানো বুলি আউড়ে যাচ্ছে, হঠাৎ প্রতিপক্ষের উকিল প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি জমিদারের কি ছিলেন?’ এ প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না ইমাম আলীর। তাই বলে তো কথায় ঠকা যাবে না। ইমাম আলী উত্তর, ‘জমিদারের ধামাধরা।’ উত্তর শুনে আদালতে হাস্যরোল উঠল।

বিনা পয়সায় ভূরিভোজ
আলমের ছোটবেলার সাথী ছাত্তার মিয়া। বড় লোকের ছেলে হলেও বোকা কিসমের। আলম বলল, ‘চল সাত্তার তরে নবাবপুরের হোটেল থাইক্যা কাচ্চি বিরানি খাওয়ামু।’ কাচ্চি বিরানির কথা শুনে সাত্তার মিয়া ছুটল আলমের সাথে। নবাবপুরের স্টার হোটেলে গিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ মোসল্লাম, ফিরনি দেদারসে খেলো, বিল হলো সেই আমলে অনেক টাকা। খাওয়া শেষে আলম বলল, ‘সাত্তার তুই ব। আমি মুইতা আহি।’ বলে আলম উধাও। রেস্টুরেন্টওয়ালারা বিলের জন্য চাপাচাপি করতে লাগল। সাত্তার মিয়া কেঁদেকেটে অস্থির। অবশেষে ঘোড়াগাড়িতে করে সাত্তার মিয়াকে সাথে নিয়া সাত্তার মিয়ার বাবার কাছ থেকে বিল আদায় করল রেস্টুরেন্টের লোকজন।

ঠকবাজের ওস্তাদি
ব্রিটিশ আমলে ঢাকার ঢালকানগরে দুই ঠকবাজ বন্ধু বসবাস করত। দেশভাগের পর বন্ধুদের একজন হিন্দু কলকাতা চলে যায়। দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুরনো বন্ধুর খোঁজে ঢাকায় বেড়াতে এলো কলকাতার সেই ঠকবাজ। অনেক দিন পর দুই ঠকবাজ বন্ধুর সাথে আবেগঘন মোলাকাত হলো। দুইজনে মিলে ঢাকা শহর ঘুরতে বের হলো। দীর্ঘ ২৫ বছরে দুই ঠকবাজের হাত আরও পেকেছে। ঘুরতে ঘুরতে রমনা পার্কে এসে কথা প্রসঙ্গে কলকাতার ঠকবাজ বলল, ‘তার হাত এত পেকেছে যে, কাকের বাসায় ডিম তা দেওয়া অবস্থায় সে ডিম চুরি করে নিয়ে আসবে; কিন্তু কাক এতটুকুও টের পাবে না।’ এ কথা শুনে ঢাকাইয়া ঠকবাজ বলল, ‘জব্বর তুই তো হালায় বহুত বড় চালবাজ হোয়া গেছচ। অহন তোর খেলাটা দেখা তো।’ কলকাতার ঠকবাজ রমনা পার্কের বটগাছে উঠে কাকের বাসা থেকে ঠিকঠিক ডিম তুলে নিয়ে এলো, যা কাক এতটুকুও টের পেল না। নিচে নেমে কলকাতার ঠকবাজ বলল, ‘দেখেছ বন্ধু আমার হাত সাফাই।’ ঢাকার ঠকবাজের উত্তর, ‘সাব্বাস তুই ভালা হাত সাফাই দেখাইলি, অহন হালায় তোর শরীরের নিচের দিকে চা।’ কলকাতার ঠকবাজ অবলোকন করল, সে দিগম্বর হয়ে গেছে। কলকাতার ঠকবাজ গাছে ওঠার সময় ঢাকার ঠকবাজ তার কলকাতার বন্ধুর ধুতি এমন সুক্ষ্মভাবে খুলে নেয় যে তাতে কলকাতার ঠকবাজ এতটুকুও টের পায়নি। তখন কলকাতার ঠকবাজের উত্তর, ‘আরে বন্ধু তোমাকে আমি ওস্তাদ মানছি।’

 


সর্বশেষ সংবাদ