‘লেফট ফর সামওয়ান এলস’—ছাইড়া যাওয়া মাইনা নেওয়ার বিদ্যা
জীবনানন্দ দাশ ওনার বিখ্যাত ১৩৩৩ কবিতার জাদুবাস্তবতায় ‘লেফট ফর সামওয়ান এলস’ বিষয়টা ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন সুন্দরভাবে। উনি বলতেছেন-
‘‘আমারে চাও না তুমি আজ আর- জানি;
তোমার শরীর ছানি মিটায় পিপাসা, কে সে আজ!
তোমার রক্তের ভালোবাসা
দিয়েছ কাহারে! কে বা সেই!
আমি এই সমুদ্রের পারে-
বসে আছি একা আজ, ঐ দূর নক্ষত্রের কাছে,
আজ আর প্রশ্ন নাই, মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে,
চক্ষে তার, এলোমেলো রয়েছে আকাশ!
উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা! তারি তলে পৃথিবীর ঘাস!’’
দেখেন বন্ধু, এই দুনিয়ায় এক্সক্লুসিভভাবে ব্যক্তিগত দুঃখ বলতে কিছু নাই। আপনি যেই দুঃখে কাতর জীবনানন্দও সেই দুঃখেই কাতর। ফলে দুঃখ যখন আপনার শরীরী যাতনাকে অতিক্রম করে যায়, যখন দুই-তিন-চার পেগেও সংকটের নিরসন হয় না, তখন আপনি সবচেয়ে ভালো হয় যেটা করলে সেটা হলো আপনি একাডেমিশিয়ান হয়ে যান।
ভেবে দেখেন দুনিয়ায় এক্সক্লুসিভ দুঃখ বলতে কিছু নাই। অন্যে আপনার দুঃখের মতো একইরকমের দুঃখকে যেভাবে ডিল করেছে, আপনি সেটা খুঁজে বের করে সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখেন, আরাম পাবেন।
লেফট ফর সামওয়ান এলস হচ্ছে বিচ্ছদের এমন একটা প্রকরণ, যেখানে আপনার প্রেমশখা আপনাকে ছেড়ে তো গেছেনই, ছেড়েছেন অন্য কারো জন্য। এমনিতেই বিচ্ছেদ একটা বেদনাদায়ক বিষয়, তার উপর আপনি যদি রিপ্লেস হোন আপনারই সমলিঙ্গের আরেকটা মানুষের জন্য- তখন আসলে আপনি না চাইলেও নিজেকে এমন একটা ঘোড়ার রেসে দেখতে পাবেন যেখানে আপনি বারবার হেরে যাচ্ছেন।
রেস কখনোই খারাপ জিনিস না। টিকে থাকাটাই একটা রেস। কিন্তু যেই রেসটায় আপনি অংশগ্রহণ করতেই চান নাই, সেই রেসে আপনারে যদি শুরু করার আগেই হারায়া দেয়া হয় এবং বলা হয় ‘শালা দৌড়া’ তখন আপনি আসলে নিজেরে ক্রমাগত নিজের বমির ভেতরে আবিষ্কার করতে থাকবেন রাতের পর রাত।
এবার ফ্রয়েডের ভাষায়, নিজের বাপের প্রতি ছেলে সন্তানের যেই জেলাসি সেই কমপ্লেক্স যদি সেই ছেলে বাচ্চা তার সাইকো ডেভেলপমেন্টের ফ্যালিক স্টেইজের টাইমলাইনের মধ্যেই মীমাংসা না করতে পারে (তিন থেকে ছয় বছর) তাহলে এই কমপ্লেক্স তারে আজীবন ভোগাইতে পারে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইচিরো কিশিমি তার ‘The Courage to Be Disliked’ বইতে বিষয়টা নিয়ে আলাপ দিছেন ডিটেলে। উনি বলতেছেন, ভালোবাসার মানুষ ছাইড়া যাওয়া সম্ভবত আপনার এক জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক অভিজ্ঞতা। আর সইটা যদি হয় ‘লেফট ফর সামওয়ান এলস’ তখন একটা দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য এই বেদনা মৃত্যুসম বা অনেক্ষেত্রে মৃত্যুর চাইতে অধিক।
এক্ষেত্রে সেই অপরিচিত কিংবা পরিচিত সামওয়ান এলস আপনার কাছে একজন ফ্ললেস এন্টিটি হিসেবে ধরা দেয়, আপনার মনে হইতে থাকে সেই লোকের কোন ভুল নাই, সেই সামওয়ান এলস চকচকে আদর্শ একটা লোক।
এবারে আপনি যখন নিজের দিকে তাকাবেন তখন নিজেরে আবিষ্কার করবেন একে একজন ‘WHY ME?’ পজিশনে, পাশাপাশি ক্রমাগত সেই জাজমেন্ট আপনার মাথায় ঘুরবে ‘WHAT DO THEY HAVE THAT I DON'T?’
কিশিমি বলতেছেন, এই প্রশ্ন আপনাকে এরকম প্যারা দেবে যে এই প্রশ্ন আপনার অস্তিত্ব-স্বত্বার থেকে বড় হয়ে উঠবে। যেটাকে বলে একজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস। তো এই ক্রাইসিসে ব্যক্তির থেকে যখন ব্যক্তির ভেতরের একটা প্রশ্ন যখন বড় হয়ে উঠতে থাকে, তখন আসলে সে নিজেকে হার্ম করার মধ্য দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতে চায়। কারণ মানুষের পক্ষে কেবল একটা প্রশ্ন হিসেবে বেঁচে থাকা পসিবল না।
একেবারে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যেই ব্যক্তির সাথে অন্যকোনো আনস্যাটেল্ড ট্রমা নাই সে মোস্ট লাইকলি স্যুইসাইড এটেম্পট করবে। তো মনোবিজ্ঞানিরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টা স্টাডি করতেছেন। কীভাবে এই ট্রমাকে উত্তর দেয়া যায় কিংবা সেই প্রশ্নটাকে ছোট কইরা আনা যায়?
আরও পড়ুন: প্রেম-ভালোবাসা-বিয়ে
ইচিরো কিশিমি বলতেছেন, আমরা যদি লক্ষ্য করি, এই প্রশ্নটার পাটাতন বা ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে নিজের এবং সামওয়ান এলস সম্পর্কে একটা খুব ভুল পারসেপশনের ওপর। এই প্রশ্নের ভুলটা আমরা সবাই আসলে ভেতরে ভেতরে জানি, কিন্তু বাইরে থেকে এর কনফার্মিটি পাওয়া যায় না দেখে আমরা আমদের ভেতরের উত্তরটা নিয়ে সন্তুষ্ট হইতে পারি না।
সেই ‘জানি কিন্তু বলবো না’ বিষয়টা হইতেছে, আমরা সবাই আসলে নিজেদের মত ইম্পারফেক্ট। আমরা কেবল অন্যের সম্পর্কে ততোটাই জানি যতোটা অন্য লোকটা আমাদের দেখায়। যেটা প্রায় সবসময়ই আইসবার্গের চূড়াটুকুই। ফলে আমরা যখন আমাদেরকে যার জন্য ছাড়া হইছে সেই ব্যক্তিকে আইডিয়ালাইজ করি, আমরা মনে করতে থাকি- সে কি যে জোশ, সে মারাত্মক কনফিডেন্ট, সে দারুণ এক্সাইটিং সঙ্গ। এগুলার একটাও আমি না, আমি লেইম, আমি বোরিং... ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু এই পারসেপশন ভুল।
প্রিয় বন্ধু, আপনি নিশ্চিত জেনে রাখেন আপনার প্রেম আসলে আপনারে রাইখা সুখে নাই। তারা জাস্ট একটা ইম্পারফেক্ট রিলেশনকে আরেকটা ইম্পারফেক্ট রিলেশন দিয়ে এক্সচেইঞ্জ করছে।
আমাদের মাইনা নিতে হবে পৃথিবীতে অদ্যাবধি যতো মানুষ আসছে আর গেছে তারা সবাই, আই রিপিট তারা সবাই মিডিওকোর। সবাই সুখের নাটক কইরা গেছেন, কনফিডেন্সের নাটক কইরা গেছেন। সেইটা হোক আইনস্টাইন, হোক দ্য ভিঞ্চি, হোক আব্রাহাম লিংকন আর হোক মাইকেল জ্যাকসন।
কিশিমি বলতেছেন- We need to realize that, pretty much every human who has ever existed tends to be mediocre. There is no such thing as a 'Perfect Person'. Everyone has flaws and imperfections, but we often only see the best parts of others. Our perception of ourselves is also skewed by undue ignorance. We tend to focus on our flaws and compare ourselves to the idealized version of the person who left us. However, we need to accept our imperfections and understand that they are part of being human.
তবে ‘লেফট ফর সামওয়ান এলস’ সিচুয়েশনে এটা ভাবার সুযোগ নেই যে আমাদের লেস এডমিয়ারেবল সাইড নেই। আমাদের ভুল নাই কিংবা আমাদের ঠিক হবার জায়গা ছিল না। বরং আমাদের এইটা বুঝতে হবে- প্রতিটা মানুষকে যখন মাইক্রোস্কোপের নিচে রাখা হয়, দেখা যাবে সবাই বোরিং, সবাই ডিসএপইয়েন্টিং।
আমরা আমাদের জীবনে যেই মানুষকেই জড়াবো সে জীবনের কোন না কোন সময় আমাদেরকে পাগল হইয়া যাওয়ার মত প্যারা দেবে। এমন এমন সময় আসবে যখন পার্টনার আপনারে এতো বেশি প্যারা দেবে যে আপনার মনে হবে আপনি জন্মাইলেন কেন। এবং আপনিও আপনার পার্টনারকে এই হার্ডটাইমগুলা অবশ্যই দেবেন।
আরও পড়ুন: সহপাঠীর প্রেমে পড়েছেন? যেভাবে জানাবেন
কিশিমি বলতেছেন, ‘Every relationship has its unique forms of acute unhappiness.’ ফলে এই বিশ্বজগতের অভিজ্ঞতা আমাদের কি ফাইনলাইনের সামনে আইনা খাড়া করায়? দুনিয়ার প্রতিটা মানুষের অভিজ্ঞতা আপনার সামনে একেবারে আয়নার মত বলতে থাকে, যে আপনারে ছাইড়া অন্য কারো হাত ধরছে সুখের খোঁজে, আর আপনি সেই পার্টনারের এই নতুন পার্টনার এন্টিটিকে যে আপনি দিবারাত্রি একজামিন করে চলতেছেন; নিজের সফটওয়্যারকে আপডেট কোথায় কোথায় করবেন সেটা জানার জন্য—প্রিয় বন্ধু, আপনি নিশ্চিত জেনে রাখেন আপনার প্রেম আসলে আপনারে রাইখা সুখে নাই। তারা জাস্ট একটা ইম্পারফেক্ট রিলেশনকে আরেকটা ইম্পারফেক্ট রিলেশন দিয়ে এক্সচেইঞ্জ করছে।
আপনাকে বুঝতে হবে যে অন্যজনের মাধ্যমে আপনার প্রতিস্থাপিত হওয়ার গভীর পাঠ এইটা না যে আপনি অনেক খারাপ। বরং আপনার ভূতপূর্ব পার্টনার আপনাকে একটা সাধারণ বিভ্রমের কারণে ছেড়ে চলে গেছে এই বিশ্বাস থেকে যে ‘সে ওখানে সুখী হবে’।
সত্যটা হচ্ছে প্রতিটা সম্পর্কে তীব্র অসুখীতা আছে, কিন্তু দু’জন মিলে সেই অসুখিতাকে একটা নিজস্বতা দান করতে হয়। দাঁড় করাতে হয় একটা সুন্দর স্বতন্ত্র রূপ। ডিসঅর্ডারের একটা ছন্দ খুঁজে নিতে হয়। বালিশ এলোমেলো থাকবে, কাপড় ভাঁজ করবেন না, সেটা নিয়ে ঝগড়া হবে, দুই বিছানা আলাদা হবে, আবার মধ্যরাতে হবে আচমকা মিলন।
এখন কেউ যদি বালিশ এলোমেলো করার পাপে টিন্ডার থেকে বালিশ গোছানো পার্টনার খুঁজে পেয়ে রুপকথার মতোন ‘এরপর তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকলো’ টাইপ সুখ পাবেন ভেবে বালিশ না গোছানো পার্টনারকে রিপ্লেস করে ফেলেন, তাহলে সেই খুব থটফুল সিদ্ধান্ত না।
ফলে আপনারা বুঝতে পারলেন, যদি না আপনার ভেতর অসততা, প্রতারণা, বিভিন্নরকম ক্রিমিনাল এপ্রোচ, যেকোন রকমের ক্লিনিকালি এট্রিবিউটেড টর্চারের হিস্ট্রি, মেন্টাল ডিজঅর্ডারের হিস্ট্রি (এবং কিছু স্পেশাল ব্যতিক্রম) না থেকে থাকে এবং আপনার ব্রেকাপ মিউচুয়ালি না হয়ে ‘ফর সামওয়ান এলস’ হয়ে থাকে, তাহলে বিশ্বব্যাপী সাইক্রিয়েটিস্টরা আপনাকে কনফার্মিটি দিচ্ছে, প্রগতির চাপ ভুলে নচিকেতার নীলাঞ্জনা সিরিজের দুই নাম্বার গানটা উচ্চস্বরে বাজাইতে পারেন আপনি, যেখানে বলা হচ্ছে-
‘লাগে মাসকারা দুচোখ আঁকতে-
ক্লান্তির কালো রংকে ঢাকতে
রাতের চাদরে মুখ ঢেকে খোঁজ কিসের শান্তনা! নীলাঞ্জনা!’
তাইলে বন্ধু, এবার সময় সামনে আগায়া যাওয়ার। সামনের সম্পর্কের সময় নিজের রক্ত আর অশ্রু দিয়ে যেই শিক্ষা পাইছেন সেইটা ভুইলেন না যেনো, যেনো প্রতিশোধ নিয়েন না। খেয়াল রাইখেন এবার আমাদের এমন একটা মানুষকে খুঁইজা বাইর করতে হবে, যে আমাদের ‘পারফেক্ট হিউম্যান’ মনে কইরা আমাদের কাছে আসবে না। আমাদের পাদের গন্ধ, সর্দি সমেৎ মুখের গন্ধের বাস্তবতা সহ নিজেরে এবার উপস্থাপন করবো আমরা।
আরও পড়ুন: পরিণীতা: সমান্তরালে চলে না প্রেম আর যুক্তি
এমন একটা মানুষকে আমরা পার্টনার হিসাবে খুঁজবো যে নিতসের মত দুনিয়ার ডিজঅর্ডাররে একনলেজ কইরা, আমার এবং তার ডিজঅর্ডাররে একনলেজ কইরা, দু’দণ্ড শান্তির খোঁজ করতে রাজি আছে, একসাথে। এমন একটা প্রেমশখা আমাদের খুঁইজা বাইর করতে হবে যে আপনারে নায়ক ভাববে না, যে এইটুকু বুঝ রাখবে যে- সম্পর্কের শুরুতে পরস্পর নিজেদের এট্রাক্টিভ করার যেই লড়াইটা চালায়া যাবে, পাঁচ বছর সম্পর্কের পর আসলে বিষয়টা এইরকম থাকবে না। এই আলাপগুলা কইরা রাখতে হবে।
মনোবিজ্ঞানীরা দেখছেন কোন এক পক্ষ থেকে সামওয়ান এলসের প্রভাবে একটি সম্পর্ক ভেঙে ফেলা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাল্লার একদিকে থাকে ‘সাধারণত হতাশা’ এবং সেই হতাশা মুখোমুখি পাল্লার অন্যদিকে থাকে একটা ‘ক্লাসিক্যাল উপন্যাসের চরিত্র হবার দুর্দমনীয় ডাক’।
কেবল একজন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষেই কিংবা একজন থটফুল ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব এটা বুঝে নেওয়া যে এই উপন্যাসকেও বাথরুমে যেতে হয় এবং এই উপন্যাসও তোমাকে ঠিক ততোটাই হতাশ করবে কিছুদিনের মাঝে, যেই হতাশ তোমাকে আগেরজন করেছে।
আজকের আলাপের প্রিয় লেফটওভার বন্ধু আপনি। আপনিও এতো আলাপ দেইখা ভাইবেন না আপনি খুব মারভেলাস ব্যক্তিত্ব। এই আলাপেই কিন্তু সেটার প্রমাণ আছে। আপনিও নিজের পার্সোনাল গ্রোথের দিকে নজর দেন। শুধু এইটা মাথায় রাখেন- নিজেরে সাবেকের বর্তমান বন্ধুর সাথে তুলনা করা বাদ দেন। বরং নিজেকে মানুষ হিসেবে উন্নত করার জন্য জীবন দিয়ে পাওয়া এই শিক্ষাটাকে কাজে লাগান।
কিশিমি শেষে এসে অস্ট্রেলিয়ান তাত্ত্বিক মনোবিজ্ঞানি আলফ্রেড অ্যাডলারকে সামনে এনে বলছেন, ‘আমরা মানুষেরা কখনোই আমাদের বেঁধে দেওয়া অতীতের পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকার চিজ নই। ভবিষ্যতে আমাদের সাথে কি হবে সেটা আমরা নির্ধারণ করছি বর্তমানে আমাদের বোঝাপড়া কি সেটার ওপরেই। ফলে একটা প্রশ্ন যখন আপনার ওপর অথরিটি নিতে চায়- তখন আপনি নিজের ‘যেকোন সিদ্ধান্ত’ নিতে পারার যে অসীম ক্ষমতাশালী অথরিটি আপনার আছে (যেই অথরিটি ব্যবহার করে আপনি নিজের প্রাণও সংহার করতে পারেন) সেই অথরিটিকে সামনে এনে সেই হাতির পিঠে উঠে বসুন এবং যেই শিক্ষা নিজের জীবন দিয়ে লাভ করলেন সেটা দিয়ে অন্য কারো দুঃখকে মীমাংসা করুন।’
আরও পড়ুন: সে তো প্রথম প্রেম, কখনো ভোলার নয়!
নির্বাণ লাভের পর বুদ্ধ যে মৃত্যুকে আলিঙ্গন না করে থেকে গেলেন, থেকে গেলেন এই বিশ্বে তার অন্য সাথীদের দুঃখকে কিছুটা লঘু করার প্রচেষ্টায়, এই থেকে যাওয়াটা কিন্তু বুদ্ধের জন্য কষ্টদায়ক হয়েছিলো। তবুও উনি থেকে গিয়েছিলেন এম্পেথি থেকে।
ঠিক একইভাবে আপনি যখন আজ নিজের জীবন দিয়ে, নিজের জীবন সংহার করে দুঃখ থেকে মুক্ত হতে চাচ্ছেন; আপনাকেই বলছি, আপনার এই প্রচেষ্টায় আপনি দুঃখ মুক্ত হবেন এটা আমি নিশ্চিত না। কারণ আমি তো এটা করি নাই, কিন্তু আপনি যদি একটু কষ্ট করে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকেন, যদি আপনার বোধ দিয়ে দু’টো মানুষকে অন্তত ফিরিয়ে আনতে পারেন ফাঁসিকাঠ থেকে, তাহলে দেখবেন কত মায়ের অশ্রু মুছে যাবে।
মৃত্যু নিয়ে এতো তাড়া কিসের বন্ধু?
কে কবে এই জগতে সবসময় থেকেছে?
হত্যা আপনি হবেনই সেটা আজ হোক বা কাল। এই সময়টাতে অন্যের দুঃখ নিরসনে কাজ করে দেখেন না একটু। ক্ষতি তো নাই। আর বুদ্ধ তো বলতেসেনই ‘লাভ’ বলতে কিছু নাই। ফলে আপনার হয়তো সেই অর্থে লাভ হবে না, তবে অন্যের করা ক্ষতি মিটিয়ে অসুস্থ পৃথিবীর ক্ষতকে সারিয়ে তুলতে, মন্যুষত্বের ক্ষতকে সারিয়ে তুলতে- আপনার কিছুটা অবদান থাকবে।