১৭ আগস্ট ২০২০, ২১:১৬

ইতি বিথীকা

  © টিডিসি ফটো

এই তো আছি বেশ!
রঙিন খামে তুলে রাখা
তোমার লেখা প্রথম কবিতা,
আর রং তুলির সেই আদর জড়ানো
তোমার দস্যু চোখের ছবি খানা,
আমার কোমল জলের গভীর অতলে
খুব যত্নেই আছে যে বেশ।

পথের সারির সেই শেষ পদচিহ্ন
খুঁজে পাই না হয়তো যে আর!
সুখ সাগরের স্রোতে ভেসে
এক নিমিষের মাতাল ঝড়ে,
হারিয়ে গেছে বেশ অনেক আগেই।
সেই হেঁটে চলার শেষ পথটাও
মন কুঠরে যত্নে আছে বেশ।

লাল পাঞ্জাবির সেই বোতামখানা
এখনো থাকে সঙ্গে আমার।
তোমার আঙুল ছুঁতে ইচ্ছে হলে
সেই বোতামের স্পর্শে যে আমার,
তোমার ছোঁয়ার স্বাদ মেটে।
তোমার গল্প লেখার ফর্দগুলো যে
আমার সঙ্গে এখনো দিব্যি থাকে।
ঘুম না এলে দুই চোখেতে
চোখ বুলিয়ে সেই কাচা গল্পগুলোতে
দু’চোখেতে ঘুম যে মেলে।

তোমার মিথ্যে কথার শব্দগুলো
বড্ড জ্বালায় রাত-বেরাতে।
কর্ণকুহরে সব সময় যে
বৃষ্টির মতই বাঁজতে থাকে।

তোমার চাঁদনী রাতের সঙ্গগুলো
এখনো ভাসায় ব্যাথার জোয়ারে।
বানিয়ে বানিয়ে গল্পগুলো
কেউ শোনায় না এখন যে আর।

তোমার শাপলা তোলা সকালগুলো
মনের উঠোনে লাঙ্গল চষে।
মিথ্যে কথার সত্য বশে
বশীভূত হওয়ার এক গল্প যে।

তোমার বৃষ্টি মাখা বাদল দিন
আর নদীর জলের সেই ডুব সাঁতার।
ডানপিঠে এক বাঁদর সেজে
আমায় নিয়ে দিতে নদীতে ঝাপ।
ক্যামনে ভুলি বলো?
হাজার পাপে মরুর তাপে
সয়ে যাই সহসা সেই স্মৃতিগুলো।

তোমার কলেজ ফাঁকির সেই দিনগুলি
বেশ বড্ড ছিলো আমার।
পার্কে পার্কে বেড়িয়ে ঘুরে
হতো যে সেইদিন পার।

স্মৃতি যেন মৃত্যু সম
আমায় কাঁদায় বেশ।
আর সুখ স্মৃতি যে বড্ড তেতো!
না যায় ভোলা, না যায় ফিরে পাওয়া।

বাবার ক্যান্সার হয়েছিলো।
আর মায়ের হার্ট ফেল।
ছোট ভাইটা তর্কে জড়িয়ে
মরে পড়লো পুলিশের হাতে।
পুলিশ বলে নজুর হাতে নাকি অস্ত্র ছিলো?
গুলি করে মেরে দিয়ে এনকাউন্টারের গল্প হলো।
অনেক লড়েছি আমি! অনেক দৌড়িয়েছি!
মেজো ভাই আর বড় ভাই পরে লড়ছিলো।

আট কপালে হয়ে আমি গেলাম চাঁদের ঘরে
সে চাঁদ যে আমার ডুবে গেলো সন্ধ্যে রাতে তে।
আমার চাঁদের আলোয় আর স্নান হয়নি।
আমার সপ্ত ডিঙার পুকুরটি এখনো জলে ভরা।

ভেবেছি তোমাকে আর মনে করবো না।
কিন্তু কেন জানি মিথ্যে কথা যায় না ভোলা।
কলজে বসে বকুল তলায়
তুমি না পড়ছিলে রবীন্দনাথ।
‘শেষের কবিতা’ পড়ে তুমি
বলেছিলে আমায়, আমি নাকি
হবো তোমার দিঘির জল!
আমি না সেদিন বিশ্বাস-ই করিনি!
মিথ্যে ভেবে কত হেসেছিলাম!
দেখো সেই মিথ্যে আজ কত সত্য!
তোমার ঘরে ঘটে তোলা জল
আর বিথীকার মন দিঘি হয়ে উতাল।

শিকল ভেঙ্গে ফেলার ইচ্ছে অনেক হয়েছে।
তোমার কাছে উড়াল দিতে খুব ইচ্ছে হয়েছে।
কিন্তু মনে সাহস আসেনি, জানো?
তবে থাকনা তোমার ঘটে তোলা জল।
আমাকে যে দিঘি বানালে
তোমার মিথ্যে কথার মিথ্যে জালে।
আমি সেই অভিশাপেই দিঘি হয়েছি
সন্ধ্যে রাতেই চাঁদকে হারিয়েছি।

থাকনা তোমার ঘটের জল
আমার তাতে কী? আমার দিঘি তো খালি?
তোমার ঘটের জলে আমার কিছুই যায় আসেনা।
তুমি আমার দিঘির জলে এসো।
আমার দিঘির জলে ডুব সাঁতারে
তুমি ডুবে থাকো।
আমার পাহাড়ের শেষ চূড়াটি তুমি দখল করে নাও।
তোমার নিশানের সবটুকু ছাপ,
আমার পাহাড় চূড়াতে দাও।
আমার ঝর্ণা ধারার প্রবল স্রোতে
তোমার উষ্ণ প্রেমের প্রমাদ ডিঙা বাও।
আমার কালো নদীর স্বচ্ছ জলে
তুমি ডুবে যাও।

তুমি এসো, তুমি এসো।
আমার সবটা জুড়ে তুমি।
ঘটের জলকে ঘটে রেখে
তুমি তোমার দিঘিতে এসো।
আমি তোমার সেই দিনের মিথ্যে কথাতেই দিঘি হয়েছি।
এই দিঘিতে ডুবে যাও, ডুব দাও, সাঁতার দাও।
তুমি এসো কিন্তু!
সব শেকড়ের গোঁড়া পেছনে ফেলে।
ইতি বিথীকা।

 

কবিতা লেখক:
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ