পরিণীতা: সমান্তরালে চলে না প্রেম আর যুক্তি
রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত রোমান্টিক ও নাটকীয় সিনেমা পরিণীতায় (পশ্চিমবঙ্গ) অভিনয় করেছেন শুভশ্রী, ঋত্বিক চক্রবর্তী, আদ্রিত ও গৌরব। প্রায় ২.৩০ ঘণ্টার এ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
খাঁটি প্রেমের গল্প। প্রেম আর যুক্তি যে বেশিরভাগ সময় সমান্তরালে চলে না, এ সিনেমাতেও সেটাই হয়েছে। প্রথম প্রেমের অনুভূতি আর বিফলে রাগ-অভিমানের পাহাড়সম জোর। কিন্তু চঞ্চল মানুষগুলো আবার দায়িত্ব কাঁধে পড়লে হয়ে যায় গম্ভীর। তবে থেকে যায় তাদের হৃদয়ের কিছু হিসাব। অনুভূতি নির্ভর একটি প্রেমের গল্পের ব্যতিক্রম প্রতিচ্ছবি পরিণীতা। নায়িকা প্রধান চরিত্রের এ সিনেমায় চরিত্র সংখ্যাধিক্য নেই। মেকআপহীন ও অন্য এক শুভশ্রীকে দর্শক আবিষ্কার করবেন সিনেমাটিতে।
কাহিনী সংক্ষেপ
উত্তর কলকাতার সহজ সরল অষ্টাদশী মেয়ে মেহুল বোস (শুভশ্রী) প্রেমে পড়ে প্রতিবেশী বাবাইদা’র (ঋত্বিক)। কাছাকাছি থাকার চেষ্টাতে বাবাইদার কাছে প্রাইভেট পড়া। ছেলের বিয়ের জন্য রাজী করাতে মা মেহুলকে অনুরোধ করলে মেহুল উল্টো সে মেয়ের নানা বদনাম করে বাবাইদার কাছে। প্রেমের ছবক নিতে বান্ধবীদের নানা ধান্দাও শুনে মেহুল। কিন্তু একতরফা এ প্রেম ধাক্কা খায় দোল যাত্রার দিনে। সেদিন বাবাইদা মেহুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় তার প্রেমিকাকে। হৃদয় ভাঙার আর্তনাদে হাহাকার করে ওঠা মেহুলের সঙ্গে তখনই ঘটে বিশেষ ঘটনা। আবিরের কৌটায় সিঁদুর ঢেলে নিয়ে গিয়েছিল চঞ্চলা মেহুল। বাবাই সেটা আবির ভেবে মাখিয়ে দেয় তার মাথায়!
সেদিন থেকে বাবাইয়ের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয় মেহুল। যোগাযোগহীন থেকে পড়ালেখায় মন দেয়। এলাকার সেরা ফল নিয়ে বাসায় ফিরে জীবনের সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত খবর পায় মেহুল- আত্মহত্যা করেছে বাবাই। তার কিছুদিন আগে রাস্তায় ধরে মেহুলকে একটা চিঠি দিয়েছিল বাবাই। এ মৃত্যু পুরোপুরি বদলে দেয় চঞ্চলা মেহুলের জীবনের গতিপথ। ভারী ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে মেহুল। দেখাশুনার ভার নেয় বাবাইয়ের অসুস্থ মায়ের। চাকরি নিয়ে কাঁধে তুলে নেয় বাবা, মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে গড়া নিজ পরিবারকেও।
কী কারণে আত্মহত্যা করেছিল বাবাইদা? এভাবেই কি এগিয়েছে মেহুলের জীবন? আর কোনো পুরুষ কি আসেনি মেহুলের জীবনে? বাবাইয়ের চিঠিতেই বা কী ছিল। সেই সিঁদুর মাখানোর কথা কি ভুলে গিয়েছিল মেহুল? নাকি যত্নে রেখে দিয়েছে মনের কুঠুরিতে? জানতে হলে দেখতে হবে পরিণীতা সিনেমাটি। রোমান্টিক ব্যক্তিদের জন্য তো অবশ্য দর্শনীয়।
সমালোচনা
*কলেজে পড়া মেহুলের পরনে মিনি স্কার্ট/ফ্রক। বাঙালী মেয়েরা ঘরেও অতোটা ছোট ফ্রক পরে না। সেখানে প্রাইভেট পড়তে যাবার সময়ও এমন ফ্রক দৃষ্টিকটু ও বেমানান।
* পুলিশ বাবাইকে আটক করে নিয়ে গেলেও প্রতিবেশীরা সেটা বুঝতে না পারা অবাক করে। বিশেষ ছাদ ও জানালা দিয়ে বাবাইয়ের দিকে সর্বক্ষণ নজর রাখা মেহুল কিভাবে এটা এড়িয়ে গেলো?
*দ্বিতীয় ভাগে চিত্রনাট্য মাঝে মধ্যে কিছুটা গতি হারিয়েছে বলে মনে হয়েছে। প্রথম ভাগ যেভাবে তরতর করে এগিয়েছে, সেটা দ্বিতীয় ভাগে থাকেনি। যদিও গল্পের প্লট পরিবর্তন হয়েছে, তবুও আরেকটু ঘষামাজা করতেই পারতেন রাজ চক্রবর্তী।
* সিনেমার অর্ধেকের আগেই বাবাই দার (নায়কের) মৃত্যু। ট্র্যাজিক পরিণতি দেখাতে গিয়ে এতো আগে নায়ককে মেরে ফেলা সেটাও ঋত্বিকের মতো অভিনেতাকে। যদিও মেহুলের ছাদে ও পথে একাকিত্বের সময় কাল্পনিক বাবাইকে পাশে রেখে সেটা অনেকটা কাটাতে পেরেছেন পরিচালক।
মতামত
ছবির গানগুলোর কথা ও দৃশ্যায়ন বেশ মানানসই ও আকর্ষণীয়। একটু অন্যরকম আবহে ছবিটা তৈরি করার চেষ্টায় সফল হয়েছেন পরিচালক। কিন্তু গল্পকে পুরোপুরিভাবে এক সুতোয় বেধে রাখতে পারেননি। আমার রেটিং: ৭.৫/১০।