২৯ জুলাই ২০১৯, ২১:১৮

বুক রি‌ভিউ: সমান্তরাল বাঁধন

বই‌য়ের ফ্ল্যা‌পের লেখা:
সম্পর্কগু‌লো হওয়া উচিৎ বৃ‌ত্তের মত। হোক সম্প‌র্কের শুরুটা সমান্তরাল কিন্তু কোথাওনা কোথাও কোন এক মো‌ড়ে গি‌য়ে সমান্তরাল রেখা‌কে বক্র ক‌রে দি‌তে হ‌বে যা‌তে সমান্তরাল সম্পর্কটা ধী‌রে ধী‌রে বৃ‌ত্তের মত রূপ নেয়।
সম্প‌র্কের আর প‌রিবা‌রকে আলাদা করা সম্ভব নয়। কারন প‌রিবার থে‌কে সম্পর্ক আর সম্পর্ক থে‌কেই প‌রিবার। সম্পর্ক যেমনই জ্যা‌মিতিক রেখায় হোক না কেন, সমান্তরাল, বক্র, বৃত্ত সেখা‌নে পরি‌বা‌রের সা‌পোর্ট দরকার। সম্পর্ক হোক সমবয়সী বা বড় ছোট কিন্তু পরিবা‌রের সহয়তা পে‌লে তা হ‌য়ে ওঠে পৃ‌থিবীর সব চে‌য়ে সুন্দর সম্পর্ক।
টুপটাপ বৃ‌ষ্টি, একজোড়া নীল চো‌খের গভীরতা আর এক জোড়া কৃষ্ণ চো‌খের বিস্ময়। চলমান রিকশার টুংটাং শব্দ। হৃদস্প‌র্শি অনুভূ‌তি আর সাম‌নে ধেয়ে আসা হয় অনি‌শ্চিত অথবা সুন্দর ভ‌বিষ্যৎ। তবুও ঝুম বর্ষায় জীবনের অনুভূ‌তির রিকশা নিজ গ‌তি‌তে এগি‌য়ে চ‌লে গন্ত‌ব্যের প‌থে। ত‌বে গন্ত‌ব্যের পথ সে তো বহু দূর।

বই‌য়ের কিছু অংশ:

জা‌নিস অথৈ একজন প্রকৃত পুরুষ কা‌কে ব‌লে?
কা‌কে?
—প্রকৃত পুরুষ তা‌কেই ব‌লে, যে ব্য‌ক্তি তার স্ত্রীর সন্তান সম্ভবা জানার পর তার খেয়াল ঠিক বাচ্চার মত রা‌খে। যে বো‌ঝার চেষ্টা ক‌রে মা হবার কষ্ট। যে বু‌ঝে তার স্ত্রী সন্তান‌কে দশমাস গ‌র্ভে পালন ক‌রে। তাই তা‌কে তার সন্তান‌কে ম‌স্তি‌ষ্কে পালন কর‌তে হ‌বে। তার স্ত্রী দশ মাস সন্তা‌নের অস্তিত্ব পে‌টে অনুভব করে কিন্তু সেই ব্য‌ক্তির পু‌রো ম‌স্তিষ্ক জু‌ড়ে সন্তান‌কে অনুভব কর‌বে।
স্ত্রী যখন প্রসব যন্ত্রনায় কাতরা‌বে স্বামী তখন ম‌স্তি‌ষ্কে অসহ্য যন্ত্রনা হ‌বে। ভয় আর খু‌শির অনুভূতি মি‌শে একাকার হ‌বে তার ম‌স্তি‌ষ্কে। ভয় হ‌বে নতুন প্রাণ‌টি‌কে দেখার জন্য না আবার তার প্রাণ প্রিয় স্ত্রী‌কে হা‌রিয়ে ফেল‌তে হ‌বে। খু‌শি লাগ‌বে তার অং‌শে গড়া ছোট্ট অস্তিত্ব‌কে ছুঁ‌য়ে দেখার। প্রকৃতি কিভা‌বে ছোট্ট ভ্রুন‌কে মানব রূ‌পে দান ক‌রে তা দে‌খে আশ্চর্য্য হবে।
যখন সন্তান পৃ‌থিবীর আলো দেখ‌বে তখন ঠোঁ‌টে হা‌সি চো‌খে কান্না নি‌য়ে পরম ভা‌লোবাসায় স্ত্রীর মাথায় হাত‌ রে‌খে বল‌বে, এই যে দে‌খো আমা‌দের দুজনার ভা‌লোবাসার অংশ। তখন তার স্ত্রী ‌যে তৃপ্তির হা‌সি দি‌বে আর সে হা‌সি ব‌লে দি‌বে, সে একজন পরিপূর্ণ পুরুষ। আর তখনই কোন ছে‌লে নি‌জে‌র বু‌কে হাত রে‌খে নি‌জে‌কে পুরুষ দা‌বি কর‌তে পা‌রে।
নয়ত দু ফোটা স্পার্ম দি‌য়ে একটা মে‌য়ে‌কে গর্ভবতী কর‌তে পার‌লেই সে পুরুষ হয়না। বাবা মা, ভাই বোন, আর স্ত্রী‌কে নিজ নিজ অবস্থানে রে‌খে যে ভা‌লোবাস‌তে জানে সেই হ‌লো স‌ত্যিকা‌রের পুরুষ। বুঝ‌লি?
— বাপ‌রে! আদ্র তুই এতসব কী ক‌রে জা‌নিস?
—বাবা বু‌ঝি‌য়ে দি‌য়ে‌ছেন।
—তোর বাবা তো‌কে এসব বু‌ঝি‌য়ে‌ছে?
—হ্যাঁ। আমার মা বাবার সা‌থে আমি খুব ফ্রি। বাবা সবসময় সব জি‌নিস আমা‌কে বু‌ঝি‌য়ে দেয়। আর সেটা অনেক আগে থে‌কে। তার ম‌তে একটা গাছ কতটু‌কো বড় আর সুন্দর হ‌বে তা নির্ভর ক‌রে প‌রিচর্যার উপর। তেমন সন্তান বড় হ‌য়ে কেমন হ‌বে তা নির্ভর ক‌রে বাবা মা‌য়ের শিক্ষার উপর। জা‌নিস স্বামী স্ত্রী হোক বা পা‌রিবা‌রিক সম্পর্ক হোক বাবা আমায় সুন্দর ভা‌বে সব বু‌ঝিয়ে দেয়। মা সবসময় বুঝায় মে‌য়ে‌দের সম্মান করা। আর বাবা তো সবসময় ব‌লে যে নারী জা‌তি‌কে সম্মান কর‌তে জা‌নে না সে মানব না‌মের কুলাঙ্গার। আর আমার বাবা মা চায় আর উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আগে একজন উন্নত মানুষ হই।

কিছু হা‌স্যকর মুহূর্ত:

—হ্যা‌লো আসসালামু আলাইকুম।
—ওয়ালাইকুম আসসালাম।
—কে বল‌ছেন?
—তোর বাচ্চার হবু বাবা।
—স‌রি রং নাম্বার।

লিফ‌টে উঠে আদ্র বলল, মা‌হি ওদি‌কে তাকা আমি তোর বোনকে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌বো। নয়ত ছোট বো‌নের সাম‌নে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লে আমার লজ্জা কর‌বে। জা‌নিসই তো আমি খুব লাজুক ছে‌লে।

এরকম অনেক হাসিমজা, বন্ধু‌দের আড্ডা সম্পর্ক নি‌য়ে শিক্ষানীয় মো‌টি‌ভেশনাল দিক নি‌য়ে র‌চিত সমান্তরাল বাঁধন উপন্যাস। আমা‌দের দে‌শে সমবয়সী সম্প‌র্কের নাম শুন‌লেই সবার মু‌খে একটাই কথ‌া, এটা ঠিক সম্পর্ক না। আস‌লেই কী ঠিক না?

সমবয়সী সম্পর্ক নি‌য়ে আমা‌দের সবার ম‌নেই বহু কাল ধরেই নানা রকম প্রশ্নে জর্জ‌রিত। কা‌রো কা‌ছে সমবয়সী সম্পর্ক মা‌নে খুব বা‌জে, কা‌রো কা‌ছে মোটামু‌টি, আর কা‌রো কা‌ছে খুব ভালো। আপ‌নি য‌দি কাউকে জি‌জ্ঞেস ক‌রেন সমবয়সী সম্পর্ক খারাপ নাকি ভা‌লো? আমি নি‌শ্চিত দি‌য়ে বল‌তে পা‌রি বহু মানুষ বল‌বে খারাপ। কিন্তু কেন খারাপ? কী কার‌নে খারাপ? কেন ভা‌লো? বা কী কার‌নে ভা‌লো? সে সম্প‌র্কে বিস্তা‌রিত ৩০% লোকও বল‌তে পার‌বে না। আর সেই সবার জানা অজানা বিষয় গু‌লো আর সমবয়সী সম্প‌র্কের টানাপোড়া নি‌য়েই নি‌য়ে র‌চিত সমান্তরাল বাঁধন।

সমবয়সী সম্পর্কটা সমান্তরাল রেখার মত। অনেকটা রেললাই‌নের মত। যারা সারা জীবন সা‌থে থে‌কে পাশাপা‌শি চ‌লে কিন্তু ঠিক কোন বিন্দু‌তে গি‌য়ে মি‌লিত হয় তা কেউ জানে না। তা‌দের ভ‌বিষ্যৎ থা‌কে অনি‌শ্চিত
দিগ‌ন্তের মত। দিগ‌ন্তের যেমন কোন প‌রিসীসা নেই তেম‌নি এই সম্প‌র্কের সমা‌প্তি অনেকটা আবছায়ময়। আর য‌দিওবা কোন প্রান্তে গি‌য়ে মি‌লে, ত‌বে কিভা‌বে মি‌লে? তার পিছ‌নের কা‌হিনী কী? আদৌ কী মিলে? না‌কি মিল অমিল আর অপ্রা‌প্তি‌তে কে‌টে যায় সারা জীবন। সকল দিক গভীর ভা‌বে ভে‌বে উপন্যা‌সের নাম হ‌য়ে‌ছে সমান্তরাল বাঁধন।

বই‌য়ের নাম: সমান্তরাল বাঁধন
ধরন: উপন্যাস
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী