বাবার জন্য
মা রে এ বয়সে বিয়ে করে লোক হাসানোটা কি খুব বেশি জরুরি? হ্যাঁ বাবা বিয়েটা জরুরি কিন্তু লোক হাসবে সেটা তোমাকে কে বলল?যেখানে মেয়ের বিয়ের বাকি পাঁচ মাস। সেখানে মেয়ের বিয়ের পাঁচ মাস আগে মেয়ের বাবার বিয়ে করাটা কি লোক হাসানো টাইপ হয়ে যাচ্ছেনা? মোটেও না বাবা।
তোর কি একজন মায়ের খুব বেশি প্রয়োজন? কই এত বছর তো প্রয়োজন হল না! আমার মায়ের প্রয়োজন নেই বাবা, কিন্তু তোমার একজন স্ত্রীর প্রয়োজন আছে। এতবছর আমি তোমার কাছে ছিলাম কিন্তু তুমি তো আমায় কমাস পর বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছো। ওরা তো আর আমার সাথে তোমায় নিবেনা। তখন তুমি একা কিভাবে থাকবে?
আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে, একা থাকতে পারবো না! বাবা ক্লাস থ্রী এর ইংরেজী বইয়ের প্যারাগ্রাফটা পড়োনি ‘‘ম্যান ক্যান নট লিভ এলন’’। কোন মানুষ চাইলেও একা থাকতে পারেনা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন মানুষের হাত হলে চলার পথ সহজ থেকে সহজতর হয়ে যায়। এতদিন তো আমি ছিলাম। কিন্তু এখন তো আমাকে নিজের সংসার ধর্ম পালন করতে হবে। গতানুগতি জীবনের যে এটাই নিয়ম। সংসার ধর্ম পালন না করলে তো মানব জনম স্বার্থক হবেনা বাবা। আমি তো আমার সংসারে যাবো কিন্তু আমার বাবাকে কার কাছে রেখে যাবো?
তবুও মা এসব এর দরকার নেই।অবশ্যই দরকার আছে। এতদিন তুমি আমার বাবা মা দুজনার ভূমিকা পালন করেছো। এবার নাহয় নতুন মা এনে মাকে মায়ের দায়িত্ব পালন করতে দাও।সে যদি তোকে মেয়ের মত না দেখে? তাতে কি আমি তো তাকে মায়ের মত দেখবো। তাতেই হবে। শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি এসে অন্তত কাউকে মা বলে ডাক তো দিতে পারবো।
তোর শ্বশুর বাড়ির লোক যদি এটা নিয়ে আপত্তি করে? যদি তোর সাথে বিয়ে ভেঙে দেয়? তাতে কি? বাবা তুমিই তো বলো, আল্লাহ সবার জীবন সঙ্গী শুরু থেকেই নির্ধারন করে রাখছে। যদি ওর সাথে আমার জুটি আল্লাহ না বাঁধে তবে তো সত্যি বিয়ে ভেঙে যাবে। যার সাথে আল্লাহ নাম মিলিয়ে রাখছে তার সাথেই বিয়ে হবে। এটা নিয়ে তুমি চিন্তা কর না। যারা আমার বাবাকে ভালোবাসতে পারবে না আমার তাদের সন্নিধ্য চাইনা। তৈরী হয়ে নাও আমাদের রেজিট্রি অফিস যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে।
আরেকবার ভেবে দেখ মা।বাবা গত দু মাস যাবত তুমি একই কথা বলছো। তৈরী হয়ে নাও ছোট মায়েরা রেজিট্রি অফিস পৌঁছে গেছে। ছোট মাকে নিজ হাতে বরন করে ঘরে তুললাম। আজ মনে এক অজানা প্রশান্তি পাচ্ছি। আমি শ্বশুর বাড়ি গেলেও আমার বাবাকে এত বড় বাড়িতে একা থাকতে হবেনা। তার ঔষধ খাওয়ানো থেকে তার প্লেটে খাবার তুলে দেবার মত একজন সঙ্গী পেয়েছি। আমার মাকে আমি পেয়েছি। আমার মা। আমি নিজের জন্য মা নয়, বাবার জন্য সঙ্গী এনেছি।
বি:দ্র: উক্ত গল্পের সমস্ত কাহিনী, চরিত্র, স্থান সম্পূর্ণ কাল্পনিক।