আমাদের খালেদ
আমাদের একটা খালেদ ছিল ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে
সেইখানে ছিল উত্তাল হাওয়া লাগত এসে গায়ে।
সবুজ শিশির বিন্দু জলে চলত খালেদ হেসে
নবীন সূর্যের নবীন আলোয় মিশ তো সবার সাথে।
ধানের শীষে ধুলোয় মাখা দেখত গাঁয়ে গাঁয়ে
রঙিন রৌদ্রের মিষ্টি হাসি দেখত ফিরে ফিরে।
নাচত খালেদ দেখত খালেদ যমুনার ই জল
তাহার কূলে পাইত খালেদ আনন্দেরই ঢল।
কাঁদত খালেদ বুঝত খালেদ গরীব-দুঃখীর ব্যথা
তাদের জন্য করত পণ আছে যত সদা।
গাঁয়ের ছেলে ছিল খালেদ বক্ষে ছিল বল
তাহার পানে চলত ছুটে গরীবেরই দল।
আসত বন্যা লাগত খরা যমুনারই পাড়ে
মন্দা আসত শত শত দশানিরই কূলে।
অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী ব্রহ্মপুত্রের ধারে
তাইতো খালেদ আসত সেথাই খাদ্য হাতে নিয়ে।
শাসন করল শোষণ করল পাকিস্তানির দল
সেই শোষণে ধ্বংস হল বাংলাদেশের গণ।
কুলি মজুর মরল সবাই তাদেরই না হাতে
তাই না দেখে খালেদ কাঁদে ঘরের কোণে বসে।
সোনার দেশের সোনার ফসল নিয়ে গেল তারা
মানুষ মরে নিত্য নিত্য দেশের হলো সারা।
প্রতিবাদের নেশায় খালেদ খেপে উঠল ক্ষোভে
স্বাধীন করবে মুক্ত করবে বুড়িগঙ্গার ধারে।
হঠাৎ স্বাধীনতার ডাক আসিল বেতার কেন্দ্র থেকে
তাই তো খালেদ ছুটল দমে বন্দুক কাঁধে নিয়ে।
মারল খালেদ ছুটল গুলি শত সেনার বুকে
স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনতো তাঁরই রঙিন চোখে।
মরছে মানুষ ধুকছে মানুষ তাঁরই আশেপাশে
হাহাকারের সুর নিয়ে চলছে দিনে দিনে।
হঠাৎ একদিন পেল খালেদ সেক্টরেরই কাজ
দিনে দিনে বাড়ল তাহার মুক্তিযুদ্ধের চাপ।
সঙ্গী সাথী সবাই মরে খবর আসে কানে
তবুও উদ্যম হয়ে ছুটছে খালেদ দেশ স্বাধীনের টানে।
কাঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীন করল দেশ
স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ লাগল তাঁর বেশ।
দেশের হাসি বিজয় পতাকা উড়ে ঊর্ধ্বাকাশ
তাই না দেখে খালেদ হাসে ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস।
একদিন দু’দিন পরে শাসক গোষ্ঠী আসে
তাই না দেখে ঘাতকেরদল ষড়যন্ত্র বুনে।
হঠাৎ একদিন শুনে খালেদ শাসক গোষ্ঠী শেষ
সেই বেদনায় চোখে-মুখে অশ্রু নিয়ে গদিতে বসে বেশ।
একদিন দু’দিন তিনদিন পর আমাদের বীর উত্তম নাই
আর্তনাদের অশ্রুর সাথে আসে মুক্তিযুদ্ধের ছাই।
স্বাধীন স্বাধীন করছেন যিনি আমাদের জন্য ভাই
সেই খালেদের কথা আমাদের স্মরণে নাই।
জাকির হোসেন বিপ্লব
বাংলা বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট