২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:২৮

শেখ হাসিনা নিজে দুর্নীতি করেছেন, দুর্নীতিবাজদের পুরস্কৃত করেছেন: বিচারক

শেখ হাসিনা  © সংগৃহীত

রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। একই সাথে তিনি নিজে দুর্নীতি করেছেন এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরস্কৃত করেছেন বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারক। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

এর মধ্যে দ্বিতীয় মামলায় হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় মামলাটিতে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রতিটি মামলায় শেখ হাসিনাকে ৭ বছর করে মোট ২১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, প্লট বরাদ্দ চেয়ে শেখ হাসিনা আবেদন করলেও কোনো অ্যাফিডেভিট দেননি। পরে রাজউক থেকে শেখ হাসিনার কাছে অ্যাফিডেভিট চাওয়া হয়। তিনি অ্যাফিডেভিট দেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক তিনি তার স্বামীর নামে আগে থেকে যে প্লট বরাদ্দ ছিল, তা তিনি উল্লেখ করেননি। এটা এক ধরনের প্রতারণা। তার স্বামী মো. ওয়াজেদ মিয়া একজন গ্রেটেস্ট সায়েনটিস্ট ছিলেন। তাকেও এই দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: প্লট দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা ও তার সন্তানদের দণ্ড, রায়ে যা বলেছেন আদালত

বিচারক বলেন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, তোমরা অন্যায় করলেও আমি তোমাদের পুরস্কৃত করব। রাজউক গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। প্রতিমন্ত্রী (তৎকালীন) সবকিছু জানা সত্ত্বেও তিনি বাধা দেননি। আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। দুর্নীতিবাজদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। কিন্তু যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়নি তারা চাকরি জীবন নিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে প্রকৃতরা যেন প্লট বরাদ্দ পান, সে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আদালত বলেন, ‘শেখ হাসিনার সম্পদের প্রতি লোভ আছে। উনি বরাদ্দ না চাইলে কাগজ ছুড়ে ফেলতে পারতেন। প্লট না নিতে পারতেন। ওনার লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, ল মিনিস্টার আছে। তাদের দিয়ে মানা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেন। এক্ষেত্রে রাজউক, গৃহায়ন মন্ত্রণালয় ও শেখ হাসিনা অপরাধ করেছেন। শেখ হাসিনা প্রতারণা করেছেন।’

এসময় আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের জন্যই এদেশে বিপ্লব হয়েছে। এ সকল অনিয়ম সামনে এসেছে। এটি আপনাদের জন্যও শিক্ষা। ভবিষ্যতে আপনারাও কোন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়াবেন না। এটি আপনাদের নিকট আবেদন।

আরও পড়ুন: তিন মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছর কারাদণ্ড

পৃথক তিন মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৪৭ জন। তবে ব্যক্তি হিসাবে আসামির সংখ্যা ২৩। প্রথম মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জন, দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন এবং তৃতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জন আসামি ছিলেন। তিন মামলায় রাজউকের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকারকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এছাড়া সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে প্রতিটি মামলায় এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত রবিবার রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি। তারা আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি।

প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ছয়টি মামলা করে দুদক। পরবর্তীতে সব মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ইতিমধ্যে তিনটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ ২২ জন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। গত ১০ নভেম্বর শেখ হাসিনা পরিবারের তিন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এরপর ১৭ নভেম্বর আত্মপক্ষ শুনানিতে খুরশীদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। 

এর আগে গত ৩১ জুলাই এ তিন মামলাসহ পৃথক ছয় মামলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের সাত সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।