১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৯:০৬

দুই সন্তানের বাবাকে ‘শিশু’ সাজিয়ে জামিনে মুক্তি

পলাশ রানা  © সংগৃহীত

প্রতারণার মামলায় কারাগারে থাকা দুই সন্তানের জনক ও আলোচিত হ্যাকার চক্রের হোতা পলাশ রানাকে শিশু সাজিয়ে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে —এমন অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে আদালতের নথি জালিয়াতি, আসামির পরিচয় পরিবর্তন এবং শিশু আদালতকে ভুল পথে পরিচালিত করার অভিযোগও রয়েছে। 

মামলার নথি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই সেনাবাহিনীর অভিযানে জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুক কানুপুরে শ্বশুরবাড়ি থেকে পলাশ রানাসহ চারজনকে সরকারি ভাতা হ্যাক করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আটক করা হয়। পরদিন আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। এজাহারে পলাশ রানার বয়স ২৫ বছর উল্লেখ ছিল। পরে ফৌজদারি মামলা নম্বর ৯৩৫/২৫ গাইবান্ধা দায়রা জজ আদালতে জামিন শুনানির অপেক্ষায় ছিল। ওই মামলার এলসিআর (নিম্ন আদালতের রেকর্ড) আদালতে সংযুক্ত ছিল। কিন্তু ৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে একই আইনজীবী ও ল-ক্লার্কের সহায়তায় পলাশ রানার নাম পরিবর্তন করে ‘পলাশ মিয়া’ বানানো হয় এবং নতুন জন্মসনদ তৈরি করে তাকে শিশু (১৭ বছর ৭ মাস) দেখিয়ে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ জামিন আবেদন করা হয়। 

অভিযোগ অনুযায়ী, শিশু আদালতে ওই মামলার এলসিআর না থাকলেও বিচারক মামলাটিকে ‘পেটি কেস’ (ছোটখাটো অপরাধ) ভেবে এবং আইনজীবীর কথায় আস্থা রেখে ‘গুড ফেইথে’ জামিন মঞ্জুর করেন। গত ১২ আগস্ট ধার্য তারিখে পলাশ রানার হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন আদালতে জানা যায়, তিনি শিশু আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই আদালতপাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা বলেন, শুধু আইনজীবী নন, আদালতের অসাধু কর্মচারী ও সেরেস্তাদাররাও এতে জড়িত থাকতে পারেন। আদালতের অনুমতি ছাড়া এমন প্রতারণা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় আদালতের অভ্যন্তরে অসাধু চক্রের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে প্রধান বিচারপতি ও বার কাউন্সিল বরাবর অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।  

আইনজীবী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জালিয়াতি করে আসামি জামিনে মুক্তি পাওয়া লজ্জাজনক। আদালতে এমন ঘটনা চলতে দেওয়া যায় না।

আরেক আইনজীবী আশরাফুল আলম রঞ্জু বলেন, এমন ঘটনা নতুন নয়। আগেও জালিয়াতি করে জামিন নেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ধ্বংস হবে।

বাংলাদেশ নারী মুক্তিকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী বলেন, আদালত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সেখানে যদি জালিয়াতি হয়, তাহলে জনগণ কোথায় যাবে? দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে আইনজীবী শেফাউল ইসলাম রিপন বলেন, আসামির বয়স কম হওয়ায় আদালতে জামিন আবেদন করি। জন্মনিবন্ধন জাল কিনা তা আমি জানি না।