ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য শুরু
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। রবিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বিচারকাজ বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারকাজ চলছে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে এবং মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে। আজকের দিনে সূচনা বক্তব্যের পাশাপাশি মামলার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম শনিবার জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেড় হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যার প্ররোচনা, ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলন দমন, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে সারা দেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এসব ঘটনায় সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি বা সর্বোচ্চ দায়ের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২ জুলাই আদালত অবমাননার এক মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে আরেকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে ১২ আগস্ট।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ বিচারপ্রক্রিয়া।