১৯ জুলাই ২০২৫, ২০:৫৮

গাড়ি কিনতে ২৫ লাখ টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে মারধর, এডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

আসিফ আলী ও স্বীকৃতি রহমান  © সংগৃহীত

গাড়ি কিনতে ২৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় বিসিএস এডমিন ক্যাডারের কর্মরত এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মারধর ও পরনারীতে আসক্তির অভিযোগ তুলেছেন স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতি। অভিযুক্ত মো. আসিফ আলী ওরফে জিভাল বর্তমানে পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরর্ত রয়েছেন। তিনি ৪১তম বিসিএসের এডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় ঢাকা সিএমএম আদালত ও যশোরে পৃথক দুটি মামলার পর স্বামী ক্ষমতা দেখিয়ে তাকে হেনস্তার হুমকি দিয়েছেন বলেন দাবি করেন ভুক্তভোগী। যদিও মো. আসিফ আলী জিভাল তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, বিষয়টি যেহেতু মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে, সে কারণে আদালতেই এর সুরাহা হবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের পুরোনো কসবা বিবি রোড এলাকার বাসিন্দা দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অপর দিকে, খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা মো. আসিফ আলী জিভালও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পূর্বের পরিচিত থেকে পরিচয় ও সম্পর্কের একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ তারা ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন।

তবে উভয়ের এর আগে বিয়ে হয় এবং তারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে এই বিয়ে করেন। চৈতির প্রথম পক্ষে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে, যা দুজনই তাদের অ্যাফিডেভিটে উল্লেখ করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, বিয়ের পর সুখে-শান্তিতে তাদের সংসার শুরু হয়। কিন্তু মাসখানেক যেতে না যেতে জিভাল ওই বছরের ১৯ এপ্রিল একটি গাড়ি কেনার জন্য তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতে না পারায় জিভাল তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করেন। পরদিন তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে যশোরে বাবার বাড়ি চলে যান এবং হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরে সংসার টিকিয়ে রাখতে দুই পক্ষের আপস-মীমাংসার পর তিনি ফের শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান।

এরপর ১৫ নভেম্বর তিনি বাবার বাড়ি বেড়াতে এলে জিভালও আসেন। যশোরে এসেও তিনি গাড়ি কেনার সেই ২৫ লাখ টাকার জন্য ফের চাপ দিতে থাকেন। পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যের কথা জানিয়ে ওই টাকা দিতে পারবে না জানালে জিভাল সেখানেও তাকে মারধর করেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। পরে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন।

চৈতি বলেন, আমাদের দুজনের আগে বিয়ে হয়েছিল; বিষয়টি আমরা দুজনই অবগত। এসব জেনেশুনে আমরা বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই জিভাল পল্লবী নামে আরেক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান। তাঁদের সেই সম্পর্কে বাধা হয়েছি বিধায় যৌতুকের দাবিতে আমাকে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা (নম্বর ১৬২৫/২৪) এবং যশোর আদালতে আরেকটি মামলা (৩১/১০৩) করি।

তিনি বলেন, এসব ঘটনার বিষয় পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসককে অবহিত করি। কিন্তু তিনি কোনো সুরাহা না করায় ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়েছি। সেখানে যৌতুকের দাবিতে মারধরসহ পরনারীতে আসক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আসিফ আলী ওরফে জিভাল বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে কখনো একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সংসার বা থাকা হয়নি। 

তাকে মারধরের কোনো প্রশ্নই আসে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাকে কেন আমি নির্যাতন করবো বা যৌতুক চাইবো। তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে মারধরের যে ঘটনার দিন ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে; ওই সময় আমি সাভারে ট্রেনিংয়ে ছিলাম। বিষয়টি আপনারা যাচাই করে দেখতে পারেন। মূলত আমাকে হেনস্তা করতেই এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। যেহেতু মামলা করেছে, আদালতই বিচার করবেন।

বাদীর আইনজীবী তাহমিদ আকাশ বলেন, ভুক্তভোগী যশোর কোতোয়ালি মডেল থানাতেও অভিযোগ দেন। পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রের্কড হয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, এখনও আসামিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি আদালতে চার্জশীট জমা দেওয়ার ধার্যকৃত তিনটা তারিখেও চার্জশীট জমা দিতে পারেনি।