৮ জুলাই : দাবি আদায়ে সরকারকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম, সমন্বয়ক কমিটি গঠন
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের ৮ জুলাই দ্বিতীয় দিনের মতো সারাদেশে পালিত হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজপথে বিক্ষোভ করেন এবং সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন।
এদিন রাজধানী ঢাকার শাহবাগ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, বাংলামটর, মিন্টো রোড, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকামুখী সড়ক ও রেলপথে অবরোধ গড়ে তোলেন।
এ দিনের কর্মসূচি থেকে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরকারকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন। তিনি জানান, এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে দেশজুড়ে সর্বাত্মক আন্দোলন আরও কঠোর হবে। একইদিনে ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২৩ জনকে সমন্বয়ক এবং ৪২ জনকে সহ-সমন্বয়ক মনোনীত করা হয়।
আরও পড়ুন: ফেসবুক প্রোফাইল ও লাল কাপড় নিয়ে বিতর্ক: নেপথ্যে আসলে কে ছিলেন?
পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক গণসংযোগ এবং বুধবার (১০ জুলাই) সারাদেশে সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার কোনো ব্লকেড থাকবে না। সেদিন আমরা প্রচারণায় যাবো। বুধবার আমরা সারাদেশে একযোগে চূড়ান্ত অবরোধ করব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বাংলামটর, সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিল ও অবরোধে অংশ নেন। তেজগাঁও কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা যুক্ত হন রাজপথে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাবাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক, রায়সাহেব বাজার হয়ে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে গিয়ে জিপিও মোড় অবরোধ করেন। সন্ধ্যায় তারা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুন: ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গাড়ি তুলে দিয়ে হত্যা করা হয় কলেজছাত্র সৌরভকে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে অবস্থান নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রাখেন।
এছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, চট্টগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন ঢাকা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড মোড় অবরোধ করেন।
দিনভর ঢাকাসহ সারাদেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে এই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির কারণে। আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে ডিজিএফআই নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা চালায়। বিকেলে কর্মসূচি শুরুর আগে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও আবু বাকেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে ডেকে নিয়ে গিয়ে কর্মসূচি ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়। তথ্যসূত্র: বাসস