০৩ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনের চিত্র ধারণ করতে গিয়ে নিহত হন রাব্বী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ কামরুল ইসলাম রাব্বী  © টিডিসি সম্পাদিত

জুলাই ২০২৪। গোটা বাংলাদেশ জুড়ে উত্তাল কোটা সংস্কার আন্দোলন। রাজপথে তখন হাজারো শিক্ষার্থী, তাদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত একটাই দাবি—যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ চাই। সেই আন্দোলনের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের তালা পাইদানি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন মাত্র ২১ বছরের তরুণ কামরুল ইসলাম রাব্বী। একটি ক্যামেরা হাতে, ভিডিও ধারণে ব্যস্ত এই মেধাবী তরুণ সেদিন রেকর্ড করছিলেন আন্দোলনের ইতিহাস। কিন্তু মুহূর্তেই থেমে যায় সব। পুলিশের ছোড়া গুলি বিদ্ধ করে তার বুক—এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন তিনি।

কামরুলের বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার পঞ্চাশী গ্রামে, নয়াপাড়া এলাকায়। জন্ম ২০০২ সালের ১১ নভেম্বর। বাবা আব্দুর রহিম, মা রাজিয়া বেগম—এই সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া কামরুল ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী, আদর্শবান ও সমাজ সচেতন। নিজের জীবন নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল, দেশের জন্য কিছু করা। কিন্তু তার সেই স্বপ্নের যাত্রা থেমে যায় নারায়ণগঞ্জের একটি ভবনের সামনে, হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা বুলেটের আঘাতে।

আরও পড়ুন: ‘রিয়াদ বাঁচলে বিসিএস ক্যাডার হতো, সব স্বপ্ন এক নিমিষে শেষ’

কামরুল সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি শুধু একজন সচেতন নাগরিক, যিনি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সচিত্র প্রতিবাদের ভয়হীন সাক্ষ্য রাখতে চেয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যে ২০ জুলাই তিনি সিদ্ধিরগঞ্জে আসেন আন্দোলনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে। কিন্তু সেই দৃশ্য রেকর্ড করতে গিয়ে তিনি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

তার মা রাজিয়া বেগম বলছিলেন, ‘সে বারবার বলত—মা, আমি শুধু তোমার ছেলে না, দেশেরও ছেলে। আজ সে দেশের জন্যই চলে গেল। আমার বুক খালি হলো, কিন্তু আমি গর্বিত।’

স্থানীয়রা বলছেন, কামরুল ছিলেন গ্রামের ভবিষ্যত। যে কিনা ক্যামেরা ধরে সমাজের অন্যায় তুলে ধরতে চেয়েছিল। তার মতো সচেতন তরুণের মৃত্যু শুধুই ক্ষতি নয়—একটি চলমান স্বপ্নের অপমৃত্যু।

আরও পড়ুন: ‘স্বৈরাচার হাসিনা আমার সুখের সংসারটা তছনছ করে দিছে—আমি তার ফাঁসি চাই’

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।