বেশিরভাগ সেতুর পাইলিংয়ের নিচে থাকে পাথর, পদ্মায় ছিল কাদামাটি

অধ্যাপক ড. হোসেন মো. শাহিন
অধ্যাপক ড. হোসেন মো. শাহিন  © টিডিসি ফটো

পদ্মা সেতুর পাইলিং জটিলতায় যখন কাজ বন্ধ হয়ে যায়, তখন এ সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ দলে যুক্ত হন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিইই) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হোসাইন মো. শাহিন। পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞদের দলের সঙ্গে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা ও সেতুর সার্বিক বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক হোসাইন। তার কথাগুলো শুনেছেন আইইউটি প্রতিনিধি তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পদ্মা সেতুর মতো এত বড় মেগা প্রকল্পে আপনি কীভাবে সম্পৃক্ত হলেন?
ডক্টর হোসাইন মো. শাহিন: ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর ৬ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। এরপর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের তিনটি করে ৬টি পাইলের নিচের দিকে কাজ করতে গিয়ে নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর পাওয়া যায়।

তখন দুটি পায়ের ওপরের কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে আরও ২১টি পিলারের পাইল বসানোর সময় তলদেশের কাদামাটি পাওয়া যায়। তখন প্রকল্পের সবাই পদ্মা সেতুর পাইলের এই সমস্যার সমাধান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এজন্য দীর্ঘদিন এ প্রান্তের কাজ বন্ধ ছিল। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আমাকে পাইলিং সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ দলে নেওয়া হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সেতু নির্মাণে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় কি ছিল? 
ডক্টর হোসাইন মো. শাহিন: পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ আগাগোড়াই চ্যালেঞ্জ। নির্মাণ কাজের প্রতিটি পর্বেই কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জ এসেছে। এখানে নদীশাসন যেমনটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, তেমনি নদীর তলদেশে পাথর না থাকায় পাইলিং করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ২৫ জুন

আমাদের নকশাও পরিবর্তন করতে হয়েছে। এজন্য অনেক জটিলতা দেখা দেয়। পাইলিং উপরিভাগে স্ক্রিন গ্রাউটিং করে (অতিমিহি সিমেন্টের স্তর) পাইলের ওজন বহন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। পিলার এবং স্টিলের কাঠামোর সংযোগস্থলে অ্যাকশনের বিয়ারিং বসানো হয়েছে। সাধারণত সেতুতে দুটি করে বিয়ারিং বসানো হয় কিন্তু পদ্মা সেতুতে স্পেনের সংযোগস্থলে তিনটি করে বিয়ারিং বসানো হয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ সেতু প্রকল্প নিয়ে আপনার অনুভূতি কি?
ডক্টর হোসাইন মো. শাহিন: এই প্রকল্পে যুক্ত থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। পদ্মানদী অত্যধীক খরস্রোতা। এর ওপর পদ্মা সেতু নির্মাণ সবার স্বপ্ন ছিল। আবার কাজটি ছিল অনেকটাই কঠিন। এই সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এখন উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে এসে বলা যায়, আমাদের দেশে কঠিন পরিস্থিতিতে বড় বড় সেতু নির্মাণ অসম্ভব নয়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সেতু নির্মাণে নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশি সময় লাগার কারণ কি ছিল
ডক্টর হোসাইন মো. শাহিন: পাইলিং কাজটা বছরের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া করা যায় না। কাঁদা মাটির স্তরের কারণে পাইলিংয়ে সময় বেশি লেগেছে। এর জন্য নির্মাণ কাজ শেষ হতে এক বছরের মতো সময় বেশী লেগেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সেতু নির্মাণে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ কি ছিল?
ডক্টর হোসাইন মো. শাহিন: নদীর তলদেশে মাটির ১২২ মিটার গভীরে পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে এত গভীরে পাইল বসাতে হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইলিংয়ের নিচে পাথর থাকে। কিন্তু পদ্মা নদীতে ছিল কাদামাটি। পদ্মা সেতুর মতো শক্তিশালী বিয়ারিং অন্যান্য সেতুতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় না।


সর্বশেষ সংবাদ