বেলালের আলাপন: ১
শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি করতে হবে: আনু মুহাম্মদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে সংগঠিত বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তি। ৪১টি বইয়ের লেখক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রগতিশীল চেতনার উত্তম নিদর্শন। এছাড়া ত্রৈমাসিক জার্নাল সর্বজনকথা সম্পাদনা করেন তিনি। মহামারিতে বাংলাদেশের নাগরিক, আর্থ-সামজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বেলাল হোসেনের সাথে কথা বলেন এই গুণী অধ্যাপক।
বেলাল হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
বেলাল হোসেন: করোনা মহামারিতে সংগঠিত বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের গঠন ও চরিত্রকে এর পরিণাম দিয়ে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: করোনার মধ্যে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কাজে বড় রাজনৈতিক দল, এনজিও এবং বড় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম হতাশাজনক। অন্যদিকে বিভিন্ন ছোট রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। এতে সামাজিক সংহতি গড়ে উঠে। সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দিকে মনোযোগ দেয়নি, করোনা ব্যবস্থাপনায়ও দক্ষতা দেখাতে পারেনি, বরং এসব নিয়ে সুপারিশ- সমালোচনা করলে সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট প্রয়োগ করে মানুষকে হয়রানিতেই ব্যস্ত ছিলো। এই কুখ্যাত আইনের আওতায় লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ গ্রেফতার হয়। এদের বেশীরভাগই করোনার মধ্যে অনিয়ম নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকও গ্রেফতার হন। অনলাইনে আন্দোলন তৈরি হওয়ায় সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে ভীত। ফলে দানবে পরিণত করা হয় ডিজিটাল আইন। এতে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা হয়। তারপরও জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও শিক্ষা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনুসন্ধান ও প্রতিবাদ অব্যাহত আছে।
বেলাল হোসেন: প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বিভিন্ন সামজিক, নাগরিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। আন্দোলনের প্রতি আমজনতার সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে কতটুকু প্রভাবিত করে?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: সমাজে যখন অন্যায় নিপীড়ন থাকে তখন মানুষ কোন না কোন ভাবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, কথা বলে, বা চেষ্টা করে। সমাজের মধ্যে ক্ষোভ থাকে, কিন্তু সবসময় মানুষ সংগঠিত হতে পারে না। এসমস্ত ঘটনা সংবেদনশীল তরুণদের তাড়িত করে। যারা প্রতিষ্ঠিত তারা অনেক সময় আপোষ করে। আবার অনেক সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে প্রতিবাদ করে। বিগত বেশ কয়েকটি সরকার দেখলাম, তারা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি করে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সমর্থক গোষ্ঠী দিয়ে মানুষের উপর দমন পীড়ন চালায়। গত এক দশকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এখন ভিন্নমতের স্থান আরও সংকুচিত হয়েছে। সরকার পূর্বসূরীর অপকর্মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দমন পীড়নের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্ত চিন্তা চর্চার কেন্দ্রগুলোও নিয়ন্ত্রিত। এসকল প্রতিষ্ঠানে তোষামেদকারীদের বসানো হচ্ছে। এতে ক্ষমতাসীন দলের একচেটিয়া আধ্যিপত্য কায়েম হচ্ছে। তবে দমন পীড়ন যতোই হোক মানুষের ক্ষোভ সমাজের মধ্যে থেকেই যায়।
বেলাল হোসেন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবদানে বেশ কিছু গণআন্দোলনের স্বাক্ষী বর্তমান প্রজন্ম। একালের আন্দোলনের সাথে সেকালের নাগরিক আন্দোলনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে বিভাবে গুরুত্ব দিবেন?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: আগের দিনে আন্দোলনগুলোতে চিঠিপত্র, জনে জনে প্রচার, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বজনের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ হতো। এখন সেই জায়গা মোবাইল, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়েছে। ৬০ থেকে ৯০ দশকের ইতিহাস নির্ধারক আন্দোলনগুলো সংগঠকদের নিবেদিত প্রাণ, বিশ্বাস ও আস্থার কারণে সম্ভব হয়েছে। যেটা নতুন প্রযুক্তির যুগে ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে। এতে বড় এবং নির্ধারক আন্দোলন কমে গেছে। কারণ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাঠামোগত সমস্যা। সম্ভাবনার জায়গা হচ্ছে ছোট ছোট আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশিত হচ্ছে, মুক্তির পথ অনুসন্ধান চলছে।
বেলাল হোসেন: দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে আদর্শবাদী ও বাস্তববাদী নামে দুটি ধারা স্পষ্ট। একটি স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাতকারে আপনি বলেছিলেন ‘বাস্তববাদী হওয়া বলতে যদি কেউ মনে করে সর্বনাশের মুখে চোখ-মুখ বন্ধ করে রাখা, তাহলে আমরা সে রকম বাস্তববাদী নই। আমরা এই বাস্তবতা পাল্টাতে চাই।’ এক্ষেত্রে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি, ব্যাংকিং, আর্থসামজিক ও রাজনৈতিক খাতে বাস্তবতার পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে। হলেও সেটি ইতবাচক ভূমিকা পালনে কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করেছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: প্রতিটি সমস্যার যোগসূত্র রয়েছে। সমস্যা হলো বর্তমানে যে বন দখল করছে, সে ব্যাংক লুট করে, সেই জ্বালানি খাত ভোগদখল করছে, আবার সেই শ্রমিক নির্যাতন করছে, তাদের লোকজনই যৌন নিপীড়ন করছে। সুবিধাভোগীরা একই গোষ্ঠীর। নিজেদের দখল লুন্ঠনের সুবিধার জন্য তারা নির্যাতনের আবহ তৈরি করেছে। যোগসূত্র খেয়াল না করলে মনে হবে আন্দোলন গুলো বিচ্ছিন্ন, একটির সাথে অন্যটির সম্পর্ক নাই। এভাবে দেখলে এর সম্মিলিত রূপ বোঝা যায় না, এটা একটা সমস্যা। হেগেল বলেন যা বাস্তব সেটাই যৌক্তিক। কিন্তু প্রাণীজগতে মানুষের একটি অতিরিক্ত ক্ষমতা আছে। চিন্তা করা, স্বপ্ন দেখা, অনুমান করা, কল্পনা করা এবং যে পরিস্থিতিতে বাস করে সেটা পরিবর্তনের ইচ্ছা এবং তার চেষ্টা মানুষই করতে পারে। বাস্তবতা পরিবর্তনের ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই আছে। বাস্তবতা পরিবর্তনের যে তাগিদটা তৈরি হয় তা থেকেই পরিবর্তনের মতাদর্শ তৈরি হয়, সংগঠিত চেষ্টা দেখা যায়। দেশে দেশে তার বিভিন্ন রূপ দেখতে পাচ্ছি। কিছু সাফল্যও তা অর্জন করেছে।
বেলাল হোসেন: আপনাদের আন্দোলন রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রতি জনগনের মনন ও মানসিকতায় নির্দিষ্টমানের পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনে আপনার সন্তুষ্টিকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: না, সন্তুষ্ট তো না। তবে কোনটাই ব্যর্থ হয়নি। সফলতা হচ্ছে মানুষের চৈতন্যের মধ্যে নুতন উপদান আসছে। একটা আন্দোলনের প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত থাকে। এর প্রভাবে আরো আন্দোলন তৈরি হয়। ইতিহাসের মধ্যে এ উপাদানগুলি মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। একটা পথ দেখায়। দাবি বাস্তবায়ন এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ একটি কাঙ্খিত সাফল্য। তবে এটি অবিরাম প্রক্রিয়া। এই চৈতন্যের পরিবর্তন সংগঠিত হয়ে এস্টাবিলিসমেন্টের ছড়ানো বিভ্রান্তি মোকাবেলা করবে এবং সুনির্দিষ্ট রূপ পাবে।
বেলাল হোসেন: সরকার কিভাবে আন্দোলনসমূহ মোকাবেলা করতে সমর্থ হচ্ছে। সরকারের দাবি তাঁরা রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিক সংস্কৃতি দিয়ে প্রতিহত করছে?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: সরকারের প্রধান কৌশল বল প্রয়োগ, সরকারি ক্ষমতার ব্যবহার এবং ব্যাপক ভাবে তথাকথিত উন্নয়নের বিজ্ঞাপনী প্রচার। নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের কারণে সমস্ত অন্যায় ঢেকে যাচ্ছে। এছাড়া সরকারের প্রচারনার কাউন্টার করার মতো প্রতিষ্ঠান দুর্বল। বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পুরো উল্টো কাজ করা। এই শক্তিশালী চেতনা ব্যবহার করে নির্যাতন, নিপীড়ন ও ভয়ের রাজ্য তৈরি করা হয়েছে। অথচ এগুলো প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ড। সংকটের ব্যাপার হলো অনেক লেখক, শিল্পী, অধ্যাপক বুদ্ধিজীবী সমাজ এর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। লোভে ভয়ে কিংবা মেরুদণ্ডহীনতার কারণে।
বেলাল হোসেন: বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে বলে মনে করেন?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: সরকার দমনপীড়নের মাধ্যমে, ভয় আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মোহ তৈরি করছে। এতে সমর্থক গোষ্ঠীও সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু সমাজের মধ্যে ক্ষোভ সুপ্ত আছে। অনেকেই বিভ্রান্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত। দেশে যদি স্বৈরশাসন প্রবল হয় তখন ধর্মপন্থী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দেয়। বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোকে জনগণের প্রতিদিনের সমস্যা কিংবা প্রাণবিনাশী প্রকল্প, ব্যাংক লুট, নারী নির্যাতন, বন উজাড়, নদী দখল, শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলেনা। সমাজের বিত্তবান, ক্ষমতাবানদের সাথে ইসলামপন্থী অনেক নেতার যোগসাজসই এর কারণ। এদিকে সরকার একদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী অন্যদিকে দেশীয় লুটেরা গোষ্ঠীগুলোকে নানারকম সুবিধা দিয়ে তাদের প্রভাব, শক্তি বাড়াচ্ছে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেষ্টা করছে। সরকার প্রকৃত আন্দোলন ধামাচাপা দিতে ইসলামপন্থী গ্রুপ গুলোর সাথে ঐক্য এবং সংঘাত দুটোকেই কাজে লাগাচ্ছে। দমন পীড়ন দখল লুন্ঠন খুন ধর্ষণের যে বিভীষিকা তার শেষ আসলে নির্ভর করছে জনগণের ওপর। এজন্য করোনার মধ্যে শারীরিক দূরত্ব এবং সামাজিক সংহতি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিভ্রান্তি এবং ভয় কাটাতে হবে। তবেই অবস্থার পরিবর্তন হবে।
বেলাল হোসেন: রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট। লকডাউনে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: লকডাউনের বৈশ্বিক প্রভাব বিভিন্ন জনের ওপর বিভিন্ন ভাবে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিলিয়নিয়াররা নিজেদের পথ তৈরি করে, সংকটের সুযোগ নিয়ে, আরো সম্পদের মালিক হয়েছে। বাংলাদেশেু অর্থশালীরা আরো ধনী হয়েছে। পক্ষান্তরে গরিব আরো বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হয়েছে। তাই লকডাউনে সকলের ক্ষতি হয়নি। বাংলাদেশের ৫ কোটি মানুষ যাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান নেই তারা বেচে থাকার অর্থনীতিতে যুক্ত। এদের উপরই আঘাত সবচাইতে বেশি। করোনা এবং সরকারের অব্যবস্থায় নতুন করে ২কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে পড়ে গেছেন। এর প্রধান উৎস করোনা পূর্ব অর্থনৈতিক নীতির মধ্যেই পাওয়া যাবে। যদি দেশে আগে থেকেই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী থাকতো, পূর্ণ রেশনিং, সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালী থাকতো তাহলে মানুষ এরকম দুরবস্থার মধ্যে পড়তো না, কাঠামোগত সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থাকতো। এখন একই পরিবারের তিনজন কাজ করেও বেঁচে থাকার পথ পাচ্ছেনা। ধণিক গোষ্ঠিীর হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত এবং বিশাল সংখ্যক জনগণ প্রান্তিক জীবনযাপন করছে। প্রান্তিকভাবে বেঁচে থাকার কারণে তাঁরা দুর্যোগ-মহামারিতে আরও ভয়াবহতার মধ্যে পড়েছে। টাকাওয়লাদের প্রণোদনা দেওয়া হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পুরো অবহেলিত থেকেছে।
বেলাল হোসেন: ২০১৪ সালে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশ্লেষণে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন ‘বিএনপি-বিজেপি চক্রের গোপন চুক্তি আওয়ামী-কংগ্রেস চক্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে’। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির রাষ্ট্রীয় রসায়নকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: আসলে ভারতের ক্ষমতায় কংগ্রেস না বিজেপি তাতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব পরিবর্তন হয়না। কারণ ভারত রাষ্ট্রের ব্যবসায়ীক গোষ্ঠী, ক্ষমতাবান গোষ্ঠী একটা ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। তবে বিজেপির বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা লক্ষ্যনীয় পর্যায়ে। এর সুযোগ বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরাই প্রকারান্তারে করে দিচ্ছে। নিজেদের ক্ষমতার স্বাথেথ ভারতের ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষা করছে, দেশের পানি বাণিজ্য সীমান্ত সমস্যার কোনো সমাধান নেই। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা অধস্তন অবস্থান তো বন্ধুত্ব দেখায় না।
বেলাল হোসেন: নিজেকে একাডেমিশিয়ান না এক্টিভিস্ট হিসেবে এগিয়ে রাখবেন। একজন আনু মুহাম্মদ হতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে কি ধরনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য লালন করতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: নিজের প্রতি আত্মসম্মানবোধ, মেরুদন্ড, স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে বিকশিত করা, নিজের স্বাধীন অবস্থান তৈরি করা সম্ভব নিজের মধ্যে বিশ্লেষণের ক্ষমতা তৈরি করে। প্রশ্ন করার সক্ষমতা অর্জন করতে পড়াশেনা করতে হবে, মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াতে হবে। আমি সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমার দায়িত্ব শুধু একাডেমিক না, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলাটাও আমার একাডেমিক কর্তব্য। সত্যের পক্ষে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বের যেকোন আন্দোলনে সংহতি থাকতে হবে। সবারই নিজের ভেতরে শক্তি আছে, সমষ্টির সাথে মানসিক ও শারীরিকভাবে যুক্ত থাকলে সেই শক্তি বাড়বে। মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমি একা নই, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মানুষের জন্য ধরিত্রীর জন্য আমার মতোই চিন্তাজগত সম্প্রসারিত করছে, লড়াই করছে।