চাকরির আবেদন ফি ১০০ টাকার দাবিতে আন্দোলন চান নুর

  © টিডিসি ফটো

২০১৮ সালের শুরুর দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল আলোচনার তুঙ্গে। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল রাতে তা চরম পর্যায়ে ধারণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ। ফলে পরের দিন আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদে চাকরিতে সব ধরলের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ঘোষণার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল সোমবার (১২ এপ্রিল)।

কোটা আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলো ও বর্তমান সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্যতম নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সাথে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি খালেদ মাহমুদ-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোটা আন্দোলন করতে গিয়ে কি কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন?
নুরুল হক নুর: দেশে যেহেতু একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা চলমান রয়েছে, গণমানুষের সম্পৃক্ততায় কোনো গণআন্দোলন তৈরি হলেই সরকার ভয় পেয়ে সেখানে দমন-পীড়ন চালায়। আমাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি-রাবার বুলেট-গ্যাস ছুঁড়ে তাদের রক্তাক্ত করা হয়েছিলো। শুরুর দিকে আন্দোলনে ছাত্রলীগের সমর্থন থাকলেও সরকারের বিরোধিতার কারণে তারা সেখান থেকে সরে আসে। যারা এ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো ছাত্রলীগ তাদের হল থেকে বের করে দেয়।

ঢাকার বাইরে যারা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো তাদের ওপরও নানান ভাবে নিপীড়ন চালানো হয়। পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়। পারিবারিক ব্যবসা বাণিজ্যও ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মা-বাবাকে ঢেকে নিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়, অপমান করে। ৩০ জুন ঢাবির সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালায়। কেন্ত্রীয় শহীদ মিনারেও হামলা চালায়। আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আমরা যেখানে কর্মসূচি পালন করবো ছাত্রলীগ আগে থেকেই সেখানে গিয়ে জটলা পাকিয়ে দখল করে রাখে। অনেকের ওপর মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়, যা এখনো আমাদের নেতাকর্মীদেরকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্দোলনে সাধারণ নাগরিকদের কেমন সমর্থন পেয়েছিলেন?
নুরুল হক নুর: বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি শুরুতে আন্দোলনে সমর্থন দিলেও সরকারের চাপে তারাও সেখান থেকে সরে যায়। তাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কতটা জঘন্য হলে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আমাদের জঙ্গিদের সাথে তুলনা করেছিলো। বিরোধী দলের এজেন্ট, তারেক রহমানের টাকা খাওয়াসহ বিভিন্ন অপপ্রচার আমাদের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছিলো। তখন আমরা খুব খারাপ অবস্থায় পড়ে যাই। নানা ভয় ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টকর ছিলো। তারপরেও নেতৃত্ব ও নৈতিকতার দায়বদ্ধতা থেকে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে কোটা আন্দোলনের সফলতার জায়গাটা কি সেটি বলবেন?
নুরুল হক নুর: দীর্ঘদিন থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মনে মানসিক বেদনা ছিল। তাদের একটা ক্ষোভ ছিলো তারা যোগ্য হওয়া স্বত্বেও কোটাধারীদের কারণে পিছিয়ে পড়েছে। অন্তত:পক্ষে তার একটা সুরাহা হয়েছে। তারা তাদের হতাশা কাটিয়ে এখন নিজেদের প্রস্তুতি করতে পারবে। তবে এখানে সরকার আমাদের সাথে একটা রাজনীতি করেছে। আমরা সরকারি-বেসরকারি সকল চাকরিতে কোটার একটা যৌক্তিক সংস্করণ চেয়েছিলাম। সরকার সেটি না করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাদ দিয়েছে। যেটি আমাদের দাবি ছিলো না। এসব কিছুর সমাধান না করলে কিন্তু আবারো আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সরকারি চাকরি ভেরিফিকেশনের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয় এরকম অভিযোগ রয়েছে- বিষয়টি আপনারা কিভাবে দেখেছেন?
নুরুল হক নুর: দীর্ঘদিন ধরে এ সরকার ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সকল ক্ষেত্রে দলীয়করণ করেছে নিজেদের একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে কায়েম রাখার জন্য। ভেরিফিকেশনের নামে চাকরিপ্রার্থীদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের রেফারেন্স ছাড়া চাকরি হয় না। এগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা কথা বলেছি। এ বিষয় ছাড়াও চাকরি আবেদনের ফি ১০০ টাকায় নামিয়ে আনা এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে চাকরি পরীক্ষার কেন্দ্র স্থানান্তর নিয়েও আমরা কথা বলেছি। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা এগুলো নিয়ে আবারও কথা বলবো, মাঠে নামবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড”- নামক একটি সংগঠন ৩০ শতাংশ কোটা বহালের দাবিতে আন্দোলন করছে সেক্ষেত্রে কি বলবেন?
নুরুল হক নূর: কোটা আন্দোলনকে ঘিরে শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমাদের মুখোমুখি করার একটা অপচেষ্টা চালানো হয়েছিলো। কিন্তু আমরা স্পষ্ট বলে দিয়েছি, কোটার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত হয় না বরং তাদের অপমান করা হচ্ছে যে তাদের সন্তানরা কম মেধাবী, এজন্য তাদের কোটা লাগবে। আমরা বলেছি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম শ্রেণির নাগরিক ঘোষণা করে যারা নিম্নআয়ের বা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা তাদের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হোক। তাদের চিকিৎসা খরচ সরকারকে বহন এবং যানবাহনে তাদের চলাচল ফ্রি করে দেওয়া হোক। কিন্তু সম্প্রতি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সাইনবোর্ড লাগিয়ে বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ধান্ধাবাজি, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে এদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আশা করি রাষ্ট্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
নুরুল হক নুর: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।