করোনা সতর্কতা: দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য অনেক
- এম টি রহমান
- প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২০, ০৯:৫৯ AM , আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০, ১০:৩৭ AM
করোনাভাইরাসে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে তারমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম। সেখানে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ২৪১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১৩১ জনের। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন চার হাজার ১৪৪ জন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে। শুধু এ ধরণের পদক্ষেপই নয়, নাগরিকরা নানা ধরণের নির্দেশনা পালন করায় এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. নুরনবী শাহিন। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তিনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র। এসময় দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি বর্ণনার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
শাহিন বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার যেমন সময়মতো পদক্ষেপ নিতে পেরেছে, তেমনি এখানকার নাগরিকরাও অত্যন্ত সচেতন ও আন্তরিক। সরকারি নির্দেশনা সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। ফলে করোনাভাইরাস এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এখানে পরীক্ষার কিট থেকে শুরু করে কোনকিছুরই ঘাটতি নেই।’
বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। অনেকে হাত এবং মুখ ঢেকে রাখছেন। কিন্ত পা থাকছে খোলা। এটা খুবই বিপদজ্জনক।’
এর কারণ হিসেবে শাহিন বলেন, ‘হাঁচি কিংবা কাশি দেয়ার সময় অনেকে মাস্ক খুলছেন। সে সময় কারোরভাইরাস থাকলে তা খালি পায়ে বা মাটিতে পড়ছে। সেগুলো পায়ের সঙ্গে বিছানায়ও যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর বিছানায় গেলে সেখান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় সবাই স্যান্ডেল পরে থাকা কিংবা পা সুরক্ষিত রাখার মতো ব্যবস্থা করেছেন। কারণ এ ধরণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেগুলো দেখা যাচ্ছে না। এমনকি রান্নার সময়ও মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।’
মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক হওয়ার কথা উল্লেখ করে শাহীন বলেন, ‘বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ নামাজ পড়তে যান। সেখান থেকেও ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ একই ওযুখানায় অনেক মানুষ যাচ্ছেন। সেখান থেকে ভাইরাস সংক্রমের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক মসজিদে একই কাপড় অনেকে হাত-মুখ মোছার জন্য ব্যবহার করছেন। সেগুলো থেকেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ওজুখানা যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো। বাড়ি থেকেই ওযু করে মসজিদে যাওয়া নিরাপদ। পাশাপাশি মসজিদে িএকবার ব্যবহারযোগ্য টিস্যুর ব্যবস্থা করা জরুরি।’
শাহিন বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ অত্যন্ত সচেতন। সরকারও আন্তরিক। ফলে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে নানা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে সবার আগে। পাশাপাশি সরকারকে প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।’