নারীদের প্রতিনিয়তই যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয়
নোয়াখালী সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আক্তারী বেগম। নোয়াখালী বেগমগঞ্জের ছয়ানিতে তাঁর জন্ম। তিনি একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে নোয়াখালী সরকারী মহিলা কলেজ, কবিরহাট সরকারী কলেজ, ঢাকার কবি নজরুল কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত ছিলেন তিনি। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নোয়াখালী প্রতিনিধি আবদুর রহমান—
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। এই অবস্থানে আসার শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: বাংলাদেশের সুনামধন্য একটা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ-আবেগের এক অনুভূতি। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য আমি আমার সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি, যাতে আমি এ নিয়োগের মর্যাদা রাখতে পারি। পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি ও দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এইপথ পাড়ি দিতে কোনো বাধার সম্মুখীন কি হয়েছেন?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: না। আজ পর্যন্ত আমি কখনও কোন বাঁধার সম্মুখীন হয়নি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নারী দিবস নিয়ে আপনি কী ভাবেন?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: আমি মনে করে নারীদের কোন বিশেষ দিবস নেই। বছরের ৩৬৫ দিনই নারী দিবস বলে আমি মনে করি। প্রতিটি নারীর নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তার মানে এই না যে, নারীরা পুরুষদের সহযোগিতা ছাড়া এগোতে পারবে না। আবার এমনও না যে, পুরুষদের সহযোগিতা ছাড়াই তারা এককভাবে এগিয়ে যাবে। একজন পুরুষের উন্নতির পেছনে যেমনি নারীর সহযোগিতা থাকে, তেমনি একজন নারীর উন্নয়নের পথেও পুরুষদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস : আপনার দৃষ্টিতে দেশে নারীদের অগ্রগতি কতটা হয়েছে?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: সব সেক্টরে নারীদের অগ্রগতি হয়েছে এবং সব সেক্টরে তারা কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, সাংবাদিকতা, প্রশাসন, আইন, খেলাধুলা সর্বক্ষেত্রে নারীদের সম্মানজনক অংশগ্রহণ রয়েছে। নারীরা জেলা জজ হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে জেলা জজ আদালতের দায়িত্ব পালন করছে, হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগেও তারা যোগ্যতার প্রমাণ রাখছেন। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হিসেবে নারীদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। এটা নারীদের অনেক বড় অর্জন। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীদের সব সময় যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের কাজের ভুল-ত্রুটিগুলো অনেক সময় নারী হওয়ার কারণে হয়েছে মনে করা হয়। পুরুষ সহকর্মীদের ক্ষেত্রে সেভাবে খুঁটিয়ে দেখা হয় না। সততার সঙ্গে আমরা নারীরা দায়িত্ব পালন করি। কর্মক্ষেত্রে সময়মতো কাজ করার চেষ্টা করি। শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, পরিবারেও নারী দক্ষতার সঙ্গে তার সংসার, সন্তান লালন পালনও করছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস : নারী দিবসটির বিপক্ষেও অনেক নারী কথা বলেন। আপনি কি বলবেন?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: আমাদের অনেক নারীর মস্তিষ্কে পুরুষ বাস করে। পুরুষ শাষিত সমাজে তারা নারী হয়ে উঠতে পারেনি। আমি অনেক নারীকে দেখেছি তারা নারীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে। কে কেমন পোশাক পরবে, কে কিসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে সেটি প্রত্যেকের নিজস্ব বিষয়। এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কাজের ক্ষেত্রে নারীরা এখন কেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: একজন অধ্যক্ষ হিসেবে দেখেছি, আমাদের এই পর্যন্ত আসতে পুরুষের মতই সমান সুযোগ পাচ্ছি আমরা। শুধু শোবিজে নয়, ঠিক এভাবে কর্মক্ষেত্রে এখনও পুরুষ এগিয়ে আছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন নারীর সফলতার মূলে কোন অনুষঙ্গগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করে? সে ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা কতখানি দরকার বলে আপনি মনে করেন?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: একজন নারীর সফলতার মূলে পরিবার অর্থাৎ বাবা-মা এবং শ্বশুরবাড়ির সহযোগিতা একশত ভাগ দরকার বলে আমি মনে করি। আমার বাবা একজন শিক্ষিত ব্যাক্তি ছিলেন। বাবা একজন শক্ত মনের মানুষ না হলে আমরা জীবনে এ সফলতা পেতাম না। আমার এ সফলতা বাবা-মায়ের জন্যই। বাবা চেয়েছিলেন আমাদের ভাই-বোনের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর বিয়ে হবে। মা বাবাকে রসিকতা করে বলতেন, মেয়েদের লেখাপড়ায় টাকা-পয়সা খরচ করছ? বিয়ে দেবে কীভাবে? বাবা মাকে বলতেন, মেয়েরাই আমার একেকটি অলংকার। তাদের বিয়েতে আমাকে কোনো অলংকার দিতে হবে না। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমার সিনিয়র সহকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের স্যালুট করি আমাকে সহযোগিতা করার জন্য।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস : আপনার আজকের সফলতার পেছনে অবশ্যই বাবা-মায়ের ভূমিকা রয়েছে। তাদের সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: আমার বাবা-মা আমার জীবনে আদর্শ। আমার বাবাকে অনেকেই আদর্শ হিসেবে মানেন। এটা ভাবতেই আমার ভালো লাগে। আমার মা অনেক নম্র, শান্ত, ভদ্র প্রকৃতির নারী ছিলেন। বাবার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার সাহস হতো না, তাই মায়ের মাধ্যমে বাবার কাছে আবদার করতাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস : আপনার অবসর কীভাবে কাটে, আপনার শখ ইত্যাদি সম্পর্কে যদি বলেন?
প্রফেসর আক্তারী বেগম: ছুটির বিকালে পরিবারের সঙ্গে গল্প করে, বই, পত্রিকা পড়ে, গান শুনে, টেলিভিশনে সংবাদ দেখে সময় কাটাতাম। গান শুনতে ভালোবাসি। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ভাবছি অনগ্রসর নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করব। সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নকাজে অংশগ্রহণ করবো। স্বল্প শিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা বিয়ের প্রলোভনের শিকার হয়ে পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে। স্বামী-স্ত্রীর মতো সহবাস করে। গর্ভবতী হলে পুরুষ নারীটিকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। তখন দিশাহারা হয়ে ওই নারীটি মামলা করে। কিন্তু অনেক সময় কনসেন্টি পার্টি হওয়ায় তাদের আইনানুগ প্রতিকার প্রদান সম্ভব হয় না। সমাজের এ অবহেলিত নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে চাই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রফেসর আক্তারী বেগম: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।