শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খুবিকে দেখতে চাই
- আসিফ আহমেদ তন্ময়
- প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৭:১২ PM , আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০, ০৪:৪৩ AM
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ (ডিএস) ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক বায়েজীদ খান। ময়মনসিংহের স্কুল কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা বায়েজীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে শিক্ষক হিসেবে ২০১৬ সালে প্রভাষক হিসেবে খুবির ডিএস ডিসিপ্লিনে যোগদান করেন।
খুবিতে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে ডিএস ডিসিপ্লিন। কালের পরিক্রমায় ডিসিপ্লিনটিতে বেড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন ১০ জন শিক্ষক। তন্মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক দুই, সহকারী অধ্যাপক পাঁচ ও প্রভাষক পদে তিনজন কর্মরত আছেন। ডিসিপ্লিন ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক নানা বিষয়ে প্রতিবদকের সাথে কথা বলেন খুবির সদা হাস্যজ্জ্বোল পরিচিত মুখ সবার প্রিয় ‘বায়েজীদ স্যার’। বাদ যায়নি ব্যাক্তিগতজীবন ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা। এখানে সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল—
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এতো কিছু ছেড়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে কেন বেছে নিলেন?
বায়েজীদ খান: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম। তখন আমাদের ক্লাস নিতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান স্যার। সেসময় ক্লাসের সবাই আমরা স্যারের মত হওয়ার কথা ভাবতাম। একদম স্পেসেফিকভাবে বলতে আমি এনজিও ছেড়ে শিক্ষকতায় আসলাম এই জন্য যে, ডিভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের শিক্ষক হওয়া মানে একইসাথে ডিভেলপমেন্ট থিংকার ও এক্টিভিস্ট হওয়া। অপরদিকে অভিজ্ঞতা থাকায় পড়ানো ও নিজের গবেষণা এই দুইটার সমন্বয়ে ভালোকিছু করতে পারবো বলেই আমি শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খুবিতে ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনে শিক্ষার্থীদের এভারেজ সিজিপিএ কেমন?
বায়েজীদ খান: এভারেজ সিজিপিএ ব্যাচ টু ব্যাচ ভ্যারি করে। প্রথম ব্যাচগুলোর তুলনায় সিজিপিএ অর্জনের দিক থেকে এখনকার ব্যাচগুলো যথেষ্ট ভালো করছে। মোটামুটি এভারেজ সিজিপিএ আমাদের ডিসিপ্লিনে ৩.৫০।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের চাকুরির খাতগুলো কি কি?
বায়েজীদ খান: সামাজিক বিজ্ঞানের অনুষদ হওয়ার পাশাপাশি ডিএস একটি মাল্টি ডাইমেনশনাল সাবজেক্ট তাই এখানে শিক্ষার্থীদের নানা সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ডিভেলপমেন্ট সেক্টরের সাথে সাথে বিসিএস বা সাধারণ অনান্য সব চাকুরিতেই তারা যেতে পারবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ডিএস ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা কোন চাকরির দিকে বেশি ঝুঁকছে এবং কেন?
বায়েজীদ খান: বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা জব সিকিউরিটির কথা বিবেচনা করে বিসিএস ও অনান্য সরকারি চাকুরিকে বেশি বেছে নিচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ক্যারিকুলামটি এমনভাবে করা যে, একজন শিক্ষার্থী তার একাডেমিক পড়াশোনার মধ্যে থেকেই বিসিএসের প্রিপারেশন নিতে পারবে। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত যে গ্রাজুয়েটরা বেরিয়েছেন তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই কেয়ার বাংলাদেশ, ব্রাক, ওয়াল্ড ভিশন, সিরাক বাংলাদেশ, ফ্রেন্ডশিপের মতো বিভিন্ন স্বনামধন্য এনজিওতে কর্মরত রয়েছেন। ইতিমধ্যেই দুজন জাতিসংঘের শাখা প্রতিষ্ঠানে জয়েন করেছে। চাকুরি ক্ষেত্রে ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা সবাই নিজ নিজ কর্মরত প্রতিষ্ঠানে ভালো করছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খুবির অনান্য ডিসিপ্লিন থেকে কোন বৈশিষ্ট্যটি ডিএসকে স্বতন্ত্র করেছে বলে আপনি মনে করেন?
বায়েজীদ খান: খুবি নিজেই একটা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। তারপরেও যেহেতু সাবজেক্টটি নতুন সে হিসেবে এর স্বাতন্ত্রতা হল, ডিসিপ্লিনটির শিক্ষকরা সবাই নবীন। প্রত্যেকেরই কাজের প্রতি আগ্রহ আছে এবং তারা গুরুত্ব দিয়ে পড়ান আর মাল্টি ডাইমেনশনাল সাবজেক্ট হওয়ায় এতে পড়ে শিক্ষার্থীদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সেন্স অফ হিউমার গড়ে ওঠে। আমাদের ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা সমসাময়িক বিষয়গুলোতে অন্যদের তুলনায় বেশি আপডেট থাকে বলে আমি বিশ্বাস করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খুবিতে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রশাসনিক কোন দায়িত্ব পালন করছেন?
বায়েজীদ খান: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কোন প্রশাসনিক দায়িত্বে নেই। তবে প্রশাসন আমাকে কোন দায়িত্ব দিলে তা সূচারুভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। কিছুদিন আগে একটি তদন্ত কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া জাতীয় দিবসগুলো এবং ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা কাজে যেখানে ডিসিপ্লিন প্রধান এবং একাডেমিক কমিটি আমাকে রাখে সেখানে থাকি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন শিক্ষক হিসেবে কেমন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেন?
বায়েজীদ খান: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার অনেক বড় একটি স্বপ্ন রয়েছে। আমি মনে করি, আমার যে স্বপ্ন খুবির আপামর শিক্ষার্থীরাও সে স্বপ্ন ধারণ করে। আমরা সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে সাজাতে চাই যেখানে কোন ভয়ের সংস্কৃতি চালু হবেনা। সমস্ত ভয়ের সংস্কৃতি দূরীভূত হোক এবং শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত খুবি যেন আসলেই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে নিজের স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখতে পারে সেটিই চাই।