ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে যা বললেন লাঞ্ছনার শিকার সেই শিক্ষক (ভিডিও)
গত ৭ জানুয়ারি নিজ বিভাগের সামনে ছাত্রলীগের কিছু ‘কথিত’ নেতাদের হাতে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মাদ শামিমুল হক চৌধুরী। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দও করেন তারা। পরে এ ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ‘কথিত’ এসব ছাত্রলীগ নামধারীরা ক্যাম্পাসে বেপরোয়া, তা প্রশ্ন রাখছেন অনেকেই।
কেন এই ঘটনা, কি নিয়ে বিরোধ—ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ শামীমুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ছাত্রলীগের এসব ‘কথিত’ নেতার। বিস্তারিত জানালেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার কাছে ছাত্রলীগের পরিচয়ে কেউ আসলে আমি তাদের বলি, তোমাদের কারও সাথে আমার কোন ধরণের বিরোধ নেই। তবে আমাকে যদি কোন অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হলে; যেমন, একাডেমিক কার্যক্রমগুলো নিয়মানুযায়ী করার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তখন আমার সঙ্গে তোমাদের বিরোধ হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে এসব শিক্ষার্থী আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতো। যেমন-পরীক্ষার হলে নকল ধরা যাবে না, প্রবেশপত্র ছাড়াই পরীক্ষার হলে আসলেও পরীক্ষা নিতে হবে। আবার দেখা যাচ্ছে, কেউ পরীক্ষা দেয়নি তাকেও পাশ করাতে হবে। এমনকি দেখা গেছে, ল্যাব-ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাকেও পাশ করাতে হবে। এ ধরণের বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিতো তারা।
ড. মুহাম্মাদ শামীমুল হক চৌধুরী বলেন, মূলত এসব ‘কথিত’ ছাত্রলীগের স্বার্থের সংঘাতের কারণে তারা আমাকে জামায়াত-শিবির তকমা দিচ্ছে এবং আমার ওপর ক্ষিপ্ত। গত ৭ জানুয়ারি সর্বশেষ এর বহি:প্রকাশ। এদিন নিজ বিভাগের সামনে তারা আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। এছাড়াও আমাকে পারিবারিকভাবেও হুমকি-ধমকি দেয়। এসব ঘটনায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে বলেন, এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার নানা মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমার মা এখনও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকে। এই পরিচয় কখনও আমি দিতে চাইনি। কিন্তু তাদের এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে তা বলতে বাধ্য করেছে।
জানা যায়, ২০০৬ সালে বুয়েটের ইইই বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ড. মুহাম্মাদ শামিমুল হক চৌধুরী। পরে স্নাতকোত্তর করার জন্য চাকরি ছেড়ে আবার ঢাকায় চলে আসে। এসময় পড়াশুনার পাশাপাশি ঢাকার আইআইইউসি ক্যাম্পাসে শিক্ষকতা শুরু করেন। মাঝখানে পিএইচডি করতে ৪-৫ বছরের জন্য দেশের বাহিরে ছিলেন তিনি। পরে দেশে এসে আইআইইউসির মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
ড. মুহাম্মাদ শামিমুল হক চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। শৈশব আর কৈশোর কেটেছে সেখানে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন বুয়েটে। তার বাবা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন অধ্যাপক।