প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দক্ষ ও চাকরির উপযোগী করে গড়ছি: উপাচার্য
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এসইউবি) দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। ল্যাব এইড গ্রুপের কর্ণধার ডা. এম. শামিমের সভাপতিত্বে একটি শক্তিশালী ট্রাস্টি বোর্ডের আওতায় এসইউবি পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদের আওতায় মোট ১০টি বিভাগ রয়েছে। ২টি সিটি ক্যাম্পাস (ধানমন্ডি, কলাবাগান) এবং পূর্বাচলের স্থায়ী ক্যাম্পাসে তাদের শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার উপরও সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য এখানে রয়েছে বেশিকিছু ল্যাব। শুধু একাডেমিক লেখাপড়াই নয় এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বিসিএসসহ সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য রয়েছে বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য রয়েছে ইনডোর এবং আউটডোর খেলাধুলার ব্যবস্থা।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে কর্মরত আছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমসহ বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষার সার্বিক বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস এর সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব উদ্দিন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ১০৩টি। অথচ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান খুবই নিম্নমানের বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কী?
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ভালো হবে নাকি খারাপ হবে— তা অনেকটাই নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের ওপর। কারণ ট্রাস্টি বোর্ড যদি মনে করে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চলবে; তাহলে সেখানে পড়ালেখার মান কখনোই ভাল হবে না। আর ট্রাস্টি বোর্ড যদি ব্যবসার চিন্তা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা এবং ভাল মানের শিক্ষা দেয়ার কথা ভাবে; তাহলেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাল করবে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে সেমিস্টার ফি নেয়া হয়, মূলত তা দিয়েই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলে। যদি ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যরা শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া ফি শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই ব্যয় না করে ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যয় করে; তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে না। আর যদি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা পায়; সেটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করে; তবে অবশ্যই সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান ভালো হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্টেট ইউনিভার্সিটির আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পেতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠার কম সময়েও তুলনামূলক ভালো করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: প্রথমত— ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তি। এটি না থাকলে একজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে আনন্দ পাবে না। ভালো ক্লাস রুম, পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, শিক্ষার্থীদের ক্যান্টিন, বড় অডিটোরিয়াম; যেখানে শিক্ষার্থীরা একসাথে কোন বড় সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত— ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ভালো শিক্ষক ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই ভালো করতে পারে না। তৃতীয়ত— শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকবে, যে বিষয়গুলো স্পষ্ট করে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভাল সিজিপিএ দিয়ে সার্টিফিকেট দিলেই হবে না; তাদেরকে কর্মদক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পেরেছি। তাই আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ভাল করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মান অনেকাংশেই নির্ভর করে যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের ওপর। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে আপনারা কি ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করেন? আর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কী উদ্যোগ নিয়ে থাকেন?
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অনেকাংশেই নির্ভর করে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর। তাই আমরা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করে থাকি। আমরা প্রথমে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকি। এরপর যারা আবেদন করেন, তাদের আমরা একটি লিখিত পরীক্ষা নেই। লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হন, তাদের আমরা মৌখিক পরীক্ষা নেই। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আমরা ডেমো ক্লাস দিতে বলি। ডেমো ক্লাসের মাধ্যমে আসলে সেই শিক্ষক কতটা পারদর্শী সেটি সামনে চলে আসে। এরপর তাদেরকে নিয়োগ দিয়ে থাকি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো— গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি। গবেষণায় আপনারা কেমন গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি গবেষণার সুযোগ কিংবা সংস্কৃতি না থাকে তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই নতুন জ্ঞান তৈরি করতে পারে না। নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে না পারলে শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু শেখানো কোনভাবেই সম্ভব না। আমরা গবেষণার দিকটিতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। গবেষণা প্রকাশের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তিনটি জার্নাল। আমাদের শিক্ষকরা বিভিন্ন গবেষণা করে থাকে। সেই গবেষণার ফলাফল এই জার্নালগুলোতে প্রকাশিত হয়। তিনটি জার্নালের মধ্যে একটি শিক্ষকদের জন্য। একটা ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের, আরেকটি পাবলিক হেলথ বিভাগের জন্য। এছাড়াও সফল গবেষণার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরণের অনুদান দিয়ে থাকি। আমরা আমাদের বার্ষিক লাভের ৫ শতাংশ টাকা গবেষণায় বরাদ্ধ দিয়ে থাকি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চাকরির বাজারে স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েটদের সফলতা কেমন?
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষ হিসেবে গড়ে তুলি। একজন শিক্ষার্থী লেখাপড়া শেষ করে যেন চাকরি পায়, আমরা সেভাবেই তাদেরকে গড়ে তুলছি। আমাদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে প্রথম বছর থেকেই শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণা দেই; যেন সে নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলতে পারে। যারা বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করতে চায় অথবা যারা সরকারি ব্যাংকগুলোতে চাকরি করতে চায়; আমরা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে থাকি। এছাড়াও আমরা প্রতিবছর ফার্মা জবসহ বিভিন্ন জব ফেয়ারের আয়োজন করি। সেখানে প্রতি বছরে এক’শ থেকে দেড়’শ কোম্পানি আসে। তারা শিক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নেয়। যারা সাক্ষাৎকারে ভাল করে তাদেরকে তারা চাকরি দেয়। এছাড়া যারা লেখাপড়ায় ভাল করে তাদের অনেককেই আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে আপনাদের কোলাবরেশন রয়েছে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: গ্রাজুয়েশন শেষ করে আমাদের শিক্ষার্থীদের চাকরি পেতে যেন সুবিধা হয়; সেজন্য আমরা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের তাদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করার সুযোগ দেয়। যারা ইন্টার্নশিপে ভাল করে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। দেশের চাকরির বাজারে যারা নেতৃত্ব দেয় তাদের সাথে আমাদের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সাথে আমরা সম্পর্ক আরো ভালো করার চেষ্টা করছি।
এছাড়াও আমরা বিভিন্ন সেমিনারে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাই; যেন আমাদের গ্রাজুয়েটরা তাদের প্রতিষ্ঠানে গেলে সহজেই চাকরি পেয়ে যায়। আমাদের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট এর সাথে ফুড প্রসেসিং কোম্পানিগুলো জড়িত আছে। আমাদের যতগুলো ডিপার্টমেন্ট রয়েছে সবগুলো ডিপার্টমেন্টের জন্যই ভাল প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখি যেন আমাদের গ্রাজুয়েটরা চাকরির বাজারে ভালো করে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্টেট ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে যারা জানতে চায়, সেসব শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য কী?
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: আমরা সবাই এখন গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করি। এই গ্লোবাল ভিলেজে বসবাসের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে কী কী করতে হবে; তা আমরা শিক্ষা দিয়ে থাকি। আমরা একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি। তারা যেন মানুষের মত মানুষ হয়ে এখান থেকে বেরিয়ে দেশ এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে; আমরা সেভাবেই তাদেরকে প্রস্তুত করে থাকি।
আমরা শুধু তাত্ত্বিক লেখাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না আমরা ব্যবহারিক শিক্ষার উপরও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমি অভিভাবকদের বলব আপনাদের ছেলে-মেয়েকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। এখানে গবেষণা এবং লেখাপড়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা আপনার সন্তানকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বদ্ধপরিকর।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা: আপনাকেও ধন্যবাদ।