আহতদের বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন, সবার সহযোগিতা চাইলেন নুর
- মোতাহার হোসেন, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৯ AM , আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২২ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহত নেতাকর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। তাদের চিকিৎসার ব্যয় বাবদ দেশবাসীর কাছে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন ডাকসুর ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুর।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহবান জানান। এসময় তিনি বলেন, ‘আমাদের আটজন এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের অনেকের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। আমার ছোট ভাই আমিনুলের এখনো স্বাভাবিক জ্ঞান ফেরেনি। ও এখনো আবোল-তাবোল বলছে। তার পরবর্তী আপডেট কি হয় তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এবিএম সোহেলের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে। দুই মাস বিছানায় রেস্ট নেওয়া লাগবে। ব্রেনের জমাট বাধা রক্ত অপারেশন করে বের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। আরিফুর রহমানের কিডনি ৭০ শতাংশ ড্যামেজ হয়ে গেছে।তার ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। মেহেদী হাসানের কিডনি ৩০ শতাংশ ডেমেজ হয়ে গেছে। তাকেওডায়ালাইসিস করা হয়েছে।’
ভিপি নুর বলেন, ‘তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া লাগতে পারে। ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে তাদের সমস্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, আমাদের বিশেষ যত্ন নেয়ার জন্য। তবে প্রধানমন্ত্রী বলার পরই যদি আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা এই হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার কি করুন অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরণের সমস্যায় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাদের ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো হচ্ছে না। যে কারণে আমার মনে হয় আমাদের শারীরিক অবস্থা আরও শোচনীয় পর্যায়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের সাথে আমাদের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে শিগগিরই কথা বলবো। যদি অবস্থা এরকম থাকে, তাহলে আমাদের সহকর্মীদের এখানে রাখবো না। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে প্রাইভেটে স্থানান্তর করতে চাই। কিন্তু প্রাইভেটে স্থানান্তর একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। তার সামর্থ্য আমাদের নেই।’
ডাকসু ভিপি বলেন, ‘সেক্ষেত্রে আমরা দেশবাসীর কাছে আহবান জানাবো, তারা যেন আহত ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের পাশে থাকে। তারা যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।’
হামলা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ জানে আমরা কেন বারবার হামলা-মামলার শিকার হচ্ছি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছে। তারা ভিন্নমতের দলগুলোকে হামলা-মামলা দিয়ে কোনঠাসা করে রেখেছে। তবে ছাত্র অধিকার পরিষদ একটি ছাত্র সংগঠন হয়েও সারাদেশের জাতীয় ইস্যু নিয়েও কথা বলছে। এই সংগঠন সারাদেশের মানুষের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। এ কারণে সরকার ভীত সন্ত্রস্ত যে, এই সংগঠন তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় কি না। সেজন্য আমাদের উপর বিভিন্ন সময় হামলা চালানো হচ্ছে।’
ডাকসুর হামলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ডাকসুতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে তার উদ্দেশ্য ছিল আমাকে মেরে ফেলা। সেই ঘটনায় আমরা মামলা করার আগেই পুলিশ ছাত্রলীগকে বাঁচানোর জন্য বাদী হয়ে মামলা করেছে। আমরা আহত, অনেকে আইসিসিতে। কিন্তু সরকারি নির্দেশে আমাদের উপরে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের নামে আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। আইসিটি আইনে মামলা দিলে আমাদের ধরে জেলে নিলে আমরা দুই মাসের ভিতরে জেল থেকে ছাড়া পাবো না। আমাকে আমার সংগঠন থেকে দূরে সরে রাখার জন্য এই মামলা দেয়া হয়েছে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তার লজ্জিত হওয়া উচিত । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হয়ে মিথ্যা বানোয়াট বক্তব্য দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন নেই, কোন উগ্রবাদী ছাত্র সংগঠন নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্যান্য সংগঠনের অস্তিত্বই তেমনভাবে নেই। যারা আছে তারা নামে মাত্র।’
তিনি বলেন, ‘এই নামমাত্র যারা আছে তারা ক্যাম্পাসে আসলেই ছাত্রলীগের হাতে মার খেতে হয়। সেখানে নির্যাতিত সংগঠনগুলো ছাত্রলীগের নির্যাতন প্রতিহত করতে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য তৈরি করেছে। এ কারণে ছাত্রলীগ ভীত সন্ত্রস্ত। তারা ভাবছে, যদি বুয়েটের মতো শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তোলে, তাহলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হবে। এই আতঙ্কে তারা বিশ্ববিদ্যালয় নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে।’
ককটেল বিস্ফোরণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা শুনেছি মধুর ক্যান্টিনের সামনে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এগুলো এক শ্রেণীর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের কাজ। কারণ, ককটেল বিস্ফোরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটিয়ে আর কারো কোন কাজ নেই। ককটেল বিস্ফোরণ ছাত্রলীগ করে। তারা জানান দিতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এখন অস্থিতিশীল।’
হামলার বিচার নিয়ে তিনি বলেন, ‘ডাকসুর হামলায় সাদ্দাম-সনজিত মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম তাদেরকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য। কারণ এই হামলার পিছনে বড় একটি শক্তির নির্দেশ থাকতে পারে। এ হামলা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এর আগেও আমার উপর আটবার হামলা করা হয়েছে। কোন বিচার পাইনি। যদি এবারও বিচার না হয়, তাহলে বুঝতে হবে এগুলো সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় হচ্ছে।’